১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ৩:৪৭
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
স্বামীর পরকীয়ার জেরে খুন হলো মুন্সিগঞ্জের স্বর্ণা?
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৯ মে, ২০২২, লৌহজং প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জে মামী শাশুরীর সাথে স্বামীর পরকীয়ার কথা জেনে যাওয়ায় খুন হলো স্বর্ণা আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধূ। স্বর্না আক্তার মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বেজগাঁও গ্রামের শাহজাহান ঢালীর মেয়ে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে একই ইউনিয়নের পাশের কুড়িগাওঁ গ্রামের নুরইসলাম বেপারীর ছেলে মো. রনি হাসানের সাথে স্বর্নার বিয়ে হয়। বিয়ের বেশ কিছু দিন পার হলেও স্বর্ণার কোন সন্তান না হওয়ায় স্বর্ণার ওপর মাঝে মধ্যে চাপ সৃষ্টি করতো হাসানের পরিবার।

এমনকি তাকে তালাক দেয়ার ভয় দেখাতো হাসান। ডাক্তারের নানান চিকিৎসা শেষে স্বর্ণার কোল জুড়ে যমজ দুটি সন্তান আসে। দুটোই ছেলে। তাদের বয়স এখন দেড় বছর।

এলাকাবাসি জানান, স্বর্ণার স্বামী রনি হাসানের অঢেল টাকা পয়সা থাকায় এবং স্বর্ণার বাবা একটু দুর্বল হওয়ায় রনি হাসানের পরিবার কখনই স্বর্ণাকে ভালো দৃষ্টিতে দেখতো না। স্বর্ণার ছোট বোন রুপা জানান, বেশ কিছুদিন আগে রনি হাসানের ছোট ভাই (স্বর্ণার দেবর) রবিনকে তার মামী শাশুরীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্বর্ণা তার স্বামী রনিকে বিষয়টি জানায় এবং রবিনকে শাসন করতে বলে।

এরপর থেকে স্বর্ণার উপর শুরু হয় নানান নির্যাতন।

এক পর্যায়ে স্বর্ণা জানতে পারে রনি হাসানের সাথে ও তার মামী শাশুরীর অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে স্বর্ণা ঈদের পর সন্তান দুটিকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে। আর রনি হাসানের পরিবার ভাবে রনির সাথে মামীর পরকীয়ার কথা জানতে পেরে স্বর্ণা তার বাবার বাড়ি চলে গেছে, আর আসবে না।

তাই নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে গত শনিবার রনি হাসানের পরিবার তার ছোট বোনের জামাই উজ্জল কে পাঠায় স্বর্ণাকে তার বাবার বাড়ি থেকে রনিদের বাড়িতে নেয়ার জন্য।

স্বর্ণা তার ননদের স্বামী উজ্জলের সাথে কামরাঙ্গীর চর ফিরে যায় রনিদের বাসায়। এদিকে স্বর্ণা তার বাবাকে বাড়ি থেকে আম নিয়ে যেতে বলে তার বাসায়।

নিহত স্বর্ণার পরিবার জানায়, স্বর্ণার বাবা শাহজাহান ঢালী বুধবার সকালে মেয়ের জন্য আম, দুধ নিয়ে স্বর্ণার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে কেরানীগঞ্জ পৌছালে স্বর্ণার ননদের স্বামী উজ্জল স্বর্ণার বাবাকে ফোনের মাধ্যমে জানায় স্বর্ণার সাথে রনির ঝগরা হচ্ছে আপনি দ্রুত বাসায় চলে আসেন। এ খবর শুনে শাহাজাহান ঢালী খুব দ্রুত স্বর্ণাদের কামরাঙ্গীরচরের বাসায় পৌছে দেখে স্বর্ণার স্বামী রনি, ও তার মা, বোন ও বোনের স্বামী উজ্জল সবাই বাসার ড্রইং রুমে বসে খোশ গল্প করছে।

স্বর্ণার কথা জানতে চাইলে বলে স্বর্ণা তার রুমে আছে খোঁজ নেন। স্বর্ণার রুমটি ভেতর দিক দিয়ে আটকানো ছিলো। স্বর্ণার বাবা দরজা ধাক্কা দিতেই দেখে মেয়ের নিথর দেহ একাংশ মাটিতে লুটিয়ে পরেছে আর গলাটি ফ্যানের সাথে ওড়না লাগিয়ে ঝুলছে। এ অবস্থা দেখে সে অনেকটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বিষয়টি জানানো হয় সকল আত্মীয় স্বজনকে।

এরপর কামরাঙ্গীরচর থানায় নেয়া হয় স্বর্ণার লাশ। পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার আত্মহত্যার মামলা রুজু করে। মামলায় আসামী করা হয় রনি হাসানকে। পরে হত্যার কথা স্বীকার করে রনি হাসান থানায় নিজেই আত্মসমর্পণ করেন।

কামরাঙ্গীরচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে আত্মহত্যা প্ররোচণার অপরাধে গতকাল একটি মামলা রুজু করি। (মামলা নং- ৩৪) প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে আত্মহত্যায় প্ররোচণাকারী রনি হাসানকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা।

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে স্বর্ণার লাশ তার বাবার বাড়ি লৌহজংয়ের বেজগায়ে গতকাল বিকাল ৬ টায় নিয়ে আসা হয়। পরে সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

error: দুঃখিত!