৯ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শনিবার | রাত ১০:৫৯
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
‘লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে দেয়া’র ঘটনাটি শিশুদেরই সাজানো
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

সারাদেশে আলোড়ন তোলা ভাড়ার অযুহাতে ‘লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে দেয়া’র ঘটনাটি শিশুদেরই সাজানো বলে জানিয়েছে ঐ শিশুরাই।

গতকাল সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হওয়া শিশু মেহেদুল (১৩) এবং পরে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে উদ্ধার হওয়া অপর দুই শিশু সিয়াম (১৩) ও তরিকুল (১০) নিজেরাই কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বিষয়টি বলেছে।

তারা বলছে, ঘটনার পর থেকে মুল পরিকল্পনাকারী তাদের বন্ধু সাকিব (১৩) যাকে ঐদিন মেহেদুল (১৩) এর সাথে পুলিশ নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেছিলো সে তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে।

ঐ শিশুরা বলছে, ঢাকার সদরঘাট থেকে গত শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টা’র দিকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ‘ইমাম হাসান-৫’ লঞ্চে উঠে তারা ৪ বন্ধু। মূলত তারা লঞ্চে পানি বিক্রি সহ নানা কাজ করে থাকেন। লঞ্চটি মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে ভিড়ানোর কথা ছিলো অথবা তারা মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটের কাছাকাছি ট্রলারে নেমে যাবেন বলে পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু লঞ্চটি মুন্সিগঞ্জে না থামলে ও ট্রলারে নামতে ব্যর্থ হলে তাদের বন্ধু সাকিবের পরিকল্পনায় মেঘনা নদীর গজারিয়া অংশে অপর ৩ বন্ধু মেহেদুল, সিয়াম ও তরিকুল মিলে লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাপ দেন তারা। একই সময়ে গজারিয়া থানা পুলিশের ওসি রইছ উদ্দিন স্পিডবোট যোগে সরকারি কাজে মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার পথে মেহেদুল (১৩) ও সাকিব (১৩) কে নদীতে ভাসতে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হন। পুলিশ দেখে সাকিব (১৩) মেহেদুল (১৩) কে ‘লঞ্চ থেকে ফেলা দেয়া হয়েছে’ বলতে শিখিয়ে দেন।

পরে তাদের নিয়ে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে আসলে বাকি দুইজন- সিয়াম (১৩) ও তরিকুল (১০) কে পাওয়া যায়। তারা অন্য নৌযানের সহায়তায় মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে আসে বলে ঐ সময় জানায়। পরে তাদের ৪ জনের শারীরিক অবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়ে শুকনো খাবার কিনে দিয়ে ঢাকা-সদরঘাটগামী এমভি আল-বোরাক লঞ্চে উঠিয়ে দেন ওসি।

পরে নদী থেকে উদ্ধার হওয়া মেহেদুল (১৩) ও সাকিব (১৩) এর একটি ভিডিও জবানবন্দি ‘গজারিয়া থানা, মুন্সিগঞ্জ’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে আপলোড করা হয়। সেখানে গজারিয়া থানার ওসি রইছ উদ্দিনের কাছে ঐ শিশুদের ভাড়ার টাকার জন্য লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করে শিশুরা। এ নিয়ে দেশ ও বিদেশের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে লঞ্চের স্টাফদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ। গতকাল ঐ শিশুদের সদরঘাট এলাকায় পাওয়া গেলে মূল ঘটনা জানতে চাইলে তারা এসব তথ্য জানান।

‘ইমাম হাসান-৫’ লঞ্চের মাস্টার দোলোয়ার হোসেন বলেন, পানি ও রুটি বিক্রি করা বাচ্চাদের কাছ থেকে এমনিতেই কখনো ভাড়া নেয়া হয় না। ভাড়ার জন্য নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনাটি সত্য নয়।

সাকিব নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার আবুল কাশেমের ছেলে, মেহেদুল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার চাঁনপুর গ্রামের মো. শরীফের ছেলে, সিয়াম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার খামার বদুয়া গ্রামের ইমাম হোসেনের ছেলে এবং তরিকুল কুমিল্লার মুন্সীরহাট গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।

অন্যদিকে চার শিশুকে নদীতে ফেলে দেয়ার অভিযোগে লঞ্চটির অজ্ঞাত স্টাফদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করে পুলিশ। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন মুক্তারপুর নৌ-পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ লুৎফর রহমান।

নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের নৌ পুলিশের এসপি মিনা মাহমুদা বলেন, এ ঘটনায় যে মামলাটি হয়েছে সেটি তদন্তনাধীন রয়েছে। সত্য-মিথ্যা যাঁচাই শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। লঞ্চের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।

error: দুঃখিত!