মুন্সিগঞ্জ, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের সন্তান শেখ ফরিদ পলক ওয়েস্টার্ন আইডিয়াল ইন্সটিটিউট থেকে কম্পিউটার টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছেন তিনি। বাংলাদেশের বিনোদন জগতে একজন উদীয়মান তরুণ তারকা পলক। চলচিত্র, নাটক কিংবা বিজ্ঞাপন সব জায়গাতেই সমানভাবে দক্ষতার ছাপ রাখছেন তিনি। শুধু পর্দার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নন বরং সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডেও তাঁর অবদান বেশ প্রশংসনীয়। দেশীয় বিনোদন জগতের সীমা পেরিয়ে এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চেও জায়গা করে নিয়েছেন পলক। প্রতিটি চরিত্রে তাঁর অভিনয়ের বৈচিত্র্য আর নিষ্ঠা তাঁকে নিয়ে যাচ্ছে নতুন উচ্চতায়। সম্প্রতি নানা প্রসঙ্গে কথা হয় পলকের সাথে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমার বিক্রমপুর এর বার্তা সম্পাদক নাজমুল হাসান শাওন।
উচ্চশিক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহের ধারাবাহিকতায় খুব শিগগিরই পলক বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হয়ে তাঁর জ্ঞানচর্চার পরিধি আরও প্রসারিত করবেন বলে জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে শ্রোতা জরিপে ঢাকা বিভাগের একমাত্র কমিউনিটি রেডিও “রেডিও বিক্রমপুর ৯৯.২ এফএম”-এ সেরা জনপ্রিয় আর জে হিসেবে সম্মাননা অর্জন করেন পলক। শুধু আর জে কিংবা সমাজসেবামূলক কাজেই নয়, অভিনয় ক্ষেত্রেও তার অবদান সমানভাবে সমাদৃত। অভিনয়ে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন ‘এস আর মাল্টিমিডিয়া স্টার অ্যাওয়ার্ড – ২০২২’ এবং জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা ক্যাটাগরিতে অর্জন করেছেন ‘লাবণ্য অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’
প্রথম যেই মুহূর্তে বুঝেছিলেন ‘আমি অভিনয় করতে চাই’, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?
সেই মুহূর্তটা সত্যিই খুব বিশেষ ছিল। আমি তখন সাধারণভাবে নাটক বা মুভি দেখতাম আর নিজেকে কল্পনা করতাম বড় পর্দায় অভিনয় করছি। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে এক অদ্ভুত আগ্রহ কাজ করতে শুরু করল, আর সে আগ্রহ থেকে যখন প্রথমবার অভিনয় করার সুযোগ পেলাম তখন বুঝতে পারলাম শুধু মজা বা খেলাধুলা নয় বরং আমার সত্যিকারের আগ্রহ ও আনন্দ হলো চরিত্রের মধ্য দিয়ে গল্প বলতে পারা। সেই সময় মনেই হয়েছিল- হ্যাঁ, আমি সত্যিই অভিনয় করতে চাই এবং অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে চাই।
ক্যারিয়ারের শুরুতে সবচেয়ে বড় বাধা কী ছিল, আর সেটা কীভাবে কাটিয়ে উঠলেন?
ক্যারিয়ারের শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না। প্রথম শুটিং সেটে খুব নার্ভাস ছিলাম, মনে হত সব কিছু ঠিক-ঠাক করতে পারব কি না। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে সবচেয়ে বড় সাহায্য পেয়েছি আমার পরিবার থেকে। জীবনের প্রথম অভিনয়ের প্র্যাক্টিসটি আমাকে আমার বাবা করিয়েছিলেন- তার সাহস, দোয়া আর বিশ্বাসই আমাকে এগিয়ে যেতে শক্তি দিয়েছে। ছোট বোনও সবসময় উৎসাহ দিয়েছিল, যা ভয় কাটিয়ে সামনে এগোতে আমাকে প্রেরণা দিয়েছে। আজও মনে আছে সেই প্রথম শুটিংয়ের অনুভূতি- একদিকে ভয়, অন্যদিকে এক অদ্ভুত আনন্দ। এই যাত্রায় আমার পরিবারসহ সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা পেয়ে আমি ধীরে ধীরে নিজের পথে হাটতে সক্ষম হয়েছি।
হলিউডের পরিচালক বা টিমের সঙ্গে কাজ করার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মুহূর্ত, মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা এবং শেখার বিষয়গুলো কী ছিল?
প্রথমে একটু ভয় ছিলো, মনে হচ্ছিল ইংরেজিতে প্রথমবার কাজ করবো, সব ঠিকভাবে করতে পারব কি না। কিন্তু পরিচালকসহ ইউনিটের সবাই এত বন্ধুসুলভ ছিলেন যে সেই ভয় খুব সহজেই চলে গেল। অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ- সকালে পরিচালক নিজে নাস্তা প্রস্তুত করতেন, ভিন্ন স্বাদের খাবার থাকত, আর টিমের মধ্যে ছোট ছোট খুনসুটি চলত, যা সত্যিই মনে রাখার মতো মুহূর্ত। সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, পেশাদারিত্বের সঙ্গে আন্তরিক মনোভাব আর ইউনিটের প্রতি সম্মান রাখলেই কাজ আরও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়। এই অভিজ্ঞতাই আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করেছে এবং অভিনয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
যেকোনো চরিত্রে কাজ করার সময় যদি ভয় বা চাপ অনুভব করেন, সেটা কিভাবে কাটিয়ে ওঠেন?
যেকোনো চরিত্রে কাজ করার সময় চাপ অনুভব হওয়াটা স্বাভাবিক। আমি সেটা কাটাই চরিত্রটি ভালোভাবে বোঝার মাধ্যমে, শটের পরিকল্পনা মাথায় রেখে রিহার্সাল করে এবং পুরো মনোযোগ দিয়ে শুটিং এর প্রতি প্রস্তুত থেকে। পাশাপাশি পরিচালক ও সহকর্মীদের পরামর্শ ও বিশ্বাস আমাকে সাহস যোগায়। সবমিলিয়ে এই সমর্থন, প্রস্তুতি এবং নিজের ওপর বিশ্বাস আমাকে চরিত্রের সঙ্গে পুরোপুরি মিশে গিয়ে সেরা পারফরম্যান্স দিতে সাহায্য করে।
বর্তমানে কি নিয়ে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন এবং ভক্তদের জন্য আপনি ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন চমক বা কাজ উপহার দিতে চান?
বর্তমানে আমি এশিয়ান টিভি’র ধারাবাহিক ‘কলেজ রোড’-এর শুটিং নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। পাশাপাশি সামনে বেশ কিছু চমকপ্রদ প্রজেক্টের পরিকল্পনাও হচ্ছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি ভিন্ন ধরনের চরিত্র ও নতুন গল্পের মাধ্যমে আমার সকল সমর্থক, ভালোবাসার মানুষ এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভালোবাসা অর্জন করে তাদের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নিতে।