বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে জুলাই-আগস্ট মাসে পরপর দুই দফা বন্যায় মাঠে মারা গেছে ফসল। নষ্ট খেত পরিচর্যা করে তোলার পর আবার বৃষ্টির ধাক্কায় শেষ হয়ে গেছে সব। দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্ত চাষি। আর চাষের ক্ষতির সেই আঁচ ভালোই টের পাচ্ছেন ক্রেতারা। সবজির দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, দুবারের বন্যায় চট্টগ্রাম জেলায় প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। এতে বরবটি, বেগুন, ঢ্যঁাড়স, কাঁকরোল, শসা, চিচিঙ্গা, ঝিঙে ও কাঁচামরিচ খেত ছিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক আমিনুল হক চৌধুরী বলেন, কৃষকেরা তিন দফা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। জুলাই-আগস্টে দুবার বন্যায় ডুবেছে খেতখামার। এখন আবার বৃষ্টিতে সব ধুয়ে–মুছে যাচ্ছে। ফলে গ্রীষ্মকালীন সবজির আকাল দেখা দিয়েছে। এ কারণে সবজি বাজারে আগুন। অন্য কোনো কারণ নেই। তিিন বলেন, অক্টোবরে নতুন সবজি বাজারে আসা শুরু করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
সরেজমিনে নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নগরের বিভিন্ন বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। প্রতি কেজি কাঁকরোল, পটোল, ঝিঙে, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। অথচ জুন মাসে এসব সবজি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।
নগরের সবজির প্রধান পাইকাির বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজার। এখানে প্রতিদিন চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজি আসে। আড়তদারেরা বলেন, এখন সবজি আসছে খুব কম। দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা হওয়ায় সবজির সংকট দেখা দিয়েছে। যার জন্য দাম বেড়ে গেছে।
তবে বন্যায় কচুখেত তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানান। কচুর দাম অন্যান্য সবজির তুলনায় কম।
মো. সেলিম নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা গত মঙ্গলবার রিয়াজউদ্দিন বাজারে সবজি কিনতে কিনতে বলেন, ‘এমন সময়ে সবজির দাম কখনো এত বেশি হয় না। এক কেজি কাঁকরোল যদি ৬০ টাকা হয়, মানুষ খাবে কী?’
নগরের বাজারে বিপুল পরিমাণ সবজি আসে কক্সবাজারের চকরিয়া অঞ্চল থেকে। কিন্তু বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ১ হাজার ১২০ হেক্টর শাকসবজি, ৩৪ হেক্টর পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে। এখন নতুন করে বন্যায় আবারও ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা।
পৌরসভার আমান্যারচর এলাকার চাষি মনজুর আহমেদ বলেন, বন্যায় তাঁর তিন একরের সবজি খেত পচে গেছে। এতে সাড়ে চার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাষি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সাড়ে তিন একর জমিতে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে শসা, ঢ্যঁাড়স, কাঁকরোল, বেগুন, কাঁচামরিচ, চিচিঙ্গা ও ঝিঙের চাষ করি। দেড় লাখ টাকার ফসল তুলে বিক্রিও করি। কিন্তু বন্যায় বাকি সব শেষ হয়ে গেছে।’
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ বলেন, চকরিয়া উপজেলায় দুই দফার বন্যায় ২৫ কোটি ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে পেকুয়া উপজেলায় ১২ হাজার ৯১০ একর কৃষিজমি তলিয়ে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে ৯০ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
চকরিয়া পৌর শহরের বিমানবন্দর রোড ব্যবসায়ী সমিতির (কাঁচাবাজার আড়তদার সমিতি) সাধারণ সম্পাদক নুরুল শফি বলেন, দুবারের বন্যায় কৃষকেরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চকরিয়া উপজেলায় এখন কোনো সবজি খেত নেই।
এদিকে সাতকানিয়া উপজেলায় টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট গত তিন মাসে তিন দফা বন্যা হয়েছে। পানিতে ডুবে বীজতলা, আমন, আউশ ও সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, সাতকানিয়া উপজেলায় জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে তিন দফা বন্যা দেখা দেয়। ৭৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা করলা, কাঁকরোল, বরবটি, চিচিঙ্গা, শসা ও ঝিঙে খেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। পানিতে ডুবে প্রায় ১৬ হাজার পেঁপেগাছ মরে গেছে।
কালিয়াইশ ইউনিয়নের মাইঙ্গাপাড়া এলাকার কৃষক আবুল হোছেন বলেন, তিন দফা বন্যার পানিতে ডুবে প্রায় এক একর সবজি খেত নষ্ট হয়েছে। সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খাজানুর রহমান বলেন, পরপর তিন দফা বন্যায় উপজেলার কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নতুন করে বীজ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।