মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় এক স্কুল ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে গত ২৪ এপ্রিল যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন মেয়ের বাবা।
মেয়ের বাবা শেখ হায়দার বাদী হয়ে যুবলীগ নেতা লিটুসহ তিনজনকে আসামী করে মুন্সিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ এপ্রিল সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে মাহমুদা বিদ্যালয়ে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল। সে রশুনিয়া কালভার্ট সেতুতে পৌঁছাতেই আগ থেকে ওঁৎপেতে থাকা যুবলীগ নেতা লিটু-শাকিবরা মাহমুদাকে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে অপহরণ করে। মাহমুদা বাঁধা দিলে তাদের মধ্যে ধস্তা-ধস্তি হয়। মামলার স্বাক্ষীরা মাহমুদাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসলে আসামিরা তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র উঠাইয়া হুমকি প্রদর্শন করে। কোর্টে দায়ের করা এই মামলার সূত্র ধরে দেশের বেশ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকাসহ মুন্সিগঞ্জের কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকাতেও একই খবর প্রকাশ হয়। তবে কোন প্রতিবেদনেই মেয়ের বাবার বক্তব্য ছিলো না।
এদিকে ‘আমার বিক্রমপুর’ এর নিজস্ব অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এর পেছনের আসল ঘটনা।
মেয়ের বাবা অপহরণের অভিযোগে মামলা করলেও ‘আমার বিক্রমপুর’ এর কাছে মেয়ের বাবা শেখ হায়দার নিজেই বলেন ঘটনা সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি জানেনই না। মামলায় উল্লেখিত বিষয়বস্তু সম্পর্কেও আপত্তি করেন মেয়ের বাবা। তিনি এসময় বলেন, সিরাজদিখান উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক লিটু হাওলাদার ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না এবং তাকে অভিযুক্ত করে অস্ত্র প্রদর্শনের কখাও মিথ্যা।
তিনি বলেন, ‘অস্ত্র প্রদর্শনের কথা আমি কোথাও বলিনি, এখনো বলছি না’
এদিকে পুরো ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল হালিম বলছেন রশুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী শেখ হায়দারের মেয়ে মাহমুদাকে তিনি ১৫ এপ্রিল সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে স্বেচ্ছায় অভিযুক্ত সাকিব এর সাথে অটোতে উঠে চলে যেতে দেখেছেন। এসময় সেখানে কোন জোরজবরদস্তি বা ধস্তাধস্তি হতে দেখেন নি। ছেলের সাথে অন্য কেউ ছিলো না বা কেউ মেয়েটিকে হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করেননি বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল হালিম।
ছেলের বাবা নিলু হাওলাদার দাবি করেন, তার ছেলের সাথে শেখ হায়দার এর মেয়ের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। তিনি নিজেও মেয়ের পরিবারকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তিনি বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ের বাবা মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিতে চাওয়ায় তারা দুজনে মিলে স্বজ্ঞানে পালিয়েছে।
তিনি আরও জানান, ১৫ তারিখে প্রেমের টানে বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হায়দার এর মেয়ে মাহমুদা কে তিনি তার বাবার কাছে একদফায় ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মেয়ে যেতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয়রা তাকে জোরজবরদস্তি করতে নিষেধ করেন। কিন্তু অপহরণের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
মেয়ের বাবা শেখ হায়দার এবং প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল হালিম এর পুরো বক্তব্য ভিডিওতে দেখুনঃ
নিলু হাওলাদার এর ছেলে সাকিব ও শেখ হায়দার এর মেয়ে মাহমুদার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো বলে দাবি করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। তিনি বিষয়টিকে অপহরণ না বলে স্বেচ্ছায় চলে যাওয়া বলছেন।
যুবলীগ নেতা লিটুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মেনে নিতেও নারাজ তার অনুসারী নেতাকর্মীরা। তারা এই অভিযোগে উল্লেখিত বিষয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘অপহরণের স্বীকার বলে যে নাটক সাজানো হয়েছে তা আমরা প্রত্যাখান করেছি। ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার যেমন মেয়েটির আছে তেমন লিটুরও আছে। লিটুর মানহানী হয়েছে। তিনি রাজনৈতিকভাবে হেয় হয়েছেন’
এ বিষয়ে জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, ‘অস্ত্র উচিয়ে দেখানোর প্রশ্নই আসে না। ১৫ তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক ৭ টার দিকে মেয়ের বাবা শেখ হায়দার নিজেই এসে আমাকে জানান তার মেয়ে নিলু হাওলাদার এর ছেলে সাকিব এর সাথে নিরুদ্দেশ হয়েছে। তিনি তখন আমার কাছে অস্ত্র দেখিয়ে অপহরণ বা অন্য কোন কথাও বলেননি।’
সাইফুল ইসলাম ফিরোজ এর এই বক্তব্যের সত্যতা জানতে চাইলে মেয়ের বাবা শেখ হায়দার ‘আমার বিক্রমপুর’ এর কাছে তার বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বাসাইল ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তফসির আল বাহার বলেন, ‘মেয়ে স্বেচ্ছায় ঐ ছেলের সাথে পালিয়েছে। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। বিষয়টি অন্যদিকে মোড় দিতে তৃতীয় পক্ষ অপহরণের নাটক সাজিয়েছে।