ভারতের উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের একটি মন্দিরে গরুর গোশতের টুকরো ছুঁড়ে ফেলে পালাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) এক কর্মী। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মন্দিরের ভিতরে গোশতের টুকরো ছুঁড়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে যায় বোরখা পরা এক ব্যক্তি। স্থানীয় লোকজনদের প্রচেষ্টায় অবশেষে বোরখার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে এক যুবক। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ফেসবুক এবং টুইটারে সেই ছবি ব্যাপকভাকে ছড়িয়ে পড়েছে। টুইটে এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, ধরা পড়ে যাওয়া ওই যুবক আরএসএস কর্মী।
সংখ্যালঘু মুসলিমের বেশ ধরে হিন্দুদের ধর্মস্থান অপবিত্র করার চেষ্টার পিছনে গভীর চক্রান্ত রয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হয়েছে। ধৃত ওই যুবককে নিয়ে আজমগড়ের রাস্তায় মিছিল বের করা হয় বলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ। যদিও বোরখা পরা আরএসএস সমর্থক ওই পোস্টটি পরে মুছে ফেলা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে মন্দিরে গরুর গোশত ছুঁড়ে ধরা পড়ার ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগে গত ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মুজাফফর নগর পুলিশের হাতে দেশ রাজ (৩৫) নামে এক হিন্দু ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছিল।
ডিসেম্বরে মুজাফফর নগরের পারসৌলিতে কয়েকটি মন্দিরে গরুর গোশত ফেলার কথা প্রকাশ্যে আসে। এখানকার নবনির্মিত এক মন্দিরে পশুর চামড়াও পাওয়া যায়। একটি মন্দির থেকে মূর্তি চুরি যাওয়ার ঘটনাও ঘটে সেই সময়। একের পর এক এসব ঘটনায় ওই সময় তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় স্পর্শকাতর ওই এলাকায়।
পুলিশ এই ঘটনার তদন্তে নেমে গত বছর ২২ ডিসেম্বর দেশ রাজ নামে ওই হিন্দু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। মুজাফফর নগরের পুলিশ কর্মকর্তা এইচ এন সিং জানিয়েছিলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টার ফলে দেশ রাজকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। সে তার নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছে।’
গ্রেপ্তার হওয়া দেশরাজ এর আগে একটি মসজিদ থেকে কিছু জিনিষপত্র চুরি করেছিল বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আমরা ধৃতের কাছ থেকে কয়েকটি ম্যাপ উদ্ধার করেছি, তাতে মসজিদকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে বলেছে, মন্দিরে গোশতের টুকরো ছুঁড়ে বিদ্বেষ ছড়াতে চেয়েছিল।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে গ্রামের একটি মসজিদে কুকুরের মৃতদেহ ছুঁড়ে ফেলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে চেয়েছিল বলেও স্বীকার করে গ্রেপ্তার হওয়া ওই যুবক। গত সপ্তাহে উত্তর প্রদেশের একটি গ্রামে গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগে মোহাম্মদ আখলাক নামের এক মুসলিমকে ইট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে হিন্দু জঙ্গিরা।