মুন্সিগঞ্জ, ১ নভেম্বর ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)’
মুন্সিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মো.মঞ্জিল মোল্লা নামে এক বিএনপি কর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ-১ ও মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ ১৪২ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে হতাহতের ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় ৩টি হত্যা ও দুটি হত্যা চেষ্টাসহ ৫ টি মামলা হলো।
মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও সমমনা সংগঠনের আরও ১০০-১৫০ জন নেতা-কর্মীকে।
আজ শুক্রবার সকাল আটটার দিকে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় এই মামলা দায়ের হয়।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান মামলার তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত মঞ্জিল মোল্লা মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো.মহিউদ্দিন আহমেদ, মুন্সিগঞ্জ -৩ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সালসহ ১৪২ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দাখিল করেছিলেন। শুক্রবার সকালে সেই অভিযোগটি মামমলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মামলার বাদী আহত মঞ্জিল মোল্লা (৫৩) শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার ইব্রাহিম মোল্লার ছেলে। তিনি পেশায় একজন দিন মজুর এবং বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন- মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদের ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আনিসুর রহমান ওরফে রিয়াদ,মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান, মুন্সিগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী (পিপি) আবদুল মতিন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ভূইয়া, সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান সোহেল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফয়সাল মৃধা, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো.সুরুজ, শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নসিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত হোসেন প্রমুখ।
মামলার এজাহারে বলা হয়- গত ৪ আগস্ট রোববার সকাল থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শহরের বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা উত্তর ইসলামপুরের শতশত লোকজন অংশ নেন। ওই দিন সকাল পৌনে ১০টার দিকে ছাত্র-জনতা শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের পেটাতে শুরু করেন। আন্দোলনকারীরা শহরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার সড়ক দিয়ে সুপারমার্কেট এলাকায় আসতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফয়সাল মৃধা, শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নসিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাগর, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ একাধিক জনপ্রতিনিধি ও তাদের অনুসারী নেতা-কর্মীরা বন্দুক, ছুরি, ককটেল নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান।
অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ছররা গুলি ছোড়ে পুলিশ। সেদিনের ঘটনায় উত্তর ইসলামপুরের রিয়াজুল ফরাজী, সজল মোল্লা ও নুর মোহাম্মদ ওরফে ডিপজল মারা যান। গুলিবিদ্ধ হন দদেড় শতাধিক আন্দোলনকারী। এদিন মামলার বাদী মঞ্জিল মোল্লার পেট, পিঠ ও হাতে তিনটি গুলি লাগে। এতে মঞ্জিলের ডান হাতের কবজির হাড় গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়। পেটের গুলিতে ৫ টি নাড় ছিদ্র হয়। ঘটনার পর থেকে আড়াই মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মঞ্জিল। সেখানে তার হাত ও পেটে তিনটি সার্জারি হয়। মঞ্জিল এখনো তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।