মুন্সিগঞ্জ, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
২০০৮ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এমিলি পার করেছেন আরও দুইটি নির্বাচন। এই তিনটি নির্বাচনে দেওয়া এমিলির হলফনামা ও সর্বশেষ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পূর্বের তুলনায় সংসদ সদস্য হওয়ার পর এমিলির জমি-জমা ও সম্পদ বেড়েছে।
নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার আগে ব্যবসা থেকে এমিলি বাৎসরিক আয় করতেন ৮ লাখ ৪৮ হাজার ৬০০ টাকা। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৩ সালেও এমিলির ব্যবসা থেকে কোন আয় নেই। কিন্তু ২০১৮ সালে বাড়ি/অ্যপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া বাবদ এমিলির আয় বলা হয়েছে ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ ও ২০২৩ সালে ৮ লাখ ৪৭ হাজার ২১০ টাকা আয় তার।
২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে এমিলির কোন জমিজমা ছিলো না। শুধু তার রাজধানীর লালমাটিয়ার নাখালপাড়ায় ২৩ লাখ ২১ হাজার টাকা মূল্যের ২টি ফ্ল্যাট ছিলো। কিন্তু সংসদ সদস্য হওয়ার পর ২০১৪ সালে লালমাটিয়ায় স্বামীর দুইটি ফ্ল্যাট ছাড়াও নিজের নামে ৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা মূল্যের ৩৯.৫ শতাংশ জমি ও ২১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ কাঠার প্লটের মালিক হন তিনি।
২০১৮ সালে ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫০ টাকা মূল্যের তার স্বামীর একটি অ্যাপার্টমেন্ট থাকার কথা হলফনামায় উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি এমিলির আগের সম্পদের সাথে উত্তরায় ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার মূল্যের একটি আবাসিক ভবন যোগ হয়।
প্রথমবার সংসদ সদস্য হওয়ার আগে ২০০৮ সালে এমিলির কোন কৃষি জমি ছিলো না। ২০১৪ সালে এমিলির নামে কৃষি জমি ছিলো ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে আগের জমির সাথে স্বামীর নামে ৩০ শতাংশ জমি যোগ হয়। আর ২০২৩ সালে দুজনের কৃষি জমি কমে শুধু এমিলির নামে ১৪ শতাংশ কৃষি জমির তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করা হয়।
২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে এমিলির কোন গাড়ি না থাকলেও ২০১৪ সালে দেখা গেছে এমিলি নিজের নামে ৬০ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮৮ টাকা মূল্যের ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি কিনেছেন। ২০১৮ সালে তিনি মডেল বদলে ৭১ লাখ টাকা দিয়ে ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮ গাড়ি নিয়েছেন। ২০২৩ সালের হলফনামায় যার দাম উল্লেখ করা হয়েছে ৯২ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
২০০৮ সালে ব্যাংকে এমিলির জমা ছিলো মাত্র ৩০ হাজার টাকা, স্বামীর নামে ৪৪ হাজার ৯৯৫ টাকা ও পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যদের নামে ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৯ টাকা। ২০১৪ সালে দেখা যায় নিজের নামে ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৮৩১ টাকা ও স্বামীর নামে ২ লাখ টাকা রয়েছে ব্যাংকে। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে এমিলির ব্যাংক ব্যালেন্সের পরিমাণ ৬৩ লাখ ৬৪ হাজার ২৬৮ টাকা। স্বামীর অ্যাকাউন্টে ছিলো ৩ লাখ ৭২ হাজার ২২৮ টাকা। ২০২৩ সালে এমিলির ব্যাংকে রয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ১৩৫ টাকা ও স্বামীর অ্যাকাউন্টে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ১২৬ টাকা।
২০০৮ ও ২০১৪ সালে এমিলির নামে কোন বন্ড বা শেয়ার ছিলো না। তবে আট সালের হলফনামায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড ও ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬২ টাকার শেয়ার এবং ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সঞ্চয় পত্র, ২০১৪ সালে ৩৭ লাখ টাকার সঞ্চয় পত্র ও ২০১৮ সালে ৮৪ লাখ ৯৬ হাজার ১৫২ টাকার শেয়ার ও ৯ লাখ টাকার বন্ড ছিলো এমিলির স্বামীর নামে। এছাড়া পরিবারের নির্ভরশীলদের নামে ছিলো আরও ৫০ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত।
একইবছরের হলফনামায় দেখা যায় এমিলি ৪ হাজার ৫০০ টাকার শেয়ারের মালিক হয়েছেন। আর সঞ্চয় পত্রে বিনিয়োগ করেছেন ৬লাখ টাকা। পাশাপাশি তার স্বামীর স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ৫৩ লাখ ২৪ হাজার ৫৫০ টাকা।
২০২৩ সালে এমিলির নামে শেয়ারের পরিমাণ ৫ লাখ ১৫ হাজার ৫৫৭ টাকা ও তার স্বামীর শেয়ার ৯৭ লাখ ২৩ হাজার ৩০৫ ও বন্ড রয়েছে ২ লাখ টাকার। তাছাড়া এমিলির সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ রয়েছে ৬০ লাখ টাকা। স্বামীর রয়েছে ৭৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও স্থায়ী আমানত রয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩২ টাকা।
২০০৮ সালে এমিলির কাছে নগদ টাকা ছিলো ১১ লাখ ১৮ হাজার ৬০০ টাকা, স্বামীর কাছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮১৮ টাকা। ২০১৪ সালে এমিলির নগদ টাকা ছিলো ৫ লাখ ২৪ হাজার ৭৯১, স্বামীর কাছে ৮ লাখ ৫০ হাজার। ২০১৮ সালে ছিলো ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা, স্বামীর ৩ লাখ ১০ হাজার। ২০২৩ সালে এমিলির কাছে নগদ রয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৪৯১ টাকা ও তার স্বামীর কাছে রয়েছে ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩ টাকা।
উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন: ২০০৮-২০২৩
পদ্মা নদী তীর রক্ষায় লৌহজং-টংগিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৪৮০ কোটি টাকা ব্যায়ে পদ্মা নদীর বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ, ২০০ কোটি টাকা ব্যায়ে দুই উপজেলায় ৩৭০কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ২১০ কোটি টাকা ব্যায়ে এলজিইডি ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১৭০টি ব্রিজ, কালভার্ট এবং ৪০০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, ৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে ৭০০ কিলোমিটার পল্লী সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, জাতীয় প্রাথমিক ও জে এস সি পর্যায়ে পাশের হার ৬৩ তম থেকে ৫ম স্থানে উন্নতি, ২০০টি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসা ভবন নির্মাণ, ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, উপজেলা ভিত্তিক আইটি সেন্টার ও শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব নির্মাণ, টংগিবাড়ীতে মেরিন টেকনোলজি ইন্সটিটিউট ও কৃষি বীজ হিমাগার নির্মাণ, টংগিবাড়ী ও লৌহজংয়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্প গ্রহণ, ১৬৫৬ জন মহিলাকে মাতৃত্বকালীন ৮০০ টাকা করে ভাতা প্রদান, ২৭৪৫ জন মহিলাকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে ভিজিডি চাউল প্রদান, সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে আনুমানিক ২ হাজার নারীর কর্মসংস্থান, ৪৭ হাজার ৪১৬ জন কৃষককে বীজ, সার ও কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় (বছরে ৫ মাস) ৩০ কেজি করে ১৫ টাকা দরে ৮ হাজার ৫০ জনের মাঝে চাউল বিতরণ, ১ হাজার ৩০০ জনকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান। ১৬ কোটি টাকা ব্যায়ে ৮টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণ, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ২৮৫টি ঘর নির্মাণ। পদ্মা সেতু নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য ৪টি পদ্মা সেতু পুনর্বাসন প্রকল্প নির্মাণ, ১৭ হাজার ৮০০ জনের মাঝে বয়স্ক ভাতা ৬ হাজার ৯০০ জনকে বিধাব ভাতা ও ৪ হাজার ৪০৮ জনকে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান। লৌহজং কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রুপান্তর ও ২টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুকরণ, টংগিবাড়ী বিটি কলেজকে ডিগ্রিতে উন্নতিকরণ, আড়িয়ল নামে নতুন ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা, লৌহজংয়ে নতুন থানা ভবন ও ফায়ার সার্ভিস নির্মাণ।