মো. জাফর মিয়াঃ
মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিম পৌর এলাকার রামগোপালপুর দুধপট্রি এলাকায় রাম কৃষ্ণ শাহা ওরফে (রমা) (৫৫) নামের একজনকে ৩০ বছর ধরে ছোট্র ঘরে শিকলবন্দী হয়ে আছে। সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য এমনই একটি অমানবিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে পরিবারের স্বজনরা ।
স্থানীয় সুত্র জানায়, মিরকাদিমের দুধপট্রি এলাকার স্বর্গীয় গৌরাঙ্গ শাহার পুত্র রাম কৃষ্ণ শাহা ওরফে রমা (৫৫) কে তার আপন ছোট ভাই গনাই শাহা ৩০ বছর আগে ঘরের মধ্যে শিকল বন্দি করে রাখে। পাঁচ বছর পূর্বে গনাই শাহা মারা যায়। তবুও শিকল মুক্ত হতে পারেনি রমা শাহা। স্বামীর মৃত্যুর পর গনাই শাহ এর স্ত্রী মনি রানী শাহা ও তার সন্তানরা এখন রমাকে একটা ছোট্র অন্ধার কুঁকড়ি ঘরে শিকল বন্দী করে রেখেছে। খাবার মিলে দিনে ২ বার , স্থানীয়রাও মাঝে মাঝে তাকে খাবার কিনে দেয়। এভাবে ৩০ বছর ধরেই চলছে রমা শাহা বন্দি দশা জীবন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্র টিনের ঘরে ৮ ফিট/৮ ফিট রুমে ছোট্র একটি কাঠের চকি। রুমটির এক কর্নারে বড় একটি গর্ত সেখানে রমা প্র¯্রাব করে। টয়লেট করতে হলে রমা খোলা জানালা দিয়ে ঘরের পিছনের অংশে পায়খানা করে । মাঝে মধ্যে ভাতিজারা শিকল খুলে দেয় টয়লেটে যাওয়ার জন্য । টয়লেট সেরে আসার পর আবারও শিকল বন্দি হয় রমা শাহা । ঘরটিতে নেই কোন বিদ্যুৎ, চারদিকে দূর্ঘন্ধ, ড্রামের মধ্যে ময়লা আর আবর্জনা যুক্ত পানি রাখা । পানি পিপাসা লাগলে রমা সেই ড্রামের পানিই পান করে। পরিবারের লোকজন তাকে পাগল দাবি করে শিকল বন্দি করে রাখলেও কোনদিন তাকে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা নেয়নি ।
বন্দি রুমে কথা হয় রাম কৃষ্ণ শাহার সাথে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি বরিশাল থেকে চাল, ডাল এনে মিরকাদিম বন্দরে বিক্রি করতাম । ব্যবসাও ভালো চলছিলো । নিয়মিত তিনি জাতীয় পাটির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো । তিনি আরো বলেন, আমার বাবা মা মারা যাওয়ার আগে এই বিশাল সম্পত্তি আমাকে দিয়ে যায়। আমি যৌবনকাল থেকে শিকল বন্দি , বিয়ে করিনি, সংসার নেই আমার । আমার সম্পদ নিবে নিয়ে যাক এভাবে আমাকে আটকে রেখেছে কেন? আমাকে ছেড়ে দেউক আমি কাজ করে নিজের পেট চালাবো তবুও স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই।
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাকে ৩০ বছর ধরে শিকলে বন্দি রাখা হয়েছে। লোকটা শিক্ষিত তার সম্পত্তি আতœসাৎ করার জন্য তাকে পাগল বানিয়ে রেখেছে ছোট ভাই এর স্ত্রী ও তার সন্তানরা। অতিদ্রুত তাকে মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়া উচিত ।
রাম কৃষ্ণ শাহা ওরফে রমা শাহাকে শিকল বন্দী রাখার বিষয়টি স্বীকার করে গনাই শাহার স্ত্রী মনিরানী শাহা বলেন, ৩০ বছর ধরে তাকে শিকলে বন্দি রেখেছি। ওনি আমার বাসুর হন। ৩০ বছর আগে বরিশাল ব্যবসা করতে গিয়েছিলো তখন তাকে কারা যেন ব্যাপক মারধর করে। সেই থেকে তিনি মানসিকভাবে পাগল হয়ে যায়। তারপর থেকে তাকে এভাবে শিকলে আটকে রাখা হয়। তাকে কোন চিকিৎসা করানো হয়েছিলো ? এমন প্রশ্নের জবাবে গনাই শাহার স্ত্রী মনিরানী শাহা বলেন, তাকে আজ পর্যন্ত কোন চিকিৎসা দেয়া হয়নি। এখন তিনি সুস্থ্য আছেন । তাকে ছেড়ে দিলে এলাকার লোকদের মারধর করে তাই বাধ্য হয়ে তাকে শিকল বন্দি রাখি ।
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, এটা একটা অমানবিক ঘটনা। একজন সুস্থ্য মানুষকেও যদি এভাবে শিকল বন্দি রাখা হয় তাহলে সে পাগল হয়ে যাবে। তাকে দ্রুত চিকিৎসাসেবা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়া জরুরি ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ফারুক আহাম্মেদ বলেন, মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি অমানবিক। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। আমরা তদন্ত করে দেখবো। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।