সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রাজধানীর যানজট নিরসনে আগামী ১৬ আগস্ট থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক) নির্মাণকাজ শুরু হবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে রেল লাইনের উপর দিয়ে গোলাপবাগ হয়ে কতুবখালী পর্যন্ত জাইকার অর্থায়নে এ নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।
বুধবার দুপুরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এর আগে জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সম্প্রতি জাপান সফর নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জাইকার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জাপানের সড়ক মন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। জাপানের শীর্ষ স্থানীয় ২০টি কোম্পানির সঙ্গে মতবিনিমিয় হয়েছে। তারা বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজে অংশ নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাইকার ফান্ডে মেট্রোরেল-৬ এর কাজ শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল-৬ বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা সিটির ট্রাফিক জ্যামের সমাধান নয়। শুধু এই কয়টা কাজ করেই সমাধান পাওয়া যাবে না। আমি আরও দুইটি এমআরটির প্রস্তাব দিয়েছি। একটি হচ্ছে এমআরটি-১, আরেকটি এমআরটি-৫। এই দুটি প্রকল্পের সমীক্ষার কাজ তারা দ্রুত শুরু করবে। তারা খুব পজেটিভলি রিসপন্স করেছে।’
এছাড়া যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে ১৩ কিলোমিটার টানেল নির্মাণের প্রস্তাব করা হলে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। এটা একটি দীর্ঘ টানেল সেজন্য স্ট্যাডিও প্রয়োজন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘টানেলটি নির্মাণ হলে উত্তর জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো জোড়দার হবে। সেজন্য এই টানেলটির প্রস্তাব তাদের কাছে দিয়েছি। তারা বলেছে- স্ট্যাডি করবে।’
জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মূলত জাপান সফরের ফলোআপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া দুই দেশের পারস্পারিক বিভিন্ন বিষয়ে নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।
উল্লেখ, ২০১৯ সালে ঢাকা মহানগরীতে মেট্রোরেল চালু হবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। স্বপ্নের প্রকল্প মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের প্যাকেজ-৮-এর দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে।
প্যাকেজ-৮-এর আওতায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রোলিং স্টক এবং ডিপো ইক্যুইপমেন্ট ও ডিপো রোলিং স্টক সংগ্রহ হবে। এর আওতায় যাত্রাবিরতিতে ট্রেন রাখার স্থান, মেট্রোরেল প্ল্যান্ট, ওয়ার্কশপ, অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।
প্যাকেজ-৭-এর প্রাক-যোগ্যতা যাচাইয়ে দরপত্র এবং প্যাকেজ-১-এর আন্তর্জাতিক দরপত্র আগামী জানুয়ারিতে আহ্বান করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও জাইকার সম্মতিতে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময় (২০২৪) এর আগেই শেষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর একনেকের বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। এর মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ২১,৯৮৫ কোটি সাত লাখ টাকা। যেখানে বাংলাদেশ সরকার দেবে ৫৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা আর প্রকল্প সাহায্য ১৬,৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটি জাইকার আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১২ থেকে জুন ২০২৪। ঢাকা মহানগরীতে কার্যকরী নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, পরিবেশবান্ধব ও দ্রুতগতির গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পের তথা মেট্রোরেল লাইন-৬ এর রুট এলাইনমেন্ট হচ্ছে: উত্তরা তৃতীয় ফেইজ-পল্লবী-রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট-হোটেল সোনারগাঁও-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর-প্রেসক্লাব-বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। মেট্রোরেল লাইন-৬-এর স্টেশন সংখ্যা মোট ১৬টি।
এগুলো হচ্ছে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল। বাস্তবায়নাধীন মেট্রোরেল লাইন-৬ এর দৈর্ঘ্য- ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার (এলিভেটেড)। ট্রেনের সংখ্যা- ২৪ সেট (প্রত্যেক সেটে- ৬টি করে কার থাকবে)। মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা ৬০ হাজার জন (প্রতি ঘণ্টা উভয় দিকে)।