১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
মঙ্গলবার | রাত ৯:২১
হামলার পর বালুচর এখনো থমথমে, ভয়-আতঙ্কে ক্ষতিগ্রস্তরা
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৩ মার্চ, ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের খাসকান্দি বেগমবাজার এলাকায় আবাসন ব্যবসার আধিপত্য ও চাঁদা দাবি নিয়ে দ্বন্দে সর্বশেষ গেল মঙ্গলবারের হামলা-ভাঙচুরের পর এখনো থমথমে এলাকা।

বুধবার রাতভর এলাকাটিতে পুলিশের অভিযান চললেও সর্বশেষ ঘটনায় জড়িতদের কেউ আটক না হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন হামলায় ক্ষতিগ্রস্থরা।

এদিকে, বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরাজদিখান থানায় আবাসন ব্যবসায়ী আল ইসলামের ছোট ভাই দিন ইসলাম বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের কামিজউদ্দিন কামুকে প্রধান অভিযুক্ত করে ৬৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন।

সিরাজদিখান থানার ওসি পুলিশের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে বলেছেন, ভাড়াটিয়া ও বহিরাগত শত শত লোকজনের সামনে পুলিশ অসহায়। পুলিশের সামনেই তারা বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে।

পুলিশ জানায়, আবাসন ব্যবসা নিয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব বিরোধের জের ধরে গেল মঙ্গলবার ভোর সকালে বহিরাগত ও ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নের বেগমবাজার এলাকায় আবাসন ব্যবসায়ী আল ইসলামের নির্মাণাধীন ফ্যাক্টরি ও বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও তান্ডব চালায় প্রতিপক্ষের কামিজউদ্দিন কামু পক্ষের লোকজন।

গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি দেয়ালের টাইলস, টয়লেটের কমোড, রান্না ঘরের চুলা, পানি উত্তোলনের মোটর, ঘরের ফ্রিজ, আলমারি, সোকেস, সোফা।

আবাসন ব্যবসায়ী আল ইসলামের ছোট ভাই শেখ আলমগীরের স্ত্রী ইতি আক্তার বলেন, ঘটনার দিন পুলিশের উপস্থিতিতে কয়েক শতাধিক লোকজন কিছু বোঝার আগেই আমাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। এরপর মধ্যযুগীয় কায়দায় ব্যাপক তান্ডব চালায় তারা। আমরা নিরুপায় হয়ে ঘর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই।

আল ইসলামের স্ত্রী শিরিন আক্তার জানান, সকাল সাড়ে ৬টা’র দিকে ৪০০-৫০০ লোকজন রামদা, হামার, কুড়াল, টেটা নিয়ে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা চালায়। বেছে বেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান যন্ত্রপাতি ভেঙে ও নষ্ট করে দেয়।

আবাসন প্রতিষ্ঠান নবধারা হাউজিং এর স্বত্ত্বাধিকারী আল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, কামিজউদ্দিন কামু, খোরশেদ, আলী আকবর আমার কাছে সম্প্রতি ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। সেটি না দেয়ায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে তারা বহিরাগতদের ভাড়া করে এনে এই হামলা চালায়।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আবাসন ব্যবসায়ী কামিজউদ্দিন কামু বলেন, গেল ৬ ফেব্রুয়ারি আবাসন ব্যবসায়ী সুমন ইসলামের মালিকানাধীন দক্ষিণা গ্রীণ সিটির অফিস কার্যালয় ও তার বসতবাড়ি ভেকু দিয়ে ভেঙে ফেলে আল ইসলাম ও তার সহযোগী বাতেন পক্ষের লোকজন। সেই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা-ভাঙচুর চালায়।

স্থানীয় দোকানদার বাতেন শেখ বলেন, দুই পক্ষের হামলা-সংঘর্ষে আমাদের ব্যবসা মন্দা যায়। স্কুলগুলোতে ছেলে-মেয়েরা ভয়ে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে না। কে কখন কার বাড়িঘর ভাঙে কোন গ্যারান্টি নাই। আমরা কোন হানাহানি চাই না। শান্তি চাই। পুলিশ-প্রশাসনের কাছি দাবি, এই এলাকায় যাতে একটি স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি বা ক্যাম্প নির্মাণ করে দেয়।

সিরাজদিখান থানার ওসি মিজানুল হক বলেন, আবাসন ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখানে যে কয়টি পক্ষ রয়েছে সবগুলোই বর্বর। এ ধরনের কর্মকান্ড সভ্য সমাজে কোনভাবেই মেনে নেয়ার মত নয়। পাঁচশো থেকে ১ হাজার টাকায় লোক ভাড়া করে এনে পুলিশের সামনেই তারা তান্ডব চালায়। পুলিশ এখানে নিরুপায়। আমরা এখন নিরীহ ব্যক্তিদের তালিকা করছি। ঐ এলাকায় নিরীহ ব্যক্তি কারা তা জানার চেষ্টা করছি। যাতে এসব ঘটনায় মামলা হলে নিরীহ লোকজন হয়রানির শিকার না হয়।

ঐ এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণের যে দাবি সে বিষয়ে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে উর্ধ্বতন কর্মকতার কাছে আবেদন করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব সেটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান ওসি।

 

error: দুঃখিত!