একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত দু’টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটিকে নিষ্ক্রিয় করেছে সরকার।
ট্রাইব্যুনাল-১ সক্রিয় রেখে ট্রাইব্যুনাল-২ নিষ্ক্রিয় করার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) প্রজ্ঞাপন জারি করে ট্রাইব্যুনাল-১ পুনর্গঠন এবং এর চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নাম ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।
আইন সচিব বলেন, এখন মামলা কম। তাই দুই নম্বর ট্রাইব্যুনাল নিষ্ক্রিয় রাখা হচ্ছে, তবে বাতিল হচ্ছে না। সরকার চাইলেই আবার সক্রিয় করা যাবে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর দু’টি বিধি সংশোধন করা হয়েছে। দু’টি ট্রাইব্যুনালের মধ্যে একটি না থাকলে যেন একটিই অনুপস্থিত ট্রাইব্যুনালের কাজ করতে পারেন, এমন বিধান রেখে বিধি দু’টি সংশোধন করা হয়।
এ বিধি সংশোধনের পর বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল-২ নিষ্ক্রিয় করল সরকার।
স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়। মামলার সংখ্যা বাড়ায় এবং বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তিন সদস্যের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় ২০১২ সালের ২২ মার্চ।
রাজধানীর পুরনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত হয়েছে ট্রাইব্যুনাল এবং ধানমণ্ডির সেফহোমে রয়েছে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়।
দুই ট্রাইব্যুনাল মিলিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত ২১টির রায় দিয়েছেন, যেগুলোতে ২৪ যুদ্ধাপরাধীর সাজা ঘোষিত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে দু’জনের ফাঁসির রায় কার্যকরও হয়েছে। একটি মামলায় অভিযুক্ত বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে মারা যাওয়ার কারণে মামলাটির নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
বর্তমানে একটি মামলার দু’জনের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম চলছে ট্রাইব্যুনাল-১ এ। তদন্ত শেষ হয়ে চার মামলায় গ্রেফতারকৃত ও পলাতক ২৮ জনের বিচার শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া আরও ২৩ মামলায় ৫৬ জন আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন তদন্ত সংস্থা।
দলবদ্ধ যুদ্ধাপরাধের বিচারে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনও জমা আছে প্রসিকিউশনে, আইন সংশোধিত হলে যার ভিত্তিতে দলটির বিচার শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
সবমিলিয়ে ৫০ মামলায় মোট ১১৩ ব্যক্তি এবং দলগতভাবে জামায়াতকে বিচার অথবা তদন্তের মুখোমুখি করা গেলেও এখন পর্যন্ত ৬১৮ মামলায় ৩ হাজার ৩শ’ ৭৬ জন আসামির নাম এসে জমেছে ট্রাইব্যুনালে।