১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | দুপুর ১২:২৮
মুন্সিগঞ্জে পর্যটকদের লক্ষ্য করে ‘দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন’, ‘যৌন নির্দেশক’ অঙ্গভঙ্গিতে নাচ
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১১ জুন ২০২৫, নিজস্ব প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাট সংলগ্ন ধলেশ্বরী নদীতীরের বেরি বাঁধে বিনোদন বা অবসরের উদ্দেশ্যে ঘুরতে আসা পর্যটকদের লক্ষ্য করে ‘দেশীয় অস্ত্র’ চাইনিজ কুড়াল প্রদর্শন, মদের বোতল হাতে ও বোরকা পরে নারী সেজে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গীতে নাচের দুইটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিও অনুযায়ী, এখানে দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘনের বেশ কিছু আলামত রয়েছে।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

সমালোচকরা বলছেন, ঘটনাস্থলটি নৌ পুলিশ, থানা পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার একেবারে নাগের ডগায় হওয়ার পরও তাদের অসারতা প্রশ্ন তৈরি করছে।

ছড়িয়ে পড়া দুইটি ভিডিওর একটিতে দেখা যাচ্ছে, মধ্যম আকারের নামবিহীন একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার মুক্তারপুর সেতুর দিক থেকে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটের সামনে থাকা কয়েক শতাধিক পর্যটকদের উদ্দেশ্য করে এগিয়ে আসছে। ট্রলারটিতে অন্তত ২০ জন কিশোর ছিলেন। উচ্চ শব্দের গানের সাথে তারা নৃত্য করছিলেন এবং তাদের মধ্য থেকে দুইজন কালো ও পিংক কালারের বোরকা পরে ‘যৌন নির্দেশক’ অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে পর্যটকদের ‘উত্ত্যক্ত’ এবং নিজেদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন। ট্রলারের একেবারে সামনের অংশে দাড়িয়ে সাদা শার্ট পরিহিত একজন ও মাঝখানে কালো শার্ট পরিহিত আরেকজনকে মদের বোতল হাতে নিয়ে বিরতিহীনভাবে নাচতে দেখা যায় এসময়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা নাগরিক টেলিভিশনের মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি সাংবাদিক জুয়েল রানা জানান, মূলত লঞ্চঘাটের আশপাশে থাকা কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষকে লক্ষ্য করে অল্পবয়সী ওই কিশোররা এরকম অঙ্গভঙ্গি করছিলো। এর মধ্যে মদের বোতল হাতে নাচার ভিডিওটি আমি ধারণ করি গতকাল মঙ্গলবার (১০ জুন)। এসময় আমরা দূর থেকে তাদের ডেকে থামানোর চেষ্টা করেও সফল হইনি। বোরকা পরিহিত ওই দুইজন যে প্রকৃত নারী নন তা তাদের পায়ের জুতা ও ও অঙ্গভঙ্গি দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়।

তিনি বলেন, ‘তবে কিশোরগুলো কোন এলাকার তা প্রাথমিক অবস্থায় জানা সম্ভব হয়নি।’

অপর ভিডিওতে দেখা যায়, ‘আল ফিহান ফারিয়া’ নামক ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলার মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটের সামনে থেকে মুক্তারপুর সেতুর দিকে ধীরগতিতে এগিয়ে চলছে। ট্রলারে উচ্চ শব্দের সাউন্ড সিষ্টেম ও লাইটিং রয়েছে। বেরিবাধের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পর্যটকদের দেখামাত্র ট্রলারে থাকা ব্যক্তিরা ‘যৌন নির্দেশক’ অঙ্গভঙ্গি করছেন। একই ট্রলারের সামনে থাকা সাদা শার্ট পরিহিত একজনের হাতে রয়েছে ধারালো ‘দেশীয় অস্ত্র’ চাইনিজ কুড়াল। তিনি সেটি পর্যটকদের উদ্দেশ্য করে বারবার প্রদর্শন করছেন।

খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ভিডিওটি এবার ঈদ পরবর্তী সময়ের।

উল্লেখিত দুইটি ভিডিও: 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুন্সিগঞ্জ শহরের বাসিন্দা ও একটি কলেজের অধ্যক্ষ আমার বিক্রমপুরকে বলেন, ‘এভাবে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে ঈদ উদযাপন করা আমাদের সংস্কৃতির অংশ হতে পারে না। এ ধরনের স্বাভাবিকীকরণ অনেক সময় ভয়াবহ বা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাছাড়া অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৭৮ অনুযায়ী দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার, বহন বা তৈরি সম্পর্কে বিধিনিষেধ দেওয়া আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিৎ এদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।’

জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ঢালী বলেন, ‘এ ধরনের চর্চা জাতীর জন্য অশনিসংকেত। যুব সমাজ যে ধ্বংসের পথে রয়েছে তার অন্যতম একটি নির্দশন এগুলো। এখনই এদের আইনের মাধ্যমে কঠোর হস্তে দমন করা না গেলে আমাদের তরুণ-যুবকদের ভবিষৎ অন্ধকার। আমি মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রতি আহবান জানাই তারা যেন কঠোর হাতে এগুলো দমন করেন।’

এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) মো. ফিরোজ কবির বলেন, ‘যদিও বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব নৌ পুলিশের। তারপরও আমার বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’

মুক্তারপুর নৌ পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ ইমরান আহমেদ বলেন, ‘আমরা গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই নদীতে টহলে রয়েছি। কিন্তু আইন ভঙ্গের মত দৃশ্য আমাদের চোখে পড়ে না। হয়তো যারা ‍এগুলো করে তারা আমাদের সামনে করে না। আমরা এরকম পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিবো।’