মুন্সিগঞ্জ, ৩০ মার্চ, ২০২১, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
গত রোববার কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালের দিন আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের পর মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের রাজানগর ইউনিয়নে অন্তত ১০ টি বাড়িতে নির্বিচারে তান্ডব চালায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা।
এসময় মধুপুর পীর ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আব্দুল হামিদের আহতের খবর মাইকে ঘোষণা দিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। এরপর পুরো ইউনিয়ন জুড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাসায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন পর্যন্ত বাড়িছাড়া। হামলার শীকার হয়েও সবাই রয়েছেন আত্মগোপনে। ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের রাজানগর ইউনিয়নে।
আরও পড়তে পারেন: মুন্সিগঞ্জে সিরাজদিখানে হেফাজতের সাথে সংঘর্ষ, পুলিশের ওসি ও মধুপুরের পীর গুরুতর আহত
গতকাল দিনভর সাংবাদিক পরিচয়ে হেফাজতের তান্ডবের শীকার বেশ কয়েকজনের সাথে সাক্ষাৎয়ের চেষ্টা করা হলেও তারা কোথায় আছেন, কি পরিস্থিতিতে আছেন নির্ভয়ে সেটা বলতে চাইছেন না।
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের এই ইউনিয়নে ৫ টি কওমী মাদ্রাসা রয়েছে। এই ইউনিয়নের জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। মধুপুরের পীর আব্দুল হামিদের বাড়িও এই এলাকায়। গত রোববার মধুপুর পীর ও হেফাজত নেতা আব্দুল হামিদের আহতের খবরে এই ইউনিয়নের অন্তত ১০ টি বাড়িতে তান্ডব চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
যাদের বাড়ি-ঘরে তান্ডব
* মধুপুর এলাকায় রাজানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম আলমগীর কবিরের বাড়িতে হামলা হয়। এসময় তার বাড়িতে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। নির্বিচারে পিটিয়ে তার মা ও বড় ভাইকে আহত করা হয়।
* নয়াগ্রাম এলাকায় উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আসাদুজ্জামান বিপ্লবের বিল্ডিং বাড়িতে ভাঙচুর করে ৭ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় হেফাজতের কর্মীরা।
* বায়োখোলা এলাকায় রাজানগর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হোসেন আলী খানের বাড়ির ভবনের ৩ টি বেডরুমে আগুন দেয়া হয়। বাড়ির প্রতিটি টয়লেট ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়। এসময় নগদ আড়াই লাখ টাকা ও স্বর্ণ লুট করা হয়।
* তেঘরিয়া এলাকায় রাজানগর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল্লাহ সোহেলের বাড়িতে হামলা করে ৪ টি বেডরুমের সকল মালামাল ভাঙচুর করা হয়। বাড়ির সামনে থাকা মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়। একটি মোবাইল ও নগদ ১০ হাজার টাকা লুট করা হয়।
* তেঘরিয়া এলাকায় সিরাজদিখান উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শাহ আলম আসাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ির সকল আসবাবপত্র ভেঙে ফেলা হয়।
* নয়ানগর এলাকায় রাজানগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক আমিনুল ইসলাম আসেল খানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৩ টি টিনের ঘড়ে ভাঙচুর করা হয়। ঘড়ের ভেতরে থাকা সকল আসবাবপত্র ভেঙে চুরমার করে দেয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
* তেঘরিয়া এলাকায় রাজানগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক এনামুল ইসলাম রিফাতের বাড়িতে ভাঙচুর করে হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এসময় বাড়ির সকল আসবাবপত্র ভাঙে তারা।
সিরাজদিখান উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, ঘটনার পর থেকে ঐ এলাকায় স্থানীয় সাংবাদিকরাও যেতে পারছেন না। বিভিন্নভাবে নিজেদের তাদের পক্ষের লোক বোঝানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। লাঠি-বল্লম নিয়ে তারা পুরো এলাকায় পাহাড়ায় রয়েছেন। বাইরের কেউ ঢুকতে গেলেই বাঁধা আসে। তাই সাংবাদিকরা ঐ ঐলাকার সংবাদ সংগ্রহ থেকে বিরত আছেন। মূলত সহিংসতার ঘটনায় মধুপুরের পীর বা তাদের পরিবারের কেউ যাতে পুলিশের কাছে আটক না হন তাই তারা এই বিধ্বংসী রুপ ধারণ করেছেন।
আরও পড়তে পারেন: মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে হেফাজতের তান্ডবের শিকার আ. লীগ নেতাকর্মীদের পাশে মাহতাব উদ্দিন কল্লোল
সিরাজদিখান উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ চোকদার পাপ্পু বলেন, ঘটনার পর থেকেই ঐ এলাকা বিচ্ছিন্ন আছে। বাইরের কেউ ঢুকতে পারছে না। তাদের উপর হামলার চেষ্টা করা হচ্ছে। ছাত্রলীগের যাদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে তারা আপাতত অন্য এলাকায় আত্মগোপনে আছেন। এমন অবস্থায় তারা আইনি পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের অবস্থান কি জানতে সিরাজদিখান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ কে একাধিকবার মোবাইল করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার (২৯ মার্চ) সিরাজদিখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভা হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তা গণমাধ্যমের কাছে স্পষ্ট করা হয়নি।
রাজানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন হাদী বলেন, হামলার ঘটনায় জড়িতরা সবাই যে হেফাজতের তা কিন্তু না। কিছু আছে বাইরের। ঘটনা যাই ঘটেছে বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। লাঠি-বল্লম নিয়ে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরা বেশিরভাগ হচ্ছে পীর সাহেবের মুরিদান। তার উপরে যাতে হামলা না হয় সেজন্যে হয়তো এই ধরনের প্রস্তুতি কেউ নিয়ে থাকতে পারে।
সিরাজদিখান সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার রাজিবুল ইসলাম জানান, এসব ঘটনায় কেউ অভিযোগ না দেয়ায় এখন পরর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। তবে পুলিশ এক্সপ্রেসওয়ে সহ আশেপাশের এলাকায় টহলে রয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে।