“Morning shows the day”, কথাটা বিশ্বাস করেন কি না জানি না তবে এটা সত্যি যে আপনার মেজাজ সারাদিন কেমন থাকবে তা অনেকটাই নির্ভর করে আপনার সকালের মেজাজের ওপরে। অথচ আমরা কি সকালে নিজের মন ভালো করার জন্য একটুও সময় দেই? সারাদিন এবং রাতেও অনেকটা কাজ করে দেরি করে ঘুমিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠি অ্যালার্মের চিৎকারে। কোনমতে নাকেমুখে খাবার গুঁজে কাজে বের হয়ে পড়ি। নেই কোনও বিনোদন, নেই ব্যায়াম বা সৃজনশীল কোনও কাজ। এই নিরস জীবনযাত্রায় কতটুকু উপকৃত হচ্ছেন আপনি সেটা কখনো চিন্তা করে দেখছেন? এতে যেমন শারীরিক এবং মানসিক চাপের সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি আমাদের মনটা যান্ত্রিক হয়ে উঠছে। আর আমাদের দিনটাও যে খারাপ যাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। নিজেদের যান্ত্রিক জীবনের এই চক্র থেকে বের হয়ে আসার সময় এখনই। একটু সময় নিন আর গড়ে তুলুন কিছু সহজ অভ্যাস। এর ফলে আপনার সকালটা যেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠবে তেমনি ভালো হয়ে উঠবে আপনার জীবনের মান। আর সবচাইতে মজার ব্যাপার হল, আপনি এই কাজগুলো করতে পারবেন বিছানায় বসেই!
ফোনের দিকে হাত বাড়াবেন না:
মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রাখার কারণে ঘুম থেকে উঠেই আমরা ফোনটা হাতে নেই আর দেখা শুরু করি আমাদের ইমেইল বা মেসেজের তালিকা। মোবাইল কোলে নিয়ে ঘুমানোর এই অভ্যাসটা যতটা সম্ভব বর্জন করুন। কারণ সকালে উঠেই যদি অন্য কারও (বা অফিসের) ইমেইল পড়ে আপনার মাঝে “কাজ করতে হবে” এই মনোভাব তৈরি হয়ে যায় তাহলে সকালটা মাটি হয়ে যাবার সম্ভাবনা একশভাগ। তাহলে কি করবেন? মোবাইল ফোনের অ্যালার্ম ব্যবহার বাদ দিয়ে একটা অ্যালার্ম ঘড়িই কিনে নিন। আর আপনি যখন ঘুমাতে যাবেন তখন আপনার মোবাইলটাকেও ঘুমাতে দিন অর্থাৎ তাকে চার্জে দিয়ে রাখুন এবং সম্ভব হলে অন্য কোনও ঘরে রাখুন মোবাইলটাকে। এতে আপনার ঘুমও ভালো হবে।
কল্পনা করুন একটা চমৎকার দিন:
কল্পনার শক্তি পারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে। এমন নয় যে রূপকথার মতো নিখুঁত একটা দিন কল্পনা করে নেবেন আপনি। কিভাবে আপনার দৈনন্দিন জীবনের একটি দিন অনেক আনন্দময় হয়ে উঠছে সেটাই কল্পনা করুন। আজকের দিনে কি কি কাজ আপনি করলে খুশি থাকবেন তা কল্পনা করুন। এর ফলে আপনার লক্ষ্য পূরণ অনেক সহজ হয়ে উঠবে।
আড়মোড়া ভাঙ্গুন:
সকালে অনেকটা সময় নিয়ে আড়মোড়া ভাঙুন আর বড় করে একটা তৃপ্তির হাই তুলুন। এই ছোট্ট কাজটায় আপনার শরীর জড়তা কাটিয়ে উঠবে, শরীরে রক্ত চলাচল ভালো হবে আর আপনার টেনশন কমিয়ে দেবে। আর এই কাজটা করলেই আপনার যে ঝরঝরে ভাবটা আসবে তা তো উপরি পাওনা!
বিছানায় বসে করা যায় এমন কিছু ব্যায়াম করুন:
হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করতে পারেন শুয়ে কিংবা বসেই। এতেও আপনার শরীর নতুন একটি দিন শুরু করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে আর এর জন্য আলাদা কোনও প্রস্তুতিরও দরকার হবে না আপনার।
কৃতজ্ঞ থাকুন:
সকালে উঠে মনে মনে এমন কয়েকটি জিনিসের তালিকা তৈরি করুন যেগুলোর ব্যাপারে আপনি কৃতজ্ঞ। জীবনের প্রতি এভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলে আপনার যেমন মন ভালো হবে তেমনি জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও একটু একটু করে পরিবর্তন হয়ে যাবে আপনার। আর সকালে উঠেই যদি এমন ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে দিন শুরু করতে পারেন তাহলে আপনার সারাটি দিন ভালো যেতে বাধ্য!
ধ্যানের মধ্য দিয়ে দিন শুরু করুন:
একেবারে ঘটা করে, মেডিটেশনের সিডি ছেড়ে, ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে ধ্যান করতে হবে না। বিছানায় সোজা হয়ে বসে চোখ বন্ধ করুন। গভীর নিঃশ্বাস নিন। নিজের মন থেকে নেতিবাচক সব চিন্তা দূর করে মনটাকে খালি করে দেবার চেষ্টা করুন। বাইরের পাখির ডাক বা নিজের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনুন মন দিয়ে। মাত্র পনেরো মিনিট এভাবে ধ্যান করলে আপনার আত্মিক ও মানসিক যে প্রশান্তি আসবে তার সাথে আর কিছুর তুলনা হয় না।
ডায়েরি লিখুন:
ডায়েরি লেখার চল এখন প্রায় সম্পূর্ণই উঠে গেছে। এই যান্ত্রিক জীবনে কাগজ কলমের সাথে আমাদের যোগাযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু সুন্দর কাগজে রঙিন কালি দিয়ে গুছিয়ে কিছু কথা লিখলে যতটা ভালো লাগে, ফেইসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট করাতে কি একই পরিমাণ আনন্দ? ভেবে দেখুন তো! দিনের কাজের তালিকা বা আপনার চিন্তাগুলোকে গুছিয়ে লিখে ফেললে আপনার মাথার ভেতরটাও কিন্তু নিজে থেকেই অনেকটা গুছিয়ে আসবে। আর সবসময় একঘেয়ে টাইপ করার থেকে মুক্তি পেয়ে আপনার নিজেরই শান্তি লাগবে।
গান শুনে দিন শুরু করুন:
গান শুনতে ভালো লাগে আপনার? নিজের পছন্দের গান শুনে দিনটা শুরু করুন। তবে এমন গান শুনুন যাতে রয়েছে আনন্দ এবং আশার কথা। মন খারাপ করা বিরহের গান শুনলে উল্টো দিনের শুরুতেই মন মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে!