মুন্সিগঞ্জ, ২৬ জুন, ২০২১, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
আনুমানিক আটশত ছত্রিশ (৮৩৬) বছর আগে নির্মিত দৈর্ঘ্যর মাপে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম শিবলিঙ্গটি অবস্থিত মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের ফেগুনাসার এলাকার রাজা রাজবল্লভ শিবমন্দিরে।
ইতিহাসবিদরা মনে করেন, এটি দৈর্ঘ্যর মাপে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় শিবলিঙ্গ। মাটির নিচে এটি ঠিক কত ফুট তার কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ধারনা করা যায়, মাটির নিচে এর গভীরতা প্রায় ২০০ ফুট। যার প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন হিন্দু ধর্মগুরুদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে লেখা বিভিন্ন বইতে। তাই একে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় শিবলিঙ্গ বলে অনেকে।
কষ্টিপাথরের তৈরি এই শিবলিঙ্গের বর্তমান আনুমানিক বাজারমুল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। মহারাজ রাজবল্লভ ১১৫৯-১১৮৫ সালে তার রাজত্বকালে এই শিব মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
প্রাচীন বিক্রমপুর সংক্রান্ত বিভিন্ন বইয়ে উল্লেখ আছে, উচ্চাভিলাষী ও অত্যন্ত ক্ষমতাধর মহারাজা রাজবল্লভ সন্ধ্যা-বন্দনার জন্য এই শিবমন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। শিবমন্দিরকে কেন্দ্র করে এখানে একসময় তালতলা বন্দরও ছিলো। যা বর্তমানে বিলুপ্ত।
১৭৫৬ থেকে ১৭৬৩ সাল পর্যন্ত বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা যখন টালমাটাল, তখন রাজা রাজভল্লভ সেন, মীর জাফর ও ঘসেটি বেগম বাংলার রাজনীতিতে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেন।
ঢাকার দেওয়ান থাকাকালীন সময়ে রাজা রাজভল্লব জমি থেকে প্রাপ্ত খাজনা তার পুত্রকে দিয়ে নবাব সিরাজউদ্দোউলার কাছে পাঠিয়েছিলেন।
তার পুত্র সে টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়ে কলকাতায় ইংরেজদের কাছে আশ্রয় নেন। এ কারনে সিরাজউদ্দোউলার সাথে ইংরেজদের বিরোধ দেখা দেয় এবং পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দোউলার পরাজয়ের অন্যতম কারন ছিলেন রাজা রাজবল্লভ সেন।
প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা রাতে রাজা রাজভল্লব সেনের এই ‘শিব মন্দিরে’ ধুমধাম করে শিবরাত্রি ব্রত ও পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী চলে মহাউৎসব। দূরদূরান্ত থেকে এসে ভিড় করেন অসংখ্য পুণ্যার্থী। শিবের মাথায় জল ঢালতে ভোর থেকেই এই মন্দিরচত্বরে শুরু হয়ে যায় ভক্তদের ঢল।মেলাও বসে মন্দির-চত্বরে।
এক সময় বিশাল এলাকা নিয়ে রাজা রাজ বল্লভ মন্দিরটি নির্মাণ করলেও বর্তমানে মন্দিরের চত্বর বাদে বাকি জায়গা প্রভাবশালীরা বিভিন্ন উপায়ে দখল করে নিয়েছে। প্রাচীন বিক্রমপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় এই শিব মন্দিরটি সংস্কার ও দখলমুক্ত করার দাবি স্থানীয়দের।
কিভাবে যাবেন?
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের ফেগুনাসার এলাকায় অবস্থিত ঐত্যিহ্যবাহী এই শিব মন্দিরটি পরিদর্শনে আসতে চাইলে ঢাকার গুলিস্থান বাসস্ট্যান্ড থেকে দিঘীরপাড় ট্রান্সপোর্টের বাসে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি হয়ে সরাসরি মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর সেতুর ঢালে এসে নামতে হবে। বাসে ভাড়া নিবে ৬৫ টাকা। মুক্তারপুর সেতু থেকে অটোরিকশা বা সিএনজিতে করে সিরাজদিখানের মালখানগর বা তালতলা বাজারে আসতে হবে। এরপর রিকশা বা ইজিবাইকে করে ফেগুনাসার শিব মন্দিরে যাওয়া যাবে। ভাড়া নিবে ২০-৩০ টাকা। এই পথে ঢাকা থেকে মন্দির পর্যন্ত আসতে সময় লাগবে আড়াই থেকে ৩ ঘন্টা।
অথবা ঢাকার গুলিস্থান থেকে সিরাজদিখান পরিবহনের বাসে করে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে সিরাজদিখানের মালখানগর পর্যন্ত আসতে হবে। ভাড়া নিবে ৫৫ টাকা। এরপর ২০-৩০ টাকায় রিকশা বা ইজিবাইকে করে ফেগুনাসার এলাকায় অবস্থিত আনুমানিক ৮৩৬ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক এই শিব মন্দিরে আসা যাবে। এই পথে ঢাকা থেকে মন্দির পর্যন্ত আসতে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘন্টা।