বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অভিবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য উল্লেখ করে বক্তারা বলেছেন, অভিবাসীরা যাতে বিনা জামানতে ঋণ পেতে পারেন সে জন্য আগামী বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে। সেই সঙ্গে অভিবাসী কর্মীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘অভিবাসীর বাজেট’ শীর্ষক সমাবেশে সংগঠনগুলো এমন দাবি করে। অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) আয়োজিত সমাবেশে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৪০০ অভিবাসী কর্মী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অভিবাসন ইস্যুতে কর্মরত সুশীল সমাজ প্রতিনিধি অধ্যাপক সিআর আবরার, সৈয়দ সাইফুল হক, আতিকুন নবী, হাসান ইমামসহ অনেকে। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ওকাপের চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম এবং অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ওকাপের নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওকাপ চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, অভিবাসীদের ৯০ শতাংশ দালালের মাধ্যমে বিদেশে যেয়ে নানা রকম সমস্যায় পড়ছে। বিদেশ যাওয়ার জন্য সঠিক তথ্য না জানার জন্য এটা হচ্ছে। অথচ অভিবাসী কর্মীদের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচির জন্য কোনো বাজেট রাখা হয় না। শাকিরুল ইসলাম বলেন, অভিবাসীর রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হলেও জাতীয় বাজেটে এই সেক্টরে বরাদ্দ মাত্র ০.১৭ শতাংশ, যা খুবই নগণ্য। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী পৃথিবীর ১৬১টি দেশে কাজ করছে। এই অভিবাসীরা প্রতিবছর প্রায় ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে।
শাকিরুল আরো বলেন, বিদেশ ফেরত কর্মীদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। উপস্থিত অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে আগত বিদেশ ফেরত মো. শাহ জালাল বলেন, তিনি ১৫ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। দেশে এসে গত ৪ বছর ধরে তিনি কর্মসংস্থানের চেষ্টা করেছেন কিন্তু আজও সফল হননি। তিনি সরকারের কাছে অভিবাসীদের জন্য বিনা সুদে ব্যাংক ঋণের বন্দোবস্ত করতে জাতীয় বাজেটে অভিবাসীদের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য দাবি জানান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের অভিবাসন বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য নূরজাহান বেগম বলেন, অভিবাসন খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এসডিজি অর্জন করতে হলে এ খাতকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, অভিবাসন খরচ কমানোর জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একজন কর্মীর তিন থেকে পাঁচ মাসের বেতনের সমান হবে অভিবাসন খরচ। তিনি দালালদের খপ্পরে না পড়ার জন্য বিদেশগামী কর্মীদের আহ্বান জানান।
নূরজাহান বেগম আরো বলেন, আগামী বাজেটে অভিবাসন খাতে বেশি বাজেট বরাদ্দের জন্য তিনি জাতীয় সংসদে দাবি উত্থাপন করবেন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বলেন, সরকার নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা এই টাকা খরচ করতে পারি না। আমাদের অনেক টাকা সরকারকে ফেরত দিতে হয়। তিনি আরো বলেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মদক্ষতা ও সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। অভিবাসী কর্মীদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। বমসার পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, ওয়েলফেয়ার ফান্ডের টাকা কর্মীদের টাকা। কল্যাণ ফি ৩৫০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা ব্যয় করে এ ফান্ডের টাকা কর্মীদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে।