মুন্সিগঞ্জ, ২০ অক্টোবর ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
সনাতন হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসব আজ থেকে মহা ষষ্ঠীপূজার মধ্যদিয়ে শুরু হচ্ছে। পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে মুন্সিগঞ্জের মন্দির-মণ্ডপগুলো বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়েছে।
জেলায় এবছর ৩৫৬টি স্থানে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ২৫৩টি স্থায়ী ও ১০৩টি অস্থায়ী। জেলার ৬ উপজেলার মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদরে ৪৪টি, টংগিবাড়ীতে ৫৪টি, গজারিয়ায় ১০টি, লৌহজংয়ে ৩৭টি, সিরাজদিখানে ১২৭টি ও শ্রীনগরে ৮৪টি স্থানে দূর্গা পূজা হবে।
আজ ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী, কাল ২১ অক্টোবর সপ্তমী, ২২ অক্টোবর অষ্টমী, ২৩ অক্টোবর নবমী এবং ২৪ অক্টোবর দশমী অনুষ্ঠিত হবে।
দুর্গোৎসব উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন ও পুলিশ সুপার আসলাম খান জেলাবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীও থাকবে। অধিক জনসমাগম ও গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপ এলাকায় র্যাবের টহল থাকবে। এছাড়া পূজামণ্ডপগুলোতে আইপি ক্যামেরা এবং প্রয়োজনে রিচার্জেবল আইপি ক্যামেরা স্থাপন এবং ধারণকৃত ফুটেজ সংরক্ষণসহ স্থাপনকৃত ক্যামেরার সাথে সংশ্লিষ্ট ইউএনও অফিস ও থানাকে সংযুক্ত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এছাড়া নামায ও আজানের সময় মসজিদ পার্শ্ববর্তী পূজামণ্ডপগুলোতে ঢাক-ঢোল বাজানো ও সকল প্রকার শব্দযন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ রাখার আহবান জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। উপজেলাভিত্তিক পূজামণ্ডপগুলোর জন্য মেডিকেল টিম গঠনে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে। পূজা উপলক্ষে সকল প্রকার মেলা কিংবা অন্য কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন নিরুৎসাহিত করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া আশপাশে মাদক, হাউজি ও জুয়ার আসর যাতে বসতে না পারে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে জেলা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পূজা উদযাপন পরিষদ ও স্ব স্ব মণ্ডপ কতৃপক্ষকে নজরদারির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অজয় চক্রবর্তী বলেন, উৎসাহ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপনের ঐতিহ্য প্রাচীনকাল থেকেই মুন্সিগঞ্জে রয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অসাম্প্রদায়িক দৃষ্ঠান্ত বজায় রাখার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান তিনি। তিনি দলমত নির্বিশেষে পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সমর কুমার ঘোষ বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মুন্সিগঞ্জ জেলায় সবসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হয়ে আসছে। এ বছর স্ব-স্ব মন্দিরে মন্দিরভিত্তিক সম্প্রীতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পূজার সময় রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ থেকে বিরত থাকারও আহবান জানান তিনি।
জমকালো আয়োজন
মুন্সিগঞ্জ শহরের বাগমাহমুদালীপাড়ার শীতলা মন্দিরে কাঠের ফ্রেমের উপর উলের সুতা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে দুর্গাপূজার অস্থায়ী মন্দির। সাদা, হলুদ, মেরুন ও পিংক কালারের সুতা মণ্ডপের সৌন্দর্যের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
মন্দিরে প্রবেশের রাস্তার মাথায় বানানো হয়েছে উল ও কাঠের গেট। জেলার জমকালো দুর্গাপূজার মধ্যে বাগমাহমুদালীপাড়ার শীতলা মন্দিরের পূজা অন্যতম। গেল বছর ককশিটের ব্যাবহারে মণ্ডপ তৈরি করে জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে মণ্ডপটি। এবারও সেখানে ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়েছে। কারুশিল্পী পান্না দাসের ভাবনায় ৬০ কেজি উলের সূতা ব্যবহার করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এবারের দুর্গাপূজার অস্থায়ী এই মন্দির।
জেলার সব কয়টি পূজা মণ্ডপের প্যান্ডেল থেকে শুরু করে প্রতিমা তৈরি, সাজসজ্জা ও আলোক ছটাতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। দেশীয় নানা পণ্যের ঐতিহ্য দিয়ে পূজা মণ্ডপগুলোকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
শহরের নয়াপাড়া পঞ্চায়েত পূজা কমিটি এবারও দুর্গাপূজার জমকালো আয়োজন করেছে। সাদা ককশিটের উপরে হোগলা পাতা বসিয়ে পূজার পুরো মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন কারুকাজ ও নানা রঙে প্রতিমাগুলোকে ফুটিয়ে তেলা হয়েছে। জেলার প্রতিটি পূজা প্রাঙ্গণ ও রাস্তার দুই ধারের পুরোটা রঙিন আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রায় সব জায়গাতেই নারী-পুরুষের মণ্ডপে প্রবেশের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়া সদরের কেন্দ্রীয় কালীমন্দির, ইদ্রাকপুর লক্ষী নারায়ণ জিউর মন্দির, পঞ্চসার শশ্মান, শীলমন্দি মন্দির, যোগিনীঘাট মন্দির, কাটাখালী মন্দির, চাম্পাতলা মন্দির, পাঁচঘড়িয়াকান্দিসহ বিভিন্ন স্থানে শারদীয়া দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এসব মণ্ডপে পূজার ৫ দিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
মনিটরিং কমিটি
দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য ৪সদস্যের একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
এতে মুন্সিগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলার জন্য স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. যুবায়ের, শ্রীনগর উপজেলার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদ এলাহী, টংগিবাড়ী ও লৌহজং উপজেলার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাকির হোসেন ও সিরাজদিখান উপজেলার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুল আলমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সাথে সমন্বয়পূর্বক সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করবেন।
সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব, বিভ্রান্তিমূলক/উসকানিমূলক পোস্টের বিরুদ্ধে নজরদারিতেও তারা ভূমিকা রাখবেন বলে জানা গেছে।
এবার সারা দেশে দুর্গাপূজার মণ্ডপের সংখ্যা ৩২ হাজার ৪০৭টি। মুন্সিগঞ্জে ৩৫৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।