১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সোমবার | রাত ৮:৪০
‘কর্মক্ষেত্রে আমরা কথা বললেই বহিষ্কৃত হতে হয়, তাই আমাদের কর্মসূচি হচ্ছে গণছুটি’
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ডেস্ক রিপোর্ট (আমার বিক্রমপুর)

চার দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য গণছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সারাদেশের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে সারাদেশের মতো মুন্সিগঞ্জেও আজ বিক্ষোভ, অবস্থান ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি হয়েছে।

বুধবার দুপুর ২টায় সদর উপজেলার সিপাহীপাড়ায় মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রধান কার্যালয়ের সামনে চার শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অবস্থান নেন।

এ সময় ৪০৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর গণস্বাক্ষর সম্বলিত চার দফা দাবি ও গণছুটির ফরম জমা দেওয়ার জন্য কার্যালয়ের ভেতরে জিএমের কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ গেইট বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলনকারীদের ভেতরে ঢুকতে বাঁধা দেয়। এসময় সামান্য উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এসময় সহকারী মহাব্যবস্থাপক প্রশাসন (এজিএম) মো. আনোয়ার হোসেন, এজিএম আইটি মো. রুবেল হোসেন ও এজিএম ফাইন্যান্স মো. সানোয়ার হোসেনের কাছে ছুটির ফরম এবং সাবস্টেশনের গ্রাহক অভিযোগের ফোন জমা দেন কর্মচারীরা।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দাবিগুলো ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকেই উপস্থাপন করা হচ্ছে। আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে স্মারকলিপি প্রদান করার কারণে ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে দুইজন কর্মকর্তাকে এবং একই সময়ে দেশের বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে আরও পাঁচজনকে সংযুক্ত ও বরখাস্ত করা হয়। ফলে মোট সাতজন কর্মকর্তা চাকরিচ্যুতির মুখে পড়েন। কর্মক্ষেত্রে আমরা কথা বললেই বহিষ্কৃত হতে হয়। তাই আমাদের কর্মসূচি হচ্ছে গণছুটি। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা কর্মস্থলে ফিরব না।

তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত ৩০০ এর অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত ও বরখাস্ত হয়েছেন। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৭২ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে, আর ২০ জন ইতিমধ্যে কারাভোগ করেছেন।

আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “গণছুটির কারণে গ্রাহক ভোগান্তি হলে এর দায়ভার মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকেই (বিআরইবি) বহন করতে হবে।

চার দফা দাবিতে যা আছে

১. আরইবি-পিবিএস একীভূতকরণ অথবা অন্যান্য বিতরণ সংস্থার মতো কোম্পানি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি, সব চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণ, মামলা প্রত্যাহার করে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল এবং অন্যায়ভাবে বদলি হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদায়ন কমিটির প্রতিবেদন বাস্তবায়ন।

২. ১৭ আগস্ট ২০২৫ থেকে অদ্যাবধি বরখাস্ত ও সংযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্ত আদেশ বাতিল করে আগের কর্মস্থলে পদায়ন।

৩. জরুরি সেবায় নিয়োজিত লাইনক্রুদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিতে না পারা পাঁচজন লাইনক্রুকে আগের কর্মস্থলে পুনর্বহাল।

৪. দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ।

আন্দোলনকারীদের দাবি, ১৭ অক্টোবর ২০২৪ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৬ জনকে চাকরিচ্যুত, ৩০০ জনকে সংযুক্ত এবং ৬ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গড়ে ৪০০–৫০০ কিলোমিটার দূরে হয়রানিমূলকভাবে বদলি করা হয়েছে।

এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে পল্লী বিদ্যুতের সিস্টেম সংস্কার, আরইবির শোষণ-নিপীড়ন এবং নিম্নমানের মালামালের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কোন ভূমিকা গ্রহণ করছেন না।