মুন্সিগঞ্জ, ১ মে, ২০২০, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
১লা মে বিশ্ব শ্রমিক দিবস বা মে দিবস। শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদের দিন। মে দিবস হাজার হাজার শ্রমিকের পথ চলা মিছিলের কথা, একই পতাকা তলে দাঁড়িয়ে আপোষহীন সংগ্রামের কথা। মে দিবস দুনিয়ার সব শ্রমিকদের এক হওয়ার দিন।
‘‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য / ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা, / চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য /কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া। /চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ, / গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে, /তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য /জীবনকে চায় ভালবাসতে।’’—-
বর্তমান এই কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার এই পঙক্তিগুলো যেন কানে বেজে ওঠে। সারা পৃথিবী আজ ভয়ঙ্কর এক সমস্যার মুখোমুখি, মানুষ আজ ঘরবন্দি, এক অতি ক্ষুদ্র অণুজীবের কারণে। সারা দেশ আজ স্তব্ধ, রাস্তাঘাট শুনশান, ব্যবসা বন্ধ, কর্মহীন মানুষ; সারা দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। এর মাঝেই আজ সেই বিশেষ দিন, যে দিনটা প্রত্যেক বছর পালিত হয় শুধুই শ্রমিকদের দিন হিসেবে। তাঁদের সারা বছর কাটে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে। একটি দিন সেই কাজ থেকে ছুটির দিন। এই সময়ে অবশ্য প্রতিদিনই তাঁদের কাছে কর্মহীন, বেকার হয়ে ঘরে বসে থাকার দিন। আজ বিশ্ব শ্রমিক দিবস বা মে দিবস।
প্রতি বছর সারা বিশ্বে এই দিনটি পালিত হয় প্রতীকী দিন হিসেবে। শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদের দিন হিসেবে। মে দিবস হাজার হাজার শ্রমিকের পথ চলা মিছিলের কথা, একই পতাকা তলে দাঁড়িয়ে আপোষহীন সংগ্রামের কথা। মে দিবস দুনিয়ার সব শ্রমিকদের এক হওয়ার দিন। আন্তর্জাতিক সংগ্রাম আর সৌভ্রাতৃত্বের দিন। মে দিবস শ্রমজীবী মানুষের কাছে জাগরণের গান, সংগ্রামের ঐক্য ও গভীর প্রেরণা।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা শ্রমজীবী মানুষসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বিশ্বব্যাপী নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়াল থাবা আঘাত এনেছে। ফলে গভীর সংকটে পড়েছে শিল্প-প্রতিষ্ঠানসহ দেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ। এ পরিস্থিতিতে সরকার জনগণের পাশে থেকে ত্রাণকাজ পরিচালনাসহ সর্বাত্মক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক এবং মালিক উভয়েই সু-সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কল-কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধিতে আরও নিবেদিত হবেন। শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য শ্রমিক কল্যাণ গঠন করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রতিঘাত মোকাবিলায় দেশের রপ্তানি খাতের শ্রমিকদের বেতন দিতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মহান মে দিবস শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের চরম আত্মত্যাগে ন্যায্য অধিকার আদায়ের এক অবিস্মরণীয় দিন। প্রতি বছর নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে দিনটি পালিত হলেও এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় এ ভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতে এবছর সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে এক বার্তায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, বৈশ্বিক এ মহামারির মধ্যে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক মালিকরা প্রয়োজনে কারখানা খোলা রাখবে। তবে অবশ্যই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতর, সংস্থা যেমন-শিল্প পুলিশ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে সরকার অবশ্যই সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।