আজ ঢাকায় বৈঠক: মুন্সিগঞ্জের দুই আসনে একক প্রার্থী, একটিতে সমীকরণে বিএনপি!
মুন্সিগঞ্জ, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, নিজস্ব প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে মুন্সিগঞ্জ জেলার তিনটি আসন নিয়ে চলছে নানামুখী সমীকরণ।
মুন্সিগঞ্জের ৩টি সংসদীয় আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে শুরু হবে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। এতে জেলার সকল মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ডাক পেয়েছেন। বৈঠকে আন্দোলনে সক্রিয়তা, সাংগঠনিক অবস্থান, জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থীদের বাছাই করা হবে বলে জানা গেছে।
বৈঠকটিতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে শোনা যাচ্ছে, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন সিনিয়র নেতা বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।
এদিকে, একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে- জেলার ৩ সংসদীয় আসনের মধ্য থেকে বিএনপি মুন্সিগঞ্জ-২ (লৌহজং–টংগিবাড়ী) ও মুন্সিগঞ্জ-৩ (সদর-গজারিয়া) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের একক প্রার্থী দিলেও দলটির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা মুন্সিগঞ্জ-১ আসনটি ‘সমীকরণ’ বা সিদ্ধান্তের জন্য বাকি রাখতে চাইছেন।
তারা চাইছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত এই আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত অপেক্ষায় রাখতে।
তবে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখনই কোন সিদ্ধান্ত দিয়ে দিতে পারেন- সেটি একান্তই তার সিদ্ধান্ত।
সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দুইশ আসনে আমরা সিঙ্গেল প্রার্থীকে গ্রিন সিগনাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে খুব শিগগিরই একক প্রার্থীকে সেই সিগনাল দেওয়া হবে।’ বাকি আসনগুলো শরিকদের জন্য রাখা হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘অনেক সমীকরণ আছে, শরিকদের জন্য থাকবে, কিছু আসনে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি- এরকম কিছু আসনও আছে।’
অন্যদিকে, বিএনপি ভোটার অধ্যুষিত মুন্সিগঞ্জের আসনগুলোতে সম্ভাব্য ‘প্রতিদ্বন্দী’ কারা হতে পারেন তা নিয়েও খোঁজখবর রাখছে দলটি। তাছাড়া, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৃহত্তর জোট করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। অতীতে আন্দোলনের সময় যেসব দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে অংশ নিয়েছে, তাদেরকে জোট শরিক হিসেবে সাথে রাখতে চায় বিএনপি। এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে তাদের।
বিশেষ করে নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিতে না পারলে আওয়ামী লীগের সমর্থনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ কিংবা জামায়াতে ইসলামীর সমন্বয়ে কোন ইসলামিক জোট হলে সেইসব প্রার্থীকে মোকাবিলার দিকেও নজর রাখছে তারা। এসব কারনে নীতিনির্ধারকরা এই আসনটিকে একটি ‘কৌশলগত ট্রাম্পকার্ড’ হিসাবে বিবেচনা করছেন।
আরেকদিকে, প্রতিদ্বন্দীতামূলক নির্বাচন না হলে সেটি মোকাবিলার জন্য সরকারের কৌশলগুলোর সাথে সমর্থন বজায় রাখার সম্ভাব্য পথগুলোও ভেবে রাখতে চাইছে দলটি। তাই শেষ পর্যন্ত আসনগুলোতে দুর্বল প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দিয়ে দলের মধ্য থেকে কোথাও কোথাও শক্তিশালী ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী দাঁড় করিয়ে ‘প্রতিদ্বন্দীতামূলক নির্বাচন’ নিশ্চিত করা হবে কি না সেটিও আলোচনায় রয়েছে।
অতীতের নির্বাচনী পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ‘একতরফা’ নির্বাচন বাদে তিনটি আসনেই বিএনপির ভোটের হার তুলনামূলক বেশি। আজকের গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, পদ-পদবি, বর্তমান অবস্থান এবং এলাকায় মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার তথ্য থেকে বাছাই করা হবে দলীয় প্রার্থী।
এদিকে, রোববার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পাঁচ সাংগঠনিক বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাথে বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় ডিপ্লোমেটিক এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় সাক্ষাৎপ্রার্থীদের অনুসারীসহ সেখানে না আসার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
গতকাল রংপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাথে বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আজ একই স্থানে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাথে বৈঠক করবেন তারেক রহমান।


