চাঁদপুর ও বরিশালের সীমান্তবর্তী মেঘনা নদী ঘেরা হাইমচর আর হিজলায় অবাধে নদীর তীর কেটে মাটি ইটভাটায় বিক্রি হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন নদীর পাড় ভাঙছে, তেমনি ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী দস্যু এই মাটি বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বরিশালের হিজলা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ তারেক হাওলাদার নদীতীরের মাটি কাটা বন্ধে টাস্কফোর্সের সমন্বয়ে অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে, হিজলায় প্রায় ৬০টি ইটভাটার অধিকাংশই অবৈধ। যদিও এ বিষয়ে কোনো দায় নিতে চাচ্ছে না হিজলার বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর।
উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের মেঘনা বাজার এলাকার ১০০ ফুট দূরে নদীতীরে ১৫ থেকে ২০টি ট্রলারে একযোগে মাটি কেটে নিতে দেখা গেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইসমাইল হোসেন মাস্টারের ভাই মো. মান্নান এই মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।
প্রায় চার একরের ওই চরে ধান চাষ হয়। ধান কাটার আগেই অনেক জায়গায় মাটি কাটা শুরু করেছিল । সেখানকার শ্রমিকেরা জানান, মান্নান নিজের জমি দাবি করে প্রতি ফুট মাটি ৬০ পয়সা করে ইটভাটার মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন। যদিও এই বিশাল চর খাসজমি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইটভাটা চালুর মৌসুমে উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর, কাইসমা, হরিনাথপুর ইউনিয়নের গঙ্গাপুর, নাছোকাঠি, হিজলা গৌরবদী ইউনিয়নের দেবুয়া, জানপুর, গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের ঘোষের চর, কোলচরের নদীর তীর এবং ফসলি জমি কেটে নেওয়া হচ্ছে।
বড়জালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইউএনও বলেছেন, যেকোনোভাবে নদীর তীরের মাটি কাটা প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড এবং থানা-পুলিশের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হিজলা প্রেসক্লাব সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ও মেমানিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বলেন, ইটভাটাগুলো গাছপালা কেটে উজাড় করছে। ভাটায় ইট তৈরির জন্য অপরিকল্পিতভাবে নদীর তীর ও ফসলি জমিতে মাটি কেটে নিচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে ইউএনও মোহাম্মদ তারেক হোসেন হাওলাদারকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন ঢালি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি মাটি কাটলে আমরা কী করতে পারি? ইউএনও মাসিক সভায় বলেছেন, নদীর তীরের মাটি কাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন।’ উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, হিজলায় মাত্র ১০টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। বাকি সব অবৈধ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, ‘নদীর তীর তো কেটে নিয়েই যাচ্ছে, আমরা কী করব? নদীর মালিক যারা, তারা বিষয়টি দেখবে।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের এ বিষয়ে দায় আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হিজলায় ৮০ ভাগ ইটভাটাই অবৈধ। তারা এগুলোর তালিকা করেছে। উচ্ছেদ শুরু হলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিগত দিনে দেখা গেছে, বরিশালের হিজলায় অভিযান শুরু হলে ওই মাটি দস্যুরা চাঁদপুরের হাইমচর অংশে চলে আসে। আবার চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন অভিযান শুরু করলে ওরা বরিশালের হিজলা অংশে চলে যায়। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে ওই মাটি দস্যুরা তাদের অবৈধ বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। কোস্টগার্ড এবং নৌ পুলিশের সহযোগিতায় দুই জেলা প্রশাসন সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করলেই এই মাটি দস্যুদের নিবৃত করা সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।