২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | রাত ৩:৪৭
টঙ্গীবাড়ী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
খবরটি শেয়ার করুন:

টঙ্গীবাড়ী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামান ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শাহআলম এর বিরুদ্ধে দায়ের করা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ গুলোর তদন্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রাথমিক সহকারী ২ শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও ফেরদৌসি বেগম এ সমস্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয় গুলো তদন্ত করতে আসেন। এর আগে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় ৪বার স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া টঙ্গীবাড়ী শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামান এর বিরুদ্ধে সম্প্রতি ২৭টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ডিজি অফিস, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক, মুন্সীগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবরে উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ অভিযোগ দায়ের করেন।
পরে শিক্ষা কর্মকর্তা তার বিরদ্ধে দায়ের করা অভিযোগগুলো ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সে প্রতি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বাধ্য করে সে কোন দুনীতি করেনি বলে একটি কাগজে লিখিত আকারে স্বাক্ষর আদায় করে নেয়।

হিটলারুজ্জামান এর বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ গুলোর জন্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলমকে দায়ী করে কামারখাড়া বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেন এবং মুলচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লিপিকে দিয়ে সহকারী শিক্ষা সৎ কর্মকর্তা শাহ আলম দুনীতি করছে বলে জোড় করে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে অভিযোগ দায়ের করান। লিপি তার অভিযোগ তুলে নিতে চাইলেও শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে এ অভিযোগ তুলতে দিচ্ছেনা। এই সমস্ত অভিযোগের পর হতে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য শিক্ষা অফিসের কার্যক্রম বন্ধ রেখে বিভিন্ন দপ্তরে হিটলারুজ্জামান দৌড়ঝাপ দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত ১৬ জুন ২০১৪ খ্রি: তারিখে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসাবে যোগদানের পর হতে হিটলারুজ্জামান এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পাক প্রাথমিক সমাপনি পরিক্ষায় টাকার বিনিময়ে বৃত্তি বিক্রি, জিপিএ-৫বিক্রি, শিক্ষকদের উন্নায়ন পরিকল্পনার ফান্ডের টাকা, ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা, টয়লেট মেরামত, ডাস্টবিন ক্রয় করার টাকা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল ক্রয়ের টাকা, শিক্ষকদের উন্নায়ন ফান্ডের টাকা আতœসাৎ, টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় ৬শত শিক্ষক থাকলেও ৬শত ৫০জন শিক্ষকের নামে বেতন আদায়, কিছু বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস না করে বেতনের অর্ধেক টাকা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিয়ে স্কুলে ক্লাস না করে বেতন উত্তোলনসহ মোট ২৭টি বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

পাক প্রাথমিক সমাপনি পরিক্ষায় বৃত্তি বিক্রি ও এ প্লাস বিক্রি নিয়ে অভিবাবকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে পুড়ো উপজেলা জুড়ে তুলকলাম সৃষ্টি হলেও সুচুতুর শিক্ষা কর্মকর্তা কৌশলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে আসছেন। মেধাবী শিক্ষার্থীরা বৃত্তি না পেয়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী শিক্ষার্ত্রীরা বৃত্তি পাওয়ায় অভিবাবকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় শিক্ষা কর্মকর্তা ২০-৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে কম মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের অভিবাবকদের কাছে বৃত্তি বিক্রি করেন। এ ছাড়া ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে চলে এ+বিক্রি। আর এ কাজে সহযোগী হিসাবে কাজ করেন উপজেলার ধামারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আসলাম ও চাপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আরিফ হোসেন ।
এদিকে গত ২৩/০৩/১৫ খ্রি: তারিখে মদসহ গুলসান থানায় গ্রেফতার হওয়া হিটলারুজ্জামান অফিসে অনিয়ম ও দুর্নীতির বাইরেও একাধিক অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

এ শিক্ষা কর্মকর্তা এই উপজেলায় যোগদানের পর হতেই শিক্ষা কার্যক্রমের উন্নায়ন না করে দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে নেশা করে সময় কাটাচ্ছেন বলে একাধিক সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া স্কুল পরিদর্শনের নামে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে অনিয়ম তুলে শিক্ষকদের নিকট হতে টাকা আদায় করে সে অহরহ। উপজেলার কতিপয় দুনীতিবাজ শিক্ষককে সাথে নিয়ে হিটলারুজ্জামান গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির এক মহা সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে সহকারী ৪ শিক্ষা কর্মকর্তা মুখ খুলে কথা বলার সাহস পাচ্ছেনা। শিক্ষা কর্মকর্তার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা শিক্ষা কর্মকর্তা সিন্ডিকেটের শিক্ষকদের হাতে একাধিকবার লাঞ্চিত হয়েছেন। খোদ শিক্ষা অফিসের ভিতরে বিভাজনের কারনে শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রুপ ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে দ্বদ্ধ ও সংঘাতের কারনে উপজেলার শিক্ষকবৃন্দ দুটি গ্রুপের বিভক্ত হয়ে পড়েছে। অসহায় নিরহ শিক্ষকরা প্রতিবাদী হয়ে উঠায় গ্রুপিং ও লবিংয়ে বিঘœ হচ্ছে পাঠদান। প্রভাব পড়ছে কোমলমতি শিশুদের উপর।

এ ব্যাপরে চাপ সহকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফ হোসেন জানান, আমার উদ্ধতন কর্মকর্তা শিক্ষা অফিসার আমায় মোবাইল করে তার সাথে বিদ্যালয় পরিদর্শনে যেতে বলায় আমি তার সাথে বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শনে যেতে বাধ্য হয়েছি। তবে তাদের মাধ্যমে শিক্ষকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে টাকা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন সে। এর আগে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার শিক্ষা অফিসার থাকা অবস্থায় হিটলারুজ্জাম ৩৯টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী নিয়োগের মাধ্যমে ২০লক্ষ টাকা আদায় করেন।
গত ১২ মার্চ ২০১৪খ্রি: তারিখ রাত ৮টার দিকে দিনাজপুর জেলার বিরামপুরে ২ কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগে বিক্ষুদ্ধ জনতা তাকে গণধোলাই দেয়।

পরে আইন শৃঙখলা বাহিনী তাকে উদ্ধার করে। এদিকে নীলফামারী সদর উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় সে ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষার শিক্ষক কর্মচারীদের সন্মানী ভাতার ১লাখ ৯হাজার ৮৩৬টাকা আতœসাৎ ওই উপজেলার ১৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের বরাদ্দকৃত ৩০হাজার টাকা করে বিতরণের সময় ১৬৭টি বিদ্যালয় থেকে ভ্যাটের নামে ৪ লাখ ১৮হাজার টাকা আদায় করে বরাদ্দের সাড়ে ৪ শতাংশ হিসেবে ২ লক্ষ ৪৫হাজার ৭০০ টাকা ভ্যাট জমা করে বাকি ১ লাখ ৭২হাজার ৩শত টাকা পকেটস্থ করেন। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বাংলাদেশের একাধিক জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হলেও হিটলারুজ্জামান এখোনো টঙ্গীবাড়ী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসাবে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসি বেগম জানান, তদন্তের সময় উপজেলার কতিপয় শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছে বলে দাবী করলেও শিক্ষা কর্মকর্তাদ্বয় তা অস্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে হিটলারুজ্জামান এর মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করা হলে পরে কথা হবে বলে সে রেখে দেন।

error: দুঃখিত!