মুন্সিগঞ্জ, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নিজস্ব প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)
প্রাচীন বিক্রমপুর পরগণা অর্থাৎ বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী ও পুরোনো হাটগুলোর মধ্যে গোয়ালিমান্দ্রা হাট অন্যতম। অন্তত ২০০ বছর ধরে বসছে এই হাটটি। একসময় শুধুমাত্র গবাদি পশুর জন্য জনপ্রিয়তা পেলেও এখন বহুমুখী বাজারে পরিণত হয়েছে গোয়ালিমান্দ্রা হাট।
এখন থেকে ১৩০ বছর আগে লেখা যোগেন্দ্রনাথ গুপ্তের বিক্রমপুরের ইতিহাস বইতে বলা হয়- মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের এই এলাকাটির আদি নাম মান্দ্রা। ২৭০ বছর আগে তৎকালীন বিক্রমপুরের রাজা মহারাজ রাজবল্লভের শাসনামলে ভারতের বিহার রাজ্যের হিন্দু-বৌদ্ধদের তীর্থক্ষেত্র গয়া নামক স্থানে গিয়ে তিনি স্থানীয় গয়ালী পুরোহিতদের এই হাট থেকে নিস্কর ব্রম্মোত্তর দান করেছিলেন, এজন্য মান্দ্রা গ্রামের সাথে পরে গয়ালী সংযোজন হয়ে হাটের নাম হয় গোয়ালীমান্দ্রা।
সাপ্তাহিক এই হাট বসে প্রতি মঙ্গলবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত। দূরদুরান্তের কয়েক হাজার মানুষ হাটে আসেন নিয়মিত।
হাটের ৩ পাশ ঘিরে রয়েছে একটি মৃতপ্রায় দিঘী। শুরুতে ঢুকতেই ছাগল আর ভেরা নিয়ে দুই পাশে দাড়িয়ে বিক্রেতারা। তাদের সাথে দর কষাকষি করে সুবিধামত পশু নিচ্ছেন ক্রেতারা।
পুরুষ বিক্রেতার পাশাপাশি অনেক নারী বিক্রেতাও হাটে আসেন বাড়িতে পালন করা হাস-মুরগী বিক্রি করতে। তবে তরুণদের কাছে হাটটি জনপ্রিয় কবুতরের জন্য।
বিভিন্ন জাতের মুরগীর বাচ্চা পাওয়া যায় গোয়ালিমান্দ্রায়। স্থানীয়রা এখান থেকে বাচ্চা নিয়ে লালনপালন করেন বাড়িতে।
রয়েছে পেয়াজ-মরিচ- মিঠাই, শুটকি, তাজা মাছ, লুঙ্গি পোষাক ইত্যাদি। হাতে বানানো পাটি কিংবা কুলাও বিক্রি হয় হাটটিতে। পাওয়া যায় স্থানীয় ক্ষেতের শাকসবজি ও বিভিন্ন ফলফলাদি।
হাটে ঢুকতেই যে সুউচ্চ স্থাপনাটি নজর কারে সেটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত গোয়ালীমান্দ্রা বিজয়স্তম্ভ।
ইতিহাস আর ঐতিহ্যে মিশেল মুন্সিগঞ্জের গোয়ালিমান্দ্রা হাট। হাটের দিন মনোযোগ দিয়ে পুরো হাট ঘুরতে গেলে আপনার সময় লাগবে ১-২ ঘন্টা। এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে স্থানীয় লোকজনের কয়েক পুরুষের আবেগ।
একসময় বর্ষাকালে খুলনা, বরিশাল ফরিদপুর অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের যাতায়াত ছিলো এই হাটে। তবে আশপাশের খালগুলো ভরাট হয়ে সংকুচিত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সেই নৌপথ বাণিজ্য।
হাটে গেলে বড় আকারের পাতলা পরোটা আর মিষ্টি খেতে ভুলবেন না। ভোজনরসিকদের কাছে এই হাটের প্রধান আকর্ষণ যেন এটিই। এছাড়া মিষ্টি দই, দই দিয়ে বানানো ঘোল, ছানা কিংবা মাঠও বেশ স্বাদের।
ভারতের আসাম থেকে আনা শাল কাঠের জন্য এই হাটের কাঠের একসময় বাড়তি সুনাম ছিলো।সেই বাণিজ্য এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাঠ আসে এখানে। সারি সারি সাজানো কাঠ এখনো স্বাক্ষী দিচ্ছে যৌবন কমেনি গোয়ালিমান্দ্রার।
একসময়ের জনপ্রিয় গোয়ালিমান্দ্রা হাট এখনও টিকে আছে এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে।