১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
মঙ্গলবার | সকাল ১১:০৩
আড়িয়াল বিলের পাশে চলছে অবৈধ চুল্লি, প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন স্থানীয়দের
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নিজস্ব প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)

আড়িয়াল বিলের মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালি এলাকায় কৃষি জমির পাশে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠা একটি অবৈধ অ্যালুমিনিয়াম গলানোর কারখানা অব্যাহতভাবে পরিবেশ দূষণ করে চলেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, চুরাইন বাড়ৈখালি সেবক সংঘের মাঠের পাশ দিয়ে কিছুটা সামনে আড়িয়াল বিলের কৃষি জমির পাশে এক টুকরো উচু জমিতে অ্যালুমিনিয়াম/ধাতব রিসাইক্লিংয়ের জন্য একটি বাঁশের ঘর বানানো হয়েছে। ঘরটির ভেতরে না যাওয়া গেলেও বাইরে দেখে বোঝা যাচ্ছে এখানে ভারি কোন ধাতু গলানোর কাজ চলছে।  অত্যধিক পরিমাণে জ্বালানি পোড়ানোর কারনে কারখানার উপরের অংশ দিয়ে দিন-রাত কালো ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে।

এছাড়া অ্যালুমিনিয়াম পাউডারের সাদা অংশ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের গাছ-সবজি বাগানের উপর। এতে সবুজ গাছের পাতা রুপ নিয়েছে ধূসর রংয়ে।

পাশাপাশি কারখানায় অ্যালুমিনিয়াম গলানোর পর যে বর্জ্য নির্গত হচ্ছে সেগুলো সরাসরি ফেলা হচ্ছে পাশের আড়িয়াল বিলের পানিতে। ধীরে ধীরে সেই কেমিক্যালযুক্ত আবর্জনা পানিতে মিশে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো বিলে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অবৈধ এই অ্যালুমিনিয়াম গলানোর কারখানার বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদসহ উপজেলা প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ জানালেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি তারা। অনেকটা বীরদর্পে চলছে অবৈধ কারখানাটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, এই কারখানার কারনে আড়িয়াল বিলের দূষণ নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করায় স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত এমন কয়েকজনের কাছ থেকে তারা হুমকি পেয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী ঝামেলা এড়াতে গণমাধ্যমের কাছে নাম প্রকাশ করতে চান না তারা।

এদিকে, গতকাল কথা বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারখানাটির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে।

কিন্তু, আড়িয়াল বিল নিয়ে বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্টজন ও প্রশাসনের বাড়তি স্পর্শকাতরতা থাকার পরও এতদিনেও স্থানীয় প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিলের কৃষকসহ স্থানীয় নাগরিকরা।

গতকাল দুপুরে কথা হয় এমন কয়েকজনের সঙ্গে।

স্থানীয় কৃষক রিংকু খান বলেন, আড়িয়াল বিলে ৪০০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করে আমার পরিবার। প্রতিবছর আমরা প্রায় ১ হাজার মন ধান উৎপাদন করি। এই কারখানাটি আমাদের জমিগুলো ধ্বংস করছে। কেউ কি নাই দেখার? আড়িয়াল বিল নিয়ে এত আয়োজন তাহলে এই কারখানা কেউ বন্ধ করে না কেন? ৭-৮ মাস ধরে চলছে। কিন্তু কেউ দেখেও দেখে না। এই পথ দিয়ে শ্রীধরপুর, আলমপুর, মদনখালি যাওয়া আসা করতে হয়। জঘন্য গন্ধে থাকা যায় না, কালো ধোয়ায় বাচ্চাদের অবস্থা আরও খারাপ।

স্থানীয় চাকুরীজিবী আব্দুল হালিম বলেন, কারখানাটি গাছপালা সব নষ্ট করে দিচ্ছে। বাতাসের সাথে এক ধরনের ভারি কণা উড়ে আশপাশের ৪-৫টি বসতবাড়ির অবস্থা নাজুক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে আড়িয়াল বিলের কৃষিজমির। কোনভাবে যদি এই ধাতু মাটির সাথে মিশে যায় তাহলে মাটির শক্তি কমে যাবে, এভাবে চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এছাড়াও সারাদিন অ্যালুমিনিয়ামের পাউডার বাতাসের সাথে উড়ে। গ্রাম-অঞ্চলে এ ধরনের কারখানা গড়ে উঠলো আর প্রশাসনের কেউ দেখলোই না।

বাড়ৈখালি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইমরান তালুকদার বলেন, কারখানাটি চালানোর জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কাছ থেকে ন্যুনতম কোন অনুমতি নেই। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মিটিংয়েও আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে কারখানা মালিক ও জমির মালিককে ১৫দিনের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিলো। দুই মাস হয়ে গেলেও কেউই পরিষদে আসেনি।

শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মহিন উদ্দিন বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে সম্প্রতি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তারা ব্যবস্থা নিতে চাইলে আমরা সকল সহযোগিতা করবো।

পরিবেশ অধিদপ্তর, মুন্সিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, বাড়ৈখালি বা আড়িয়াল বিলের পাশে এরকম কোন কারখানার বিষয়ে আমার জানা নেই। তাছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকেও আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।