১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | সন্ধ্যা ৭:২১
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
সাঁতার না জানায় মুন্সিগঞ্জে বাড়ছে পানিতে ডুবে মৃত্যু
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৬ মে ২০২৪, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

পরিবারের অসচেতনতা ও জলাশয়ের অভাবে সাঁতার পারদর্শীতায় আগ্রহী করে তোলা যাচ্ছে না শিশু-কিশোরদের। এতে বাড়ছে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা।

সর্বশেষ গতকাল গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি এলাকায় মেঘনা নদীতে গোসল করতে নেমে আলিফ (১৭) নিখোঁজ হন। এর আগে গেল। শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা সদরের মহাকালির কেওয়ার ঢালিবাড়ী এলাকায় পুকুরে ডুবে ভাই-বোনের হৃদয়বিদারক মৃত্যু হয়। এরপরই নতুন করে গুরুত্ব পায় শিশুদের সাঁতার শেখার বিষয়টি।

নিখোঁজ আলিফের স্বজনরা জানান, তিনি সাঁতার জানতেন না। ওদিকে মৃত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আল আমিন (৬) ও মরিয়ম আক্তারের (৭) পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা দুজনের একজনও সাঁতার জানতেন না।

স্থানীয় ও স্বজনরা মনে করছেন, সাঁতার জানা থাকলে পুকুরে ডুবে মর্মান্তিক মৃত্যু এড়ানো যেত। এছাড়া ঈদুল ফিতরের পরদিন জেলার টংগিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড়ে পদ্মা নদীতে ডুবে মারা যান ব্যাংক কর্মকর্তা জুয়েল রানা (৪০), বাংলাদেশে রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রিয়াদ আহমেদ রাজু (৪৫) ও তার ছেলে ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্র রিয়াদ রামিন আরিদ (১৬)। এই ৩ জনও সাতার জানতেন না বলে স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে।

ফলে, ঘটনাগুলো স্বাক্ষ্য দেয় সাঁতার শেখার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেছে। একদিকে শিশুদের পরিবারের অনাগ্রহ অন্যদিকে উন্মুক্ত জলাশয় বা পুকুর কমে যাওয়ায় আগ্রহের ঘাটতি বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকরা।

সদরের মহাকালি এলাকায় পুকুরে ডুবে মৃত আল আমিন ও মরিয়মের মামাতো ভাই মো. রনি বলেন, ‘সাঁতার না জানার ফলে ওদের মৃত্যু হয়েছে। বাড়ির পাশে একটি পুকুর থাকলেও সাঁতার শেখানোর প্রতি আগ্রহ ছিলো না কারও।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘শিশু দুইটি যদি সাঁতার জানতো তাহলে এভাবে প্রাণ যেত না ওদের।’

শহরের ইদ্রাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী শেখ মেহজাবিন রোদেলা (১১)। ছোটবেলা থেকে মুন্সীগঞ্জ শহরে বেড়ে উঠা তার। জলাশয় বলতে সে চেনে শুধুমাত্র ধলেশ্বরী নদী। সেখানে গিয়ে কখনো গোসল করা বা সাঁতার কাটার সাহস করেনি।

আক্ষেপ করেই এই প্রতিবেদককে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের শহরে একসময় অনেক পুকুর ছিলো। আমার বাবার কাছে গল্প শুনেছি। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে পুকুর বা জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে গেছে। যে কয়টি রয়েছে তার পানি এতটাই নোংরা যে তার সামনে গিয়ে দাড়ানোও যায় না। সাঁতার কাটা তো স্বপ্নের মত। শহরে একটা সুইমিংপুল আছে শুনেছি। কিন্তু সেটা বেশিরভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকে।’

জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী সদস্য আবু বকর সিদ্দিক মিথুন বলেন, গ্রামের কথা ভিন্ন সেখানে পুকুর বা জলাশয় আছে। তবে অভিভাবকদের অসচেতনতার জন্য তারা শিশুদের সাতার শেখাতে আগ্রহী হন না। বা এই বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখেননা। কিন্তু শহরে সাতার শেখার জায়গা কোথায়? না আছে কোন জলাশয় না আছে কোন নিরাপদ পুকুর। সবই তো বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। জেলা শহরের সার্কিট হাউজ এলাকায় সাতার শেখার জন্য একটি প্রশিক্ষণ সুইমিংপুল আছে। কিন্তু সেটিও নানা কারণে যথাযথ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আমাদের মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক আশ্বস্ত করেছেন শীঘ্রই সুইমিংপুুলটি সংস্কার করে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

ফেইসবুকে আমরা
ইউটিউবে আমরা
error: দুঃখিত!