মুন্সিগঞ্জ, ২৬ মে ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
তৃতীয় ধাপে আসন্ন ২৯ মে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন আওয়ামী লীগ ও একজন যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে এই প্রার্থীরা দিনরাত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এতে জমে উঠেছে এ উপজেলার নির্বাচন।
জয়ের ব্যাপারেও শতভাগ আশাবাদী সব প্রার্থীরা। নির্বাচন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীপূর্ণ হবে এমনটাই মনে করছেন তারা।
তবে স্থানীয় কয়েকজন ভোটার ও আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থী পাঁচজন হলেও এ উপজেলায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মঈনুল হাসান নাহিদ, কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী আবুবকর সিদ্দিক ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী আওলাদ হোসেন মৃধার সঙ্গে।
মঈনুল হাসান সিরাজদিখান উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক। আবুবকর সিদ্দিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওলাদ হোসেন মৃধা উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি।
এ ছাড়া দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন ব্যবসায়ি আব্দুল্লাহ আল জাদিদ ইরান এবং ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন আইনজীবি শমরেশ নাথ।
তফসিল অনুযায়ী, গত ২ মে মনোনয়নপত্র জমা দেন ওই পাঁচ প্রার্থী। ৫ মে তাঁদের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই করা হয়। ১৩ মে প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেন।
সরেজমিন সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম, হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এছাড়া প্রার্থীদের পক্ষে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাট-বাজারে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, চা দোকানের আড্ডায় কোন প্রার্থী কত ভোট পাবেন এ হিসাব কষছেন এবং কে কাকে ভোট দিবেন সেই আলোচনা করছেন ভোটাররা। এতে করে উপজেলাজুড়ে নির্বাচনের বিশেষ আবহ ফুটে উঠেছে।
নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে এগিয়ে রাখতে পিছিয়ে নেই কর্মী-সমর্থকরাও। তারাও প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি পক্ষে বিপক্ষে নানা মতামত দিচ্ছেন। চলছে চুল-চেড়া বিশ্লেষণ। উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে গণসংযোগ- উঠান বৈঠক ও ভোটাদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০-১৫ জন ভোটার এবং উপজেলার কয়েকজন শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা বলেন, মঈনুল হাসান উপজেলায় নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ প্রধানের দায়িত পালন করছেন। তাঁর আপন মামা উপজেলার কেয়াইন ইউপির চেয়ারম্যান। তিনি নিজেও বেশ জনপ্রিয়। সব মিলিয়ে উপজেলার প্রতিটি এলাকায় তাঁর ব্যপক কর্মী–সমর্থক আছে। সে হিসেবে ভোটের মাঠে বেশ শক্ত অবস্থানে আছেন মঈনুল হাসান।
প্রার্থী আবুবকর সিদ্দিক ২০১৪ সাল থেকে জেলা আ.লীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং ২০১৯ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে বালুচর ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি উপজেলার পরিচ্ছন্ন ও জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত।
এদিকে মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ সমর্থীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় ভালো পরিচিতি আছে আওলাদ হোসেন মৃধার। রাজনৈতিকভাবে তিনি সাধারণ ভোটারদের কাছে কিছুটা অচেনা হলেও সংসদ সদস্য এবং সংসদ সদস্যের ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আনিসুর রহমান রিয়াদের সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠে ভালো জনসমর্থন নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন আওলাদ হোসেন মৃধা। তবে এ উপজেলার ভোটের মাঠ এবং জনসমর্থনে একেবারেই নতুন মুখ আব্দুল্লাহ আল জাদিদ ইরান এবং আইনজীবি শমরেশ নাথ। তাদের দুজনের কিছুটা ভোট ব্যাংক থাকলেও মূল লড়াইটা হবে মঈনুল হাসান, আবুবকর সিদ্দিক এবং আওলাদ হোসেন মৃধার মধ্যে।
আলোচনা প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান প্রার্থী মঈনুল হাসান বলেন, ‘তৃণমূল থেকে মানুষের ভালবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। সাধারণ মানুষের চাওয়ায় জনতার প্রার্থী হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে এসেছি। যদি নির্বাচন সুষ্ঠ হয়, মানুষ নিরাপদে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে, তাহলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবো ‘ তবে তিনি মনে করেন, প্রার্থী হিসেবে সবাই শক্তিশালী। তবে তাঁর প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আবুবকর সিদ্দিক এবং আওলাদ হোসেন মৃধার সঙ্গে।
আরেক প্রার্থী আবুবকর সিদ্দিক বলেন, ‘সাধারণ মানুষের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলাম। সংসদ সদস্যের এবং তাদের লোকজনের নানা বাঁধা উপেক্ষা করে ভোটের মাঠে আছি। সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে অনেক সারা পাচ্ছি। যদি ভোটের পরিবেশ ঠিক থাকে। তবে নিশ্চিত আমি নির্বাচিত হবো।’
আওলাদ হোসেন মৃধার বক্তব্য নিতে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি ফোন ধরেননি।
সিরাজদিখান উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৫ হাজার ২০২। তাঁদের মধ্যে ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৫ পুরুষ ও ১ লাখ ২৩ হাজার ৩১৭ জন নারী ভোটার।
সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ
উপজেলার দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী মঈনুল হাসান ও আবুবকর সিদ্দিকের অভিযোগ দলীয় ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ।
এ দুই প্রার্থী একই সুরে অভিযোগ করেন, মহিউদ্দিন আহমেদ নিজে নেতা-কর্মীদের ডেকে আওলাদ হোসেন মৃধার আনারস প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে বলছেন। তাঁর ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আনিসুর রহমানকে সভা-সমাবেশে পাঠিয়ে আওলাদ হোসেনের পক্ষে ভোট চাওয়াচ্ছেন। যারা ভোট দিবেনা, যারা আওলাদ মৃধার বাহিরে কাজ করবে তাদের নির্বাচনের পরে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন তিনি।
আবুবকর সিদ্দিক বলেন, এমপির ভয়ে আমার লোকজন পোষ্টার লাগাতে পারছেনা। পোষ্টার লাগালে এমপি তার লোকজন দিয়ে ছিড়ে ফেলছে। আমরা এর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ তাঁর বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগে শতভাগ মিথ্যা দাবি করেছেন।
তাঁর ছেলের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কারো পক্ষে ভোট চাচ্ছি না ছেলে এবং স্ত্রী তারা ভোট চাচ্ছে। এটা নাগরিক হিসেবে তাঁদের অধিকার।
তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওযার কথা জানিয়েছেন মুন্সিগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমেদ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ করা হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।