মুন্সিগঞ্জ, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নিজস্ব প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশের দুই বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলার সাতটি থানায় অপরাধের ধরণের বেশকিছু পরিবর্তন ঘটেছে। ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট এবং ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত দুই সময়কালের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দুই বছরে জেলায় ১০৭ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আগের বছরের চেয়ে খুনের সংখ্যা তুলনামূলক কমেছে, তবে ডাকাতি ও মাদক মামলা কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে।
খুনের তুলনামূলক পরিসংখ্যান
২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় মোট খুন হয় ৫৯টি। এর মধ্যে থানায় রুজুকৃত মামলা ছিল ৫২টি, কোর্ট পিটিশন সাতটি এবং ছিনতাই সংক্রান্ত খুন ছিল সাতটি। এ সময়ে মোট ১১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত খুনের সংখ্যা নেমে আসে ৪৮টিতে। এর মধ্যে ৪০টি থানায় রুজু, আটটি কোর্ট পিটিশন এবং ছিনতাই সংক্রান্ত তিনটি। গ্রেফতার হয় ৪৭ জন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত এক বছরে মুন্সীগঞ্জ থানায় কোনো খুনের ঘটনা ঘটেনি, যেখানে আগের বছর এমন ৪টি মামলা রুজু হয়েছিল।
অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম
অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে দুই সময়কালেই সমান সংখ্যক ১০টি করে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হলেও অস্ত্রের ধরণে কিছু পার্থক্য আছে। আগের বছরে বিদেশি ও দেশি পিস্তল, বন্দুক, পাইপগান, কার্তুজসহ ১৫ মামলায় ২০ জন গ্রেফতার হয়। অপরদিকে ২০২৪-২৫ সালে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে বিদেশি ও দেশি পিস্তল, রিভলবার, বন্দুক, পাইপগান, গুলি, ম্যাগজিন ছাড়াও রামদা, কিরিচ ও ছোরা যুক্ত হয়েছে। এ সময়ে ১৪টি মামলায় গ্রেফতার হয় ২৬ জন।
২৩-২৪ সালে উদ্ধার হয়েছে বিদেশি পিস্তল একটি, দেশি পিস্তল একটি, বন্দুক দুটি, পাইপগান দুটি, কার্তুজ ১৮টি, বিদেশি রিভলবার তিনটি, শর্টগান একটি, অন্যান্য সুইচ গিয়ার একটি।
গত বছরে উদ্ধার হয়েছে বিদেশি পিস্তল দুটি, দেশি পিস্তল দুটি, বন্দুক একটি, পাইপগান চারটি, কার্তুজ ১৩টি, দেশি রিভলবার একটি, গুলি ২৩ রাউন্ড, পরিত্যক্ত ৩২৬ রাউন্ড, ম্যাগজিন তিনটি, অন্যান্য-রামদা ৯টি, তিনটি কিরিচ, একটি ছোরা।
ডাকাত গ্রেপ্তার বেড়েছে
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডাকাতির ঘটনা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরে মোট ডাকাতি মামলা ছিল ১৯টি। তবে থানায় হয়েছিল ১৮টি। একটি হয়েছিল কোর্টে পিটিশন মামলা। পুলিশ জানিয়েছে, প্রকৃত ডাকাতি ছিল থানায় রুজু হওয়া ১৮টিই। আর এ বছর ডাকাতি মামলার সংখ্যা ২০টি। তবে পুলিশ বলছে, তিনটি কোর্টের পিটিশন মামলা। প্রকৃত ডাকাতির ঘটনা ১৭টি। সেই হিসেবে এ বছর ডাকাতি একটি কম। তবে ৮৯ ডাকাত গ্রেফতার হয়েছে। তার আগের বছর ডাকাত গ্রেফতার হয়েছিল ৫২ জন।
মাদক উদ্ধারে সাফল্য
মাদক উদ্ধারের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে মাদক উদ্ধারের সংখ্যা ও বৈচিত্র্যতায় পরিবর্তন হয়েছে।
গত বছর ইয়াবা উদ্ধার হয় ৩২ হাজার ৫৭৪ পিস, গাঁজা ২৭১ কেজি ৯৩০ গ্রাম, হেরোইন ৮২ দশমিক ৫৮৫ গ্রাম ও ৯০৩ পুরিয়া, বিদেশী ও দেশী মদসহ মোট ৪২৬টি মামলায় গ্রেফতার হয় ৫৭৯ জন।
আর চলতি বছর ইয়াবা কমে ১৮ হাজার ১৬৩ পিসে দাঁড়ালেও গাঁজা বেশি উদ্ধার হয় ১৩৪ কেজি ৮০ গ্রাম, বেশি উদ্ধার হয়েছে হেরোইন ১৩১.০৬ গ্রাম ও ৪৫১ পুরিয়া। পাশাপাশি নতুন করে ফেনসিডিল (৩৬০ বোতল
ও ৪৫০ মিলি) যুক্ত হয়। চলতি বছরে মাদক মামলা এবং উদ্ধার যেমন বেড়েছে তেমনি গ্রেফতারও বেশি হয়েছে। অর্থাৎ ৪৩৫ মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ৫৯২ জন।
অপরাধ কমেছে, অপরাধী গ্রেপ্তার বেড়েছে
মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ ফিরোজ কবির মঙ্গলবার বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নেই বলে প্রচলিত আছে। সে ক্ষেত্রে মুন্সিগঞ্জে অপরাধ কমেছে এবং বেশি সংখ্যক অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। পূর্ববর্তী বছরে ১৮টি ডাকাতি হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর হয়েছে ১৭টি ডাকাতি। পূর্ববর্তী বছরের ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতারে তুলনায় এ বছর গ্রেফতার বেশি হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে এবং গ্রেফতারদের অধিকাংশই আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। এরা অন্য জেলা থেকে এসে মুন্সিগঞ্জ ও আশপাশের জেলায় ডাকাতি করছিল। এই ডাকতরা গ্রেফতার হওয়ায় শুধু মুন্সিগঞ্জ আশপাশের জেলাও এর সুফল পাচ্ছে।’
তিনি জানান, পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারে ক্ষেত্রেও অধিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা এবং ভৌগলিক অবস্থানের চ্যালেঞ্জ, প্রধান নদীপথ, দুটি প্রধান মহাসড়কই জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নানা দিক সামলাতে হচ্ছে পুলিশকে। তারপরও মুন্সীগঞ্জের পুলিশ বাহিনী সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে; যা পরিসংখ্যানেই সুস্পষ্ট।