শিহাব আহমেদঃ বাংলাদেশী আলোচিত ‘অজ্ঞাতনামা’ ছায়াছবির বাস্তব রুপ ঘটে গেছে মুন্সিগঞ্জে। লেবাননে মারা যাওয়ার ১বছর ১মাস পর দেশে লাশ ফিরে আসলেও নাম মিলেনি প্রথমে। যার ফলে লাশ বেওয়ারিশ হিসেবেই দাফন করতে চেয়েছিলো লেবাননের দূতাবাস। পরবর্তীতে মারা যাওয়ার তারিখ আর পিতার নামে সন্দেহ হলে বহু প্রচেষ্টার পর গত ২৮ তারিখ ভোরে দেশে লাশ নিয়ে আসে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।
খোজ নিয়ে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের শাখারীবাজার গ্রামের আঃ আজিজ ভুইয়ার প্রথম কন্যা আকলিমা। স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর দরিদ্র সংসারের হাল ধরে রাখতে ২০১৬সালের প্রথম দিকে নারী শ্রমিক হয়ে লেবাননে পারি জমায় আকলিমা। স্বপ্নের লেবাননেই স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে আকলিমা ওরফে আখি আজিজের।
আকলিমার মা মাকসুদা বেগম ‘আমার বিক্রমপুর’-কে বলেন, ২০১৬ সালের মার্চে তিনি সংবাদ পান তার মেয়ে আকলিমা লেবাননে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সংবাদ পেয়েই তিনি ছুটে আসেন স্থানীয় ওকাপ নামের একটি এনজিওর কাছে। তিনি ওকাপের মাধ্যমে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে আবেদন করেন আকলিমার লাশ দেশে নিয়ে আসতে। কিন্তু এরপরে পেরিয়ে যায় দীর্ঘ ১০ মাস। আকলিমা নামের কোন লাশের খবর দিতে পারে না জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস।
২০১৭সালের ১১তারিখে জাতীয় ইংরেজী দৈনিক নিউ এইজে লেবাননে বাংলাদেশী ৫জন নারী শ্রমিকের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে ৫জনের মধ্যে একজনের নাম আসে ‘আখি আজিজ’। সংবাদ দেখে সন্দেহ হয় উল্লেখিত বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ওকাপের। যাদের মাধ্যমে ২০১৬ সালের মার্চে লাশ ফেরত আনতে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে আবেদন করেছিলো আকলিমার পরিবার।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম-(ওকাপ)-এর জেলার মাঠ কর্মকর্তা ইউজিং ম্রং ‘আমার বিক্রমপুর’-কে বলেন, ‘মুন্সিগঞ্জের যে আকলিমার লাশ দেশে নিয়ে আসতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছিলাম নিউ এইজে সংবাদ আসার পর আমরা দেখি উল্লেখিত আখি আজিজ আর আকলিমার মৃত্যুর তারিখ ও ধরন এক। এরপর আকলিমার বাবার নাম আঃ আজিজ ভূইয়ার সাথে মিলিয়ে নাম রাখা হয়েছে আখি আজিজ। এমন সন্দেহের পর আকলিমার পরিবার লেবাননে বসবাসরত দুইজন নারীর ঠিকানা দেন যারা লেবাননে আকলিমাকে চিনতেন। এরপর সরকারি প্রক্রিয়া শেষে লাশ দেশে নিয়ে অাসা হয়। এয়ারপোর্ট থেকে মুন্সিগঞ্জে নিজস্ব খরচে লাশ নিয়ে অাসে ওকাপ’
এদিকে লেবানন দূতাবাসের স্মারক নং বিইবি/এডমিন/ওয়েলফেয়ার/২০১৭/৪৫-এর মাধ্যমে জানা যায়, মিসেস শিরিনা ও মিসেস আছমা বেগম নামের ঐ দুইজন নারী লেবানন দূতাবাসকে নিশ্চিত করেন যে, আকলিমার ডাকনামই আখি আজিজ। এবং লাশটি তারই। একইসাথে লেবানন দূতাবাসের ঐ স্মারকে আরও জানানো হয় যে, মৃত্যুকালিন সময়ে আকলিমা বেগম আখির কোন বৈধ কাগজপত্র ছিলো না।