১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
মঙ্গলবার | বিকাল ৫:০৯
আজ প্রথম আলু দিবস
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৩০ মে ২০২৪, ডেস্ক রিপোর্ট (আমার বিক্রমপুর)

আজ ৩০ মে প্রথম আলু দিবস। খাদ্য এবং কৃষি সংস্থার (এফএও) সমর্থনে এই দিনটি প্রতিষ্ঠা করে জাতিসংঘ। মূলত পুষ্টিগুণ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আলুর তাৎপর্যপূর্ণ সুবিধাগুলো বিশ্বব্যাপী মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতেই এ সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া দিনটি কর্মসংস্থান এবং আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আলুর অবদানকে স্বীকৃতি দেয়।

এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ফসল বৈচিত্র্য, আশার ভরসা’।

ইতিহাসবিদদের মতে, আলু সর্বপ্রথম আন্দিজ পর্বতমালায় বসবাস করা ইনকা সভ্যতার মানুষেরা খাওয়া শুরু করে। প্রায় ৮০০০ বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালার চূড়ায় সর্বপ্রথম পেরুভিয়ানরা আলুর চাষ শুরু করে।

বাংলাদেশের যে কয়টি জেলায় সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয় তার মধ্যে প্রথম তিনে রয়েছে মুন্সিগঞ্জ জেলা। এ জেলায় প্রতিবছর গড়ে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়।

২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী আলু দিবস পালনের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর ৩০ মে বিশ্ব আলু দিবস পালন করা হবে। সে হিসেবে এবার প্রথমবার এটি পালন করা হচ্ছে।

দিনটিকে স্বীকৃতি দিতে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে পেরু এবং ইন্টারন্যাশনাল পটেটো সেন্টার (সিআইপি)। পেরুতে আলুর হাজারো জাতের চাষ হয়।

দক্ষিণ আমেরিকার ইন্ডিয়ানা জাতির কাছে আলু ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা আলুকে কামাটা বা বাটাটা বলতো। ধারণা করা হয় এখান থেকেই আলুর ইংরেজি নাম পটেটো এসেছে। তারা আলু দিয়ে এক ধরনের পানীয় বানিয়ে খেত, যা অনেকটা বিয়ারের মতো স্বাদের। এছাড়া এই অঞ্চলের মানুষই আলু দিয়ে নানান ধরনের খাবার তৈরি করা শুরু করে। এমনকি বাণিজ্যিকভাবে আলু চাষও শুরু করেছিলেন ইন্ডিয়ানারা।

ধীরে ধীরে পুরো দক্ষিণ আমেরিকায় আলু জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে ইউরোপিয়ানরা আলুর পানশে স্বাদের জন্য খুব একটা পছন্দ করত না। তারা আলুর গাছ বাড়ির বাগানে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য লাগাত। তবে ইউরোপের আবহাওয়ায় আলুর মানিয়ে নিতে সময় লেগেছিল ২০০ বছর।

ইউরোপে আলুর আগমন ঘটে স্পেনের নাবিকদের হাত ধরে। ইউরোপে উচ্চবিত্তদের কাছে আলু পানসে সবজি হলেও সহজলভ্য হওয়ায় নিম্নবিত্তরা আলুকে বেশ দ্রুত সাদরে গ্রহণ করেছিল। ১৭৫০ এর শুরুর দিকে অত্যন্ত সহজলভ্য হওয়ায় মহামারির মাঝে এই অবহেলিত আলুই হয়ে ওঠে ইউরোপের একমাত্র সম্বল। এর ফলে অন্যান্য খাবারের অপ্রতুলতা সৃষ্টি হলেও আলুর কল্যাণে ধীরে ধীরে জনসংখ্যা স্বাভাবিক গতিতেই বাড়তে থাকে। আলু খেয়ে সন্তুষ্ট থাকা এসব কৃষক, শ্রমজীবী এবং সৈনিকদের কাধে চড়েই ব্রিটিশ,ডাচ এবং জার্মানদের মত পরাশক্তিগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

আয়ারল্যান্ডে আলু প্রবেশের পরপরই প্রায় ১৫৯০ থেকে ১৮৪৫ সালের মধ্যে তাদের জনসংখ্যা ১০ লাখ থেকে বেড়ে ৮০ লাখে দাঁড়ায়। আলুই হয়ে ওঠে তাদের মূল খাদ্যের উৎস। কিন্তু এর পরেই বাঁধে বিপত্তি। ১৮৪৫ থেকে ১৮৫২ সালের মধ্যে আলুর গাছে দেখা দেয় আলুর ভয়ংকর ব্লাইট রোগ। ইতিহাসে এটিকে একটি মারাত্মক মহামারি হিসেবে ধরা হয়। কেননা প্রায় ১০ লাখের বেশি আইরিশ তখন না খেতে পেয়ে মারা যায়। এছাড়া আরও ২০ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যেতে বাধ্য হয়।

১৯১০ সাল নাগাদ ইউরোপের শ্রমজীবী মানুষের পরিমাণ আবারও বাড়তে থাকে। শ্রমজীবী মানুষের এই বিশাল গ্রুপের খাদ্যের যোগান হিসেবে প্রচুর পরিমাণে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ইউরোপের নতুন গড়ে ওঠা ফ্যাক্টরিগুলো চালানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ দক্ষ জনবলের সৃষ্টি হয়। আর এই জনবলের হাত ধরেই পরবর্তীতে ইউরোপে আসে শিল্প বিপ্লব, যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যায় পুরো বিশ্বে এবং এই শিল্প বিপ্লবই আমাদেরকে এনে দিয়েছে আধুনিক সভ্যতা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সৈন্যদের প্রধান খাদ্য ছিল আলু। বাংলায় অর্থাৎ ভারতবর্ষে ৫০০ বছর আগে পর্তুগিজদের হাত ধরে আসে আলু। ২০ মে, সাল ১৪৯৮। এই দিনটিতে ভারতবর্ষের কালিকট বন্দরে পৌঁছান পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দ্য গামা। আবিষ্কার করেন ভারতবর্ষের সঙ্গে ইউরোপের সরাসরি জলপথ। পর্তুগিজরা ভারতবর্ষে এসেছিল ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে।

এখানকার মশলা ও রেশমের বেশ কদর ছিল ইউরোপে। কিন্তু সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় তাদের এসব কিনতে হতো আরব বণিকদের মাধ্যমে। এ মশলার বাজার ধরতেই পর্তুগিজদের আগমন ঘটে ভারতবর্ষে। তাদের হাত ধরেই বাংলায় আলু আসে। এখানকার আবহাওয়া এবং মাটি আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আলু চাষ করার প্রবণতা বাড়ে। সেই সঙ্গে ব্যাপক ফলনের কারণে দামও হয় হাতের নাগালে। সহজলভ্য হওয়ায় বাংলার কৃষকশ্রেণি এবং নিম্নবিত্তদের নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় স্থান পায় আলু।

error: দুঃখিত!