মুন্সিগঞ্জ, ২৩ নভেম্বর ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্মার্ট ফোনের ব্যাপক অপব্যবহারের অযুহাত দেখিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের স্মার্ট ফোন ব্যাবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মুন্সিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সরকারি হরগঙ্গা কলেজ কতৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের মত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেল বছর যেখানে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন সেখানে এমন সিদ্ধান্ত ‘বেমানান’। অন্যদিকে, কতৃপক্ষ ‘সামগ্রিক শৃঙ্খলা রক্ষায়’ এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে।
সম্প্রতি কলেজটির অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র হীরা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ২০ নভেম্বর থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে স্মার্ট ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে দেখা যায়।
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘ইদানিং লক্ষণীয় যে- কলেজের কিছু শিক্ষার্থীদের মাঝে স্মার্ট ফোনের ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জানানো যাচ্ছে যে, ২০ নভেম্বর থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে সর্বপ্রকার স্মার্ট ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলো। কাজেই কোন শিক্ষার্থী উল্লেখিত তারিখের পর থেকে স্মার্ট ফোন বহন করে কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান করলে ভিজিল্যান্স টিম কতৃক ব্যবহৃত স্মার্ট ফোন জব্দ করা হবে। অতএব, তারা স্মার্ট ফোনের পরিবর্তে ফিচার ফোন বা বাটন ফোন ব্যবহার করতে পারবে।’
জানতে চাইলে নোটিশটির সত্যতা নিশ্চিত করে কলেজ অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র হীরা বলেন, প্রায় সময় ক্লাসগুলোতে আমরা গিয়ে দেখি পেছনে যেসকল শিক্ষার্থীরা বসেছেন তারা ক্লাসে মনোযোগ না দিয়ে মোবাইলে ব্যস্ত রয়েছেন। অনেকে টয়লেটে যাওয়ার কথা বলেও এটি করছে। গেল দেড়-দুই মাস ধরে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সতর্ক করার পরও তারা শুনছে না। তাই বাধ্য হয়ে সামগ্রিক শৃঙ্খলা রক্ষায় মূলত এমন নোটিশ দেয়া হয়েছে। এরপরও কেউ যদি ব্যাগে করে স্মার্টফোন নিয়েও আসে সমস্যা নেই, শুধুমাত্র ক্লাসের সময় সেটি বের করতে পারবে না। কারও খুব বেশি প্রয়োজন হলে বাসা থেকে বাটন ফোন নিয়ে আসবে। এর বিকল্প কোন পরামর্শ থাকলে আমরা সেটিও বিবেচনা করবো। তবে, আমরা চাই সকল শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোনের অপব্যবহার বন্ধে নিজ থেকে সতর্ক হোক।
কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা বলেন, এ যুগে বাটন ফোন খুব কম শিক্ষার্থীর সংগ্রহেই রয়েছে। সকলের কাছেই স্মার্টফোন। প্রধানমন্ত্রী যখন সবকিছুতে স্মার্ট হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বা আলোচনা একেবারেই বেমানান।
কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আলমগীর হোসাইন বলেন, স্মার্টফোনের অপব্যবহার রোধ করতে কলেজ কতৃপক্ষ সরাসরি নিষিদ্ধ না করে কঠোর হতে পারে। একেবারে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হঠকারিতা।
শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সিদ্ধার্থ শংকর বিপণ বলছেন, স্মার্ট ফোনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো দিকই রয়েছে। করোনার সময়ে এর অনেক ভালো ব্যবহার আমরা দেখেছি। কিন্তু সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে এর অপব্যাবহার বাড়ছে। বিশেষ করে, টিনএজারদের মধ্যে অপব্যবহার বেশি হচ্ছে। তারা কলেজে এসে ক্লাস চলাকালীন সময়ে চ্যাটিংয়ে লিপ্ত হচ্ছে, ক্যাম্পাসে টিকটক করছে। তাই কলেজ কতৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, বাটন ফোন খুব ব্যায়বহুল না। অভিভাবকরা স্মার্ট ফোনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য বাটন ফোন ব্যবস্থা করে দিবে। কলেজে মাত্র ৩ ঘন্টা থাকেন শিক্ষার্থীরা, সামান্য এই সময় স্মার্ট ফোন ব্যবহার না করলে খুব একটা ক্ষতি হবে না। বরংচ তাতে পড়ালেখায় মনযোগী হওয়া যাবে। শিক্ষা সংক্রান্ত কোন অ্যাপ ব্যবহারের বিশেষ প্রয়োজন হলে বাসায় যাওয়ার পর তারা সেটি করবে।