৬দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের পদ্মা সেতু এখন স্বপ্নের খোলস থেকে বেরিয়ে ও তথাকথিত কাগজ-কলমের বন্দিদশা কাটিয়ে রূপ নিয়েছে দৃশ্যমান বাস্তবতায়। এই সেতুটি পৃথিবীর অন্যতম একটি সেতু হিসেবেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে স্থাপন করতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু পাল্টে দেবে মাওয়া প্রকল্প এলাকার চেহারা। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের পাশাপাশি এলাকার পর্যটন খাতে যা যোগ করবে নতুন মাত্রা। বিশেষ করে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে প্রকল্প এলাকায় নির্মিত সার্ভিস এরিয়াগুলোর কাজ শেষে সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হলে তার সুফল পাবেন দেশের পর্যটনপ্রেমীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মাসের মধ্যেই সার্ভিস এরিয়া নির্মাণের কাজ শেষ হবে। এ যেন ধীরে ধীরে গড়ে উঠা এক নতুন শহর। অজস্র স্বপ্নকে বুকে নিয়ে যা জেগে উঠছে উত্তাল পদ্মা নদীর পাড়ে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত যে স্বপ্ন,
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে দেশের অন্য জেলাগুলোর যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক এগিয়ে যাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। ব্যবসা-ব্যানিজ্য প্রসার হবে। দেশের অথর্নীতি আয় বাড়বে।’ তার কাজের সুবিধার জন্য মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর এবং মাদারীপুরে গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি সার্ভিস এরিয়া। মূল সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ” দেওয়ান মোহাম্মদ আবদুল কাদের বলেন , এর মধ্যে এক ও দুই নম্বর সার্ভিস এরিয়ায় মূল সেতু, নদী শাসন প্রকল্প ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা থাকছেন। ৩ নম্বর সার্ভিস এরিয়ায় থাকার ব্যবস্থা হয়েছে সেনা কর্মকর্তাদের। আপাতত এই ৩টি সার্ভিস এরিয়া দেশি বিদেশি প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞদের আবাসন এবং গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হলেও এগুলোকে ঘিরেই পদ্মার দু’পাড়ে গড়ে উঠছে পর্যটন সম্ভাবনা। বিশেষ করে ২ নম্বর সার্ভিস এরিয়াটিকে পুরোপুরি গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটনবান্ধব করে। ৩ টি সার্ভিস এরিয়া নির্মাণে সার্বিক তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেতুর কাজ শেষ হলে ৭৭ হেক্টর এলাকা জুড়ে নির্মিত ২ নম্বর সার্ভিস এরিয়ায় পর্যটকদের জন্য থাকবে আবাসনের পাশাপাশি আধুনিক সব সুবিধাই। চলতি মাসের মধ্যেই নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ করে সার্ভিস এরিয়াগুলো সেতু বিভাগের হাতে হস্তান্তর করবে সেনাবাহিনী। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় শত শত ট্রাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে নানা ধরনের নির্মাণ সামগ্রী। আসছে প্রয়োজনীয় ভারি ভারি যন্ত্রপাতি। দেশি-বিদেশি হাজার হাজার শ্রমিক আর কর্মকর্তার থাকার জন্য মাওয়া ও জাজিরা পাড়ের প্রান্তে বানানো আছে বড় বড় ঘর। একদিকে মূল সেতুর টেস্ট পাইল বসানো, প্রথম শুরু হওয়া মূল পাইলিংয়ের কাজ এগিয়ে চলছে। ৩ মিটার ব্যাসের ৪শ’ ফুট দীর্ঘ পাইলটির ৪০ ফুট ভেতরে প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে নদীর মাঝে মাঝে চলছে ড্রেজিং-ও পিলার পাইলিং অন্তর অন্তর এ সেতুর পাইলগুলোর ১২০ মিটার বা ৪০ তলা ভবনের সমান কাঠামো পানির নিচে থাকবে। সব মিলিয়ে সেতুটির একেকটি পাইলের দৈর্ঘ্য হবে ১৫০ মিটার। পাইলগুলো আকারে হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেমনি এগুলো যাবে সবচেয়ে বেশি গভীরে। অন্যদিকে এই প্রথম নিজস্ব অর্থায়নে বড় কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যেটি হয়তো ইতিহাস হয়ে থাকবে। সরকারের ইমেজ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দাতা দেশগুলোর অন্যায় হস্তক্ষেপ প্রবণতা কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মাওয়া পয়েন্টে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়কে থাকা ব্রিজ, সংযোগ সড়কের পাশের সার্ভিস রোড তৈরি, ড্রেজিং ও ক্ষতি গ্রস্তদের পুর্নবাসনের কাজ। ভারী ভারী নির্মাণ যন্ত্র দিয়ে চলছে পাথর ভাঙ্গা, মাটি কাটা, মাটি ভরাট করা, রাস্তা সমান করার কাজ। ওয়েল্ডিং এর আলোর ঝলকানি আর ভারী যন্ত্রপাতির শব্দে কর্মমুখর পদ্মার পাড় পাশাপাশি অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ চলছে পুরোদুমে। এদিকে এ সেতুর কাজ পর্যবেক্ষণে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষঞ্জ দল এসেছিল । এই বিশেষঞ্জ প্যানেল সেতুটির দু’দিন ধরে বৈঠক করেন । যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে বিশেষজ্ঞ টিমের অপর বিদেশী সদস্য কানাডার অস্টেন ফিল্ট ও নেদারল্যান্ড সর কারবাজাল পথে হয়ে। জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ বাংলাদেশের পাঁচ জন এবং বিদেশী ৪ জন। মোট ৯ জনের এ টিম বৈঠকে ছিলেন। নতুন গতি পেয়ে পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞে দেশী-বিদেশী প্রৃায় য় ২০ হাজার কর্মীর নিরন্তর কাজ করছেন। ২০ হাজারের ১৮ হাজার বাংলাদেশী। আর দু’হাজার বিদেশীর। এর মধ্যে ৫শ’ রয়েছে বিদেশী নারী কর্মী। পালাক্রমে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে তারা। এই ২০ হাজারের বাইরে নিরাপত্তায় রয়েছে দু’পারে ২ হাজার সেনা সদস্য। এছাড়া পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনতো রয়েছেই।
এর আগে উপজেলার পদ্মা সেতুর প্রকল্পের সার্ভিস এরিয়ায় সভাকক্ষে সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিদের-বলেন ‘পদ্মা সেতু এখন স্বপ্ন নয়। এটি এখন দৃশ্যমান বাস্তব। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।’