মুন্সিগঞ্জ, ২০ এপ্রিল, ২০২১, শ্রীনগর প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে আড়িয়াল বিলের কৃষি জমির মাটি কেটে লুট করে নিচ্ছে প্রভাবশালী একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ কাজে বিলে প্রায় ৪০টি স্কেভেটর কৃষি জমির মাটি কাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও মাটি পরিবহন করার কাজে প্রায় ২ শতাধিক মাহিন্দ্র ট্রাক ও শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নসিমন দিনরাত চলাচল করছে।
অবৈধ এসব ট্রলির ওভারলোডিংয়ের কারণে নষ্ট হচ্ছে অত্র এলাকার গ্রামীন কাঁচা-পাকা রাস্তা।
এমন চিত্রই লক্ষ্য করা গেছে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাঘড়া ইউনিয়নের ছত্রভোগ ও জাহানাবাদ এলাকা জুড়ে।
ছত্রভোগ সংলগ্ন আড়িয়াল বিল পয়েন্টে ওই এলাকার মোজাম্মেল চৌধুরীর নের্তৃত্বে ও ডাকাত ল্যাংড়া জলিলের নিয়ন্ত্রণে যুবরাজ, সালাম দুবলী, খালেক অপরদিকে একই ইউনিয়নের রুদ্রপাড়ার নিছিমপুর সংলগ্ন আড়িয়াল বিল অংশে আব্দুর রশিদ, ইমরান, আতাহার, হারুন, চঞ্চল ভূইয়াসহ বড় একটি সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বিলের শত শত হেক্টর আবাদি জমির মাটি লুট করে কোটি টাকার বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে।
মাটি সিন্ডিকেটটির দাপটে স্থানীয়রা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সচেতনমহল আড়িয়াল বিলের দস্যু সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মী হয়ে পরেছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাঘড়ার ছত্রভোগ ও রুদ্রপাড়া আড়িয়াল বিলের অংশে বেশ কয়েকটি স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ট্রলিতে ভরা হচ্ছে। মাটি টানার কাজে প্রায় শতাধিক মাহিন্দ্রা ও টমটমসহ ড্রামট্রাকও চলাচল করতে দেখা গেছে। এতে করে শ্রীনগর-দোহার সড়কের সংযোগ রাস্তা হিসেবে পরিচিত ছত্রভোগ-জাহানাবাদ প্রায় ২ কিলোমিটার পাকা সড়কটিতে ওভারলোডিংয়ের কারণে প্রায় বিলিন হওয়ার পথে। এছাড়াও রুদ্রপাড়ার নিছিমপুরে একটি কাঁচা রাস্তায় এসব মাটি ট্রলির কারণে সম্পূর্ণ বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া বর্ষায় এসব মাটি বিক্রির জন্য আড়িয়াল বিলের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য টিলা/স্তুপ করে রাখা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, দিন রাত সমানতালে এসব মাটির ট্রলি ওই রাস্তায় চলাচলের কারণে ধূলা বালিতে নাকাল হচ্ছে পথচারী। এতে করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন আশপাশের বাসিন্দারা। বিশেষ করে বৃদ্ধসহ শিশুরা মারাত্বক শ্বাষ কষ্টে ভুগছেন। দেখে মনে হবে প্রতিবাদ করার ভাষা নেই তাদের।
কারণ জানতে চাইলে এলাকাবাসীরা বলেন, যারা নিয়ম না মেনে বিলের কৃষি জমির মাটি বিক্রি করছেন তারা প্রভাবশালী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তো সবই জানেন, তারাও কিছু বলেন না? স্থানীয় কৃষক শফিকুল (৬০) কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, বিলে নিজের ৭০ শতাংশ জমিতে ইরি ধান রোপন করেছিলেন। দুঃখের বিষয় আমি বাধ্য হয়েই এখন আর ঐ জমিতে যাইনা।
কারন হিসেবে তিনি বলেন, বিলের নিছিমপুর অংশে তার জমিটি স্কেভেটর দিয়ে সমান করে দেয়ার নামে জমির সব মাটি কেটে নিয়ে গেছে মাটি লুটেরা দল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একটি সূত্র জানায়, এই এলাকার মাটি সিন্ডিকেটের সদস্যরা পার্শ্ববর্তী দোহারের একটি প্রভাবশালী মহলের সহযোগীতায় আড়িয়াল বিলের মাটি কেটে নিচ্ছে। যদি কেউ মাটি সিন্ডিকেটের বিষয়ে কথা বলে তাহলে রাতের আঁধারে চলে নির্যাতন। এতে করে ভূক্তভোগী কেউ সিন্ডিকেটটির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতি ট্রলি কৃষি জমির মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। দূরুত্ব ভেদে এর দাম কম বেশীও হতে পারে। এখানকার বেশীর ভাগ মাটি বাঘড়াসহ দোহার এলাকার ফুলতলায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় কয়েক লাখ টাকার মাটি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে সিন্ডিকেট মহলটি আড়িয়াল বিলের বিভিন্ন স্থানে এসব মাটি কেটে পাহাড় সমান উঁচু করে রাখছেন। জোয়ারের পানি আসার সাথে সাথে ট্রলার ও বাল্কহেডে করে এসব মাটি বিক্রির উৎসব শুরু হবে। আড়িয়াল বিলের এই মাটি সিন্ডিকেটের প্রায় সদস্যর বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে । সিন্ডিকেটটি আড়িয়াল বিলে এয়ারপোর্ট বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
মোজাম্মেল চৌধুরীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছুদিন যাবত মাটি কাটছি। বিলে তো অনেকেই জমির মাটি কাটছে আমি তো একা নই!
ট্রলির ওভারলোডিংয়ের কারনে সরকারি রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তা ভাঙলে আবার রাস্তা হবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একাধিকবার বন্ধ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
শ্রীনগর উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. রাজিউল্লাহ’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনতে পেয়েছি ওভারলোডিংয়ের কারণে রাস্তাটি বেহাল হয়ে গেছে। উপজেলায় আগামী মাসিক সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করবো।
এ ব্যাপারে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রণব কুমার ঘোষের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। কৃষি জমির মাটি কাটা যাবেনা। দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।