১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | সকাল ১১:৪২
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
মুন্সিগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়ম, তদন্ত কমিটি গঠন
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১ জুলাই, ২০২১, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে মুন্সিগঞ্জে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০০ ঘর নির্মাণে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে মুন্সিগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০০ ঘর নির্মাণে অনিয়মের চলমান তদন্তের মধ্যেই নির্মাণ শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ না করে সদর উপজেলার বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হামিদুর রহমান শ্রমিকদের প্রকল্প এলাকা ত্যাগ করার জন্য হুমকি দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন শ্রমিকরা। তবে তাদের দাবি প্রত্যখ্যান করেছেন ইউএনও।

ঘর নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব হোসেন। মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দীপক কুমার রায়কে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দীপক কুমার রায় তদন্ত কমিটির বিষয়টি ‘আমার বিক্রমপুর’ কে নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল ‘আমার বিক্রমপুর’ কে জানান, যেহেতু কয়েকটি গণমাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় চলমান আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ নিয়ে বেশ কিছু অনিয়ম হয়েছে বলে প্রতিবেদন এসেছে তাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদন্তের জন্য বলা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট করে কারো বিরুদ্ধে তদন্তের কথা বলা হয়নি।

তিনি জানান, আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। করোনা বা লকডাউন পরিস্থিতির কারনে কিছুটা দেরি হলেও আমরা সঠিকভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়ে দিবো।

এদিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের আধারা ইউনিয়নের কালিরচর (ভাসানচর) এলাকায় রাস্তার পাশেই আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ২০০ ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এই কাজের তদারকি করছেন চিতলিয়া ভূমি অফিসের সহকারী নায়েব মো. শরীফ মিয়া। প্রকল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পথে। তবে, কোন ঘরের কাজই এখনো পুরোপুরি সমাপ্ত হয়নি। এরই মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, রুবায়েত হায়াত শিপলু গত বছরের ১২ জুলাই মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। কাজটির তদারকি দেন ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ মুন্সিকে। তার চাকুরির ৯ মাসের মাথায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন হামিদুর রহমান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পরপরই হামিদুর রহমান আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার নির্মাণ কাজের দায়িত্বও বুঝে নেন।

ওদিকে, আজাদ মুন্সীর ৮০ জন শ্রমিকের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ আছে। এসব শ্রমিকরা এখন তাদের দুইজনের দ্বন্দ্বে মজুরি না পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় মানবেতর দিনযাপন করছেন।

আজাদ মুন্সীর নির্মাণ শ্রমিক নেতা মামুনুর রশিদ রয়েল বলেন, ঠিকাদার আজাদ মুন্সী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমানের দ্বন্দ্বে তারা কাজ করতে পারছেন না। তাদের পাওনা মজুরিও দেয়া হচ্ছেনা। বরং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমানের নির্দেশে পুলিশ দিয়ে তাদের প্রকল্প এলাকা ত্যাগ করার জন্য হুমকি প্রদান করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান দায়িত্ব নেয়ার পরও তারা দেড়মাস নির্মাণ কাজ করেছে। ২০ দিন ধরে তাদের কাজ বন্ধ করে দেয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

মোস্তফা নামে আরেক নির্মাণ শ্রমিক নেতা বলেন, উপজেলা তহসিলদার শরিফ শ্রমিকদের প্রকল্প এলাকা ত্যাগ করার জন্য হুমকি প্রদান করছে। তহসিলদার শরিফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হয়ে প্রকল্পের কেনাকাটা করে আসছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যেসব ঘর ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে, সেই ঘরে লাগানো লিংটেল, টিন, ইটের গাঁথুনি ও দরজা-জানালার স্টিল পরীক্ষা করলে কোনো কিছুই প্রাক্কলন অনুযায়ী পাওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হামিদুর রহমান ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, আজাদ মুন্সী যদি আমাদের কাছে টাকা পায় সে আপনাদের ধরলো কেন? আমার কাছে আসলেই টাকা দিয়ে দিবো।

ইউএনও বলেন, আমি তো নতুন এসেছি। এই প্রকল্প যখন শুরু হয়েছে তখন আরেকজন ইউএনও হিসেবে ছিলো। তার সময়ে যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে সেটি আমি সংশোধনের ব্যবস্থা করবো। আশা করি, এমন কিছু হয়নি।

error: দুঃখিত!