আপনি যদি হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি সমন্ধে এমন কাউকে জিজ্ঞেস করেন যিনি হিন্দু ধর্মের ব্যাপারে জানেন, উত্তর হবে শুধু গাল ভরা হাসি। কারন হিন্দু ধর্মের কোন ইতিহাস নেই, এটি বর্তমানে বিশ্বাস করে। ব্যাপারটি হয়ত সাধারনের কাছে মেনে নিতে কষ্ট হতে পারে কারন আমরা এমন এক পৃথিবীতে বসবাস করছি যেখানে ইতিহাসকে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়।
সেই মহান ব্যক্তিবর্গ যারা আমাদের বেদ, উপনিষদ সহ আরও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ দিয়ে গেছেন, কখনই কিন্তু তাতে তাদের পরিবার বা রাজ্য সন্মন্ধে কিছু বলে যান নি। কারন মানব সভ্যতার জন্য ইতিহাসের কোনই প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু উপনিষদ থেকে পাওয়া মহান উপলব্ধি অসীম ও প্রতিদিনের জীবনে এর ব্যাবহারিক প্রয়োগ রয়েছে। তাঁরা এটি ভালভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন যে, ইতিহাস যুদ্ধ ও দুশ্চিন্তা ছাড়া কিছুই দিতে পারে না।
আমাদের বর্তমান পৃথিবী একক ব্যক্তি প্রদর্শিত ধর্ম সমূহে অধিক নিয়ন্ত্রিত। এসকল ধর্মের যেমন রয়েছে নিদৃস্ট সূচনা লগ্ন, তেমনই রয়েছে একজন প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু হিন্দু ধর্মের কোন প্রতিষ্ঠাতা নেই, কারণটি অনেক সহজ, হিন্দু ধর্ম কোন ধর্ম বিশ্বাস নয় বরং পুরনাঙ্গ জীবন বিধান। এটি মানুষের জীবনের প্রতিদিনের সমস্যা নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা করে থাকে। এটি সেই প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করে যা একটি মানুষ তার জীবনের কোন না কোন সময় সম্মুখীন হন, প্রশ্নটি হল “আমি কে”?
হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে কেননা অন্য সব ধর্মের নিদৃস্ট উৎপত্তি সময়কাল রয়েছে। আধুনিক শিক্ষা ব্যাবস্থাও উৎপত্তি নিয়ে প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করে থাকে। সেকারনেই বর্তমানে অনেক হিন্দুকেই হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন সময়কাল বা রাজ্যকালকে উল্ল্যেখ করতে দেখা যায়।
হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি সময়কাল নিয়ে মতভেদ বর্তমানেও প্রচলিত। মুলত যিশুর জন্মের ৩০০০ বছরের আশেপাশের সময়কালকে হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি কাল হিসাবে ধরে নেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু আধুনিক দার্শনিক অবশ্য যিশুর জন্মের ৩০০০ বছর সময়কালকেই হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি কাল হিসাবে দাবী করাকে জোরাল ভাবে আপত্তি করে থাকেন। তাদের মতে হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি কাল যিশুর জন্মের ৩৫০০ থেকে ৫০০০ আগের সময়কালের ভেতরে। যিশুর জন্মের ৫০০০ বছর আগের সময়কালেই ইন্ধুস উপত্যকায় মানব সভ্যতার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
আমি ইতিহাসবিদ নই। কিন্তু বিভিন্ন ইতিহাসবিদের লেখা আমি পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিনে পড়ে থাকি। আমি আমার ব্যাক্তিগত উপলব্ধিতে যিশুর জন্মের ৫০০০ বছর পূর্বের সময়কালকেই হিন্দু ধর্মের উৎপত্তিকাল হিসাবে ধরে নিচ্ছি।
ছোটকালে আমি অন্যান্য হিন্দুদের মতো এটা ভেবে অনেক গর্ব বোধ করতাম যে হিন্দু ধর্ম পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম। এব্যাপারে কোনই দ্বিমত নেই যে হিন্দু ধর্ম পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মবিশ্বাস, বিশেষ ভাবে তাদের জন্য যারা একে একটি ধর্ম হিসাবে দেখে থাকেন।
আমি যখন বড় হতে থাকলাম, হিন্দু ধর্মের উৎপত্তির ইতিহাসের উর্বর দিকটি আমি বুঝতে পারলাম। এসবের পরও আমি এখনও হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন আধুনিক দার্শনিকের বিভিন্ন মতবাদ নিয়ে লেখা পড়ে থাকি।
২০০১ সালে “দি হিন্দু” পত্রিকার একটি লেখা আমাকে আলোড়িত করে। সেটি ছিল এরকম,
“Similarly, it was on the banks of the Bolan on the Baluchistan rim of the Indus valley that the earliest agricultural community of the Indian subcontinent came into being. This community lived and farmed in Mehrgarh and its c.7000 BC pattern of agriculture, based on wheat, barley, cattle and sheep only reached the Indus flood plains after many millennia had elapsed.”
লেখক নয়ঞ্জিত লাহেরি তার এই লেখায় ইন্দুস উপত্যকার সভ্যতার ২০০০ বছর পূর্বের একটি পড়িপূর্ণ সভ্যতা এবং সংস্কৃতির বিবরন দেন। এখন আমাকে বলুন আমি যিশুর জন্মের ৫০০০ বছর পূর্বের কথা প্রকৃত হিসাবে ধরে নেব না এই যিশুর জন্মের ৭০০০ বছর পূর্বের এই সভ্যাতাকে হিন্দু ধর্মের প্রকৃত উৎপত্তিকাল হিসাবে ধরে নেব? নাকি আরও কোন আধুনিক দার্শনিক বা ইতিহাসবিদের নতুন কোন গবেষণার জন্য অপেক্ষা করবো?
নতুন নতুন গবেষণা ও প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলের আবিস্কার হিন্দু ধর্মের প্রকৃত উৎপত্তি কালের হিসাবে নতুন নতুন সময় যোগ করছে। এবং আধুনিক দার্শনিকদের মধ্যে হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি কাল নিয়ে এই যুদ্ধ চলতেই থাকবে। এতকিছুর পর কি বলা যায় হিন্দু ধর্ম কোন নিদৃস্ট উৎপত্তি কাল নির্দেশ করে?
মুলঃ অভিলাশ, পুনা, ভারত