৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | রাত ৮:০০
আব্দুল হাই-মহিউদ্দিন এর কাছে জিম্মি মুন্সিগঞ্জ বিএনপি
খবরটি শেয়ার করুন:

কয়েক যুগ ধরে বিএনপি জেলা সভাপতি আব্দুল হাই ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো মহিউদ্দিন নীতিনির্ধারকের দ্বায়িত্ত্ব পালন করছে । বলতে গেলে মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপি এখন তাদেরই কন্ট্রোলে । ওয়ার্ড কমিটি থেকে শুরু করে যে কোন সাংগঠনিক কর্মসুচিতে তাদের পদচারনা না থাকলে সেটি আর সফলতার মুখ দেখেনা । তারা জেলা বিএনপির হর্তাকর্তা বনে যাওয়ায় দলীয় কোন কর্মসুচি তাদের ছাড়া সফল হয় না । তবে দলের এই নাজুক অবস্থায় ব্যবসায়িক কাজ নিয়ে জেকে বসেছেন জেলা বিএনপির কর্নধার আব্দুল হাই।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন শারীরিক অসুস্থতা থাকা সদ্য গঠিত উপজেলা বিএনপি পুনরায় নির্বাচিত সভাপতি মো মহিউদ্দিন দলীয় কোন কর্মসুচিতে অংশ নিতে পারছেনা । তাদের এই শক্তিশালী বন্ড ভেঙ্গে ঢুকতে পরছেনা অনেক শীর্ষ স্থানীয় নেতারাও

এই থেকে জেলা বিএনপিতে অন্তঃদ্বন্দ পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। কোন্দলের কারণে নেতাকর্মীরা কয়েক ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ছে। এর ফলে দল সাংগঠনিকভাবে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে কঠোর মনিটরিং না থাকায় মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। যার প্রভাব পড়ে বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে। ঢাকার প্রবেশদ্বারখ্যাত এ জেলাটি আন্দোলনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। এতে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হন কেন্দ্রীয় নেতারা।

 

২০১৪ সালের ২৮ মে খালেদা জিয়ার একটি জনসভা ছাড়া এ জেলায় এখন পর্যন্ত বিএনপির বড় ধরনের কোনো সভা-সমাবেশ হয়নি। জেলা-উপজেলা কমিটির সভাও নিয়মিত হয় না। দীর্ঘদিন পর ১১ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে কার্যকরী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে। এ নিয়ে উপস্থিত অনেক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপি আজ এতই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে সভা করতে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। সভায় জেলা পর্যায়ের নেতারা বলেন, আগামী আন্দোলনে যারা মাঠে নামতে পারবেন তাদের দিয়েই কমিটি করতে হবে। আর যারা বিএনপির দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন না তাদের চিহ্নিত করে নতুন কমিটিতে স্থান না দেয়ার আহ্বান জানান। সভায় ঈদুল আজহার পর ইউনিয়ন কমিটি থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে জেলা কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুরোদমে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জেলা রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রাখতে নানা চেষ্টা চালান আবদুল হাই। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নেন নানা কৌশল। এ কৌশলের অংশ হিসেবে জেলা কমিটিতে তার বিরোধীদের বাদ দিয়ে নিজ অনুসারীদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেন। জেলা আহ্বায়ক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা চেম্বার্স অব কমার্সের সাবেক সভাপতি জি-নাইন গ্র“পের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী এম সামসুল ইসলামের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলামকে জেলা কমিটিতে রাখা হয়নি। দলে ঠাঁই হয়নি গজারিয়া উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম পিন্টু, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল হান্নান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গনি মাতবর, বিশিষ্ট শিল্পপতি শেখ জামাল, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন মুন্সি, প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন, শ্রীনগরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী আজিজুল হক লেবু কাজী, সিরাজদিখান বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সালাম সরকার, বিশিষ্ট শিল্পপতি মো. শমশের আলম ভূঁইয়া, লৌহজংয়ের সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর এপিএস অধ্যক্ষ শাহজাহান বেপারী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ফুকু, সদর উপজেলায় মিরকাদিম পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হোসেন রেনুর।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী এম শামসুল ইসলাম অনেকটা অভিমান করেই জেলার রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছেন। আর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ সাবেক প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা জেলার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তার নির্বাচনী এলাকার বাইরে কোনো রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান না। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপুসহ আরও কয়েকজন স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গড়ে ওঠেছে আলাদা সমর্থকগোষ্ঠী। ফলে দিন যত যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল তত বাড়ছে।

সম্প্রতি সিরাজদিখানের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস ধীরন, সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট শিল্পপতি শেখ মো. আবদুল্লাহকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে জেলা বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নতুন মোড় নেয়। এ বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে সিরাজদিখানের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ কর্মসূচি, হামলাপাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান সিনহার গাড়িতে হামলা হয়। এসব ঘটনায় সিরাজদিখানে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই নাজুক। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও দুই গ্র“প পাল্টা কর্মসূচি পালন করে। জেলা কমিটির বহিষ্কার কার্যক্রম অগঠনতান্ত্রিক হওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহেরর জন্য জেলা কমিটিকে নির্দেশ দেয়।

error: দুঃখিত!