মুন্সিগঞ্জ, ২৬ মে ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ জেলা শিশু একাডেমির নিজস্ব কোন কার্যালয় নেই। দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে বাসা ভাড়া নিয়ে প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে সংস্থাটির। দুই বছর আগে স্থায়ী ভবন নির্মাণে জমি বরাদ্দ দিতে জেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি আটকে আছে ভূমি মন্ত্রণালয়ে। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে সংস্কৃতি কর্মী ও অভিভাবকদের মাঝে।
শিশু একাডেমি সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে জেলা শহরের কাচারিতে একটি ভাড়া করা টিনশেড ঘরে একাডেমির কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২০০৩ সাল থেকে শহরের খালইস্ট এলাকার একটি ৩ তলা বাড়িতে চলে আসে সংস্থাটি। সেখানে বর্তমানে উপরের দুই তলা ভাড়ায় নিয়ে চলছে একাডেমির কার্যক্রম। ২য় তলায় ২৫০০ স্কয়ার ফিটের সীমিত জায়গাতে গাদাগাদি করে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার ৪ টি কক্ষ ও তিনটিতে নাঁচ, গান প্রশিক্ষণের ৩টি কক্ষ।
অন্যদিকে, ৩য় তলায় রয়েছে একটি মিনি অডিটোরিয়াম ও অফিসার কক্ষ। ভবনটির পাশে সড়ক থাকায় বাইরে খেলাধুলা বা বিনোদনের কোন সুযোগ নেই।
জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা দেওয়ান হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত ১০-১৫ বছর ধরেই নিজস্ব একটি ভবন নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গেল বছরের ডিসেম্বরে জেলা শহরের পাশে পূর্ব শিলমন্দী এলাকায় ৩৩ শতাংশ সরকারি খাসজমি বরাদ্দ দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় না হওয়ায় সেটি বুঝে পায়নি শিশু একাডেমি। জমিটি ছাড় পেলে পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে একটি স্থায়ী ভবন, বিনোদন কেন্দ্র ও উন্মুক্ত খেলার মাঠ নির্মাণ করে দিবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে ভবনটিতে শিশু একাডেমির কার্যক্রম চলছে সেখানে শিশুদের সুষ্ঠ প্রতিভা বিকাশের পরিবেশ নেই। জেলা প্রশাসন থেকে যথাযথ ভূমিকা নিলে দ্রুত জমিটি ছাড় পাওয়া যাবে।’
নৃত্য শিল্পী সিনথিয়া আক্তার জানান, কক্ষের ভিতর গাদাগাদি করে আমাদের থাকতে হয়। অনেক সময় শিশুদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এভাবে কোনো বিষয় বুঝতেও কষ্ট হয়।
শহরের মালপাড়া এলাকার রেজওয়ান সাঈদ জানান, আমার এক মেয়ে চিত্রাঙ্কন ক্লাস করে শিশু একাডেমীতে। কিন্তু ছোট একটি কক্ষে গাদাগাদি করে শিখছে। শিশুরা খোলামেলা পরিবেশে ক্লাস করতে চায়। একটি কক্ষের ভিতর শিখতে আগ্রহী না। সরকার যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি জমির ব্যবস্থা করে দেয় তবে অনেক সুবিধা হবে।
দেওভোগ এলাকার ইরা বেগম জানান, শিশু একাডেমির নিজস্ব ভবন শিগগির নির্মাণ করা প্রয়োজন। কেননা এ অঞ্চলে শিশুরা সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ব্যাপারে আগ্রহী। শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে নিজস্ব ভবন নির্মাণ জরুরি।
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুজন হায়দার জনি বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলাটি প্রাচীনকাল থেকেই শিল্প, সংস্কৃতি শিক্ষা ও ক্রীড়ার ক্ষেত্রে অগ্রগামী একটি জেলা। কিন্তু শিল্প সংস্কৃতির বিকাশে ও উন্নয়নে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা এ জেলাটিতে দেখা যায়নি। তার অনন্য উদাহরণ- জেলা শিশু একাডেমির কার্যক্রম এখনো চলছে ভাড়া করা ভবনে। জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের উচিৎ জমি ছাড়ের বিষয়টি যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা।