মুন্সিগঞ্জ, ১ এপ্রিল ২০২৩, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ সদরের মোল্লাকান্দির যুবক তুহিনকে পিটিয়ে হত্যার দুই সপ্তাহেও গ্রেপ্তার হয়নি কোন আসামি। এরই মধ্যে প্রথমসারির ১৬জন আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কোন তৎপরতা নেই অভিযোগ করে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার।
পরিবারের অভিযোগ, আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। তবে অভিযোগ প্রত্যাখান করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বলছে, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়তে পারেন: কল্পনা-রিপনের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে প্রাণ গেল তুহিনের!
গেল ১৪ মার্চ সকালে রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে মুন্সিগঞ্জ সদরের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বড় মোল্লাকান্দি এলাকার আলমগীর সরকারের ছেলে শাহ আলম সরকার তুহিনের (২২) মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, আগেরদিন সন্ধ্যায় উপজেলার পুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে বালুর মাঠে দুবৃত্তদের কাছে বেধড়ক মারধরের শিকার হন তুহিন। মারধরে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়তে পারেন: মোল্লাকান্দির তুহিনকে পিটিয়ে হত্যা, আ. লীগ নেতাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নিহত তুহিন মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে বিবদমান আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যকার বর্তমান চেয়ারম্যান রিপন হোসেনের সমর্থক। অপর পক্ষে রয়েছেন ইউনিয়নটির সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক কল্পনা। তুহিন হত্যাকান্ডের ঘটনায় কল্পনা পক্ষের লোকজন দায়ী বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করছেন নিহতের বাবা আলমগীর সরকার।
তুহিনের মৃত্যুর ৪ দিন পর টংগিবাড়ী থানায় মহসিনা হক কল্পনা সমর্থক মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাহার মোল্লা ছাড়াও ২৫ জনের নামোল্লেখ করে নিহত তুহিনের বাবা আলমগীর সরকার হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শওকত দেওয়ান, যুবদল নেতা জিয়া সরদার ও নোয়াদ্দা এলাকার বাবু কাজি। আসামিরা সকলেই মোল্লাকান্দিতে বিবদমান আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যকার সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক কল্পনার সমর্থক।
নিহত তুহিনের বাবা ও মামলার বাদী আলমগীর সরকার অভিযোগ করে বলেন, পুলিশকে বারবার বলার পরও কোন কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করছে না। আসামিরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় রয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জন আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছে। বাকিরাও জামিনের চেষ্টা করছে। এভাবে যদি চলতে থাকে সমাজ থেকে একদিন ন্যায়বিচার উঠে যাবে।
তুহিনের মামা ইতালি প্রবাসী বিকল্প ছাত্রধারা কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি আরিফ হোসেন মিলন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তুহিনের ইতালি চলে আসার কথা ছিলো। ওর পাসপোর্টও ইতালি দূতাবাসে জমা দেয়া। কিন্তু পাষন্ডরা তুহিনকে পিটিয়ে হত্যা করলো। কোন আসামিও ধরা পড়লো না। আমরা কি তাহলে ন্যায়বিচার পাবো না?
মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন হোসেন বলেন, কিভাবে মোল্লাকান্দিতে ঝগড়া থামবে? আমার পক্ষের একটা লোককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো। এখনো পর্যন্ত কোন আসামিকে পুলিশ ধরতে পারলো না। একজন স্বাভাবিক মানুষ খুন হলেও পুলিশের ন্যুনতম তৎপরতা থাকে। কিন্তু মোল্লাকান্দির মত বিরোধপূর্ণ জায়গায় রাজনৈতিক কারনে একটা মানুষকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হলো কিন্তু পুলিশের কোন তৎপরতাই নেই। তার অভিযোগ, মামলাটির পেছনে প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক মহলের হাত রয়েছে।
এসব বিষয়ে টংগিবাড়ী থানার ওসি রাজিব খান বলেন, আসামিদের মধ্যে ১৬ জন সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসেছেন বলে জেনেছি। বাকি যে ৯ জন রয়েছেন তারা বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ তিনি প্রত্যাখান করেন।