কিছু সময় পরিশ্রম করায় শরীরে ঘাম হয়। এই ঘাম শরীরের কার্যক্ষমতা বোঝার অন্যতম উপায়। খুব দ্রুত ঘেমে যান অনেকে। আবার তুলনামূলক কম ঘামেন বা ঘাম হতে অনেকের ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগে। নারী ও পুরুষের ঘাম হওয়ার হারেও ভিন্নতা দেখা যায়। কেন এমন ভিন্নতা? মানুষের শরীর ও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ঘাম হওয়ার ও এর হারের সম্পর্কের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো।
নারী ও পুরুষের ঘামের ভিন্নতা
বিস্ময়কর হলেও বিষয়টি সত্য। পুরুষ ও নারীর ঘাম হওয়ায় ভিন্নতা দেখা যায়। সাধারণত একই বয়সের নারীর চেয়ে পুরুষ চারগুণ ঘামে। এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিওলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যায়াম করার সময়ও পুরুষ নারীর চেয়ে বেশি ঘামে। নারীকে ঘামতে হলে পুরুষের চেয়ে তুলনামূলক বেশি ব্যায়াম করতে হয়। এর কারণ হিসেবে অনেক তত্ত্ব আছে। পুরুষ ও নারীর ঘাম হওয়ার হারের ভিন্নতার জন্য অনেকে বিবর্তনের কথা বলেন। অনেকে আবার এর জন্য দায়ী করেন হরমোনকে।
বেশি ঘামা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ
বেশির ভাগ মানুষই ঘাম বেশি হওয়াকে সুস্থতার হার কমে যাওয়ার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু প্রকৃত সত্যটা এর ঠিক উল্টো। যারা বেশি ঘামে তারা বেশি সুস্থ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। নিয়মিত শরীরচর্চায় সৃষ্ট ঘামের ফলে শরীরে বেশি গরম হয়ে যেতে পারে না। শরীর থেকে ঘাম বের বাষ্পীভূত হয়, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
ঘাম বংশগতি দ্বারা প্রভাবিত
ঘাম বংশগতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। জিনের পরিবর্তনের কারণে মানবদেহে কোষের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হয়, যা ঘামগ্রন্থি থেকে ঘাম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটিকে ভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
বেশি ঘামার কারণ
সাধারণত আবহাওয়া পরিবর্তন, ভারী পোশাকের কারণে ঘাম বেশি হয়। তবে মাঝে মাঝে বেশি ঘামা একধরনের শারীরিক অসুস্থতার কথাও নির্দেশ করে। ঘর্মগ্রন্থি থেকে বেশি ঘাম বের হওয়াকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হাইপারহাইড্রোসিস বলে। এই অসুস্থতায় আক্রান্তরা কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ঘামে, এমনকি তারা যদি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষেও থাকে। এই রোগে আক্রান্তদের হাত ও পায়ের তালু, বগল এবং মুখমণ্ডল ঘামে।
মানবদেহের বর্জ্যদ্বার
ঘামকে মানবদেহের বর্জ্যদ্বারও বলে। ঘামের কারণে মানবদেহের রোমকুপের পথগুলোতে নিয়মিত বর্জ্য বের হয়। এতে শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ যেমন অ্যালকোহল, লবণ ইত্যাদি বের হয়ে যায়। বিষাক্ত পদার্থ বা আবর্জনা ঝেড়ে ফেলার এই কাজটি করে প্রধানত আমাদের কিডনি। তবে যত দ্রুত কাজ শেষ হওয়া প্রয়োজন, তত দ্রুত কিডনি কাজ করে না। তাই শরীর ঘামের মাধ্যমে অনেক অপদ্রব্য বের করে দেয়। গবেষকরা এরই মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন যে শরীরের ৩০ শতাংশ অপদ্রব্য নিঃসৃত হয় ঘামের মাধ্যমে।
ওজন কমায় ঘাম
কায়িক পরিশ্রমের ফলে শরীর ঘামে। এর প্রভাবে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। স্থুলকায়দের জন্যও ঘাম উপকারী। কারণ শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি উৎপন্ন তাপের ফলে গলে গিয়ে পানিতে দ্রবণীয় যৌগে পরিণত হয়, যা ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। এ ছাড়া ঘামে ‘ডারমিসিডিন’ নামে এক ধরনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রোটিন থাকে, যা দেহকে ক্ষতিকারক জীবাণু হতে রক্ষা করে।