১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
সোমবার | বিকাল ৪:১৩
শ্রীনগরের বাঘড়া বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৯ অক্টোবর, ২০২২, শ্রীনগর প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাঘড়া স্বরুপ চন্দ্র পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

সভাপতির এমন কর্মকান্ডের বিষয়টি জানাজানি হলে গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বাঘড়া বিদ্যালয়টির সভাপতি শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাইদুর রহমান পিন্টু। তিনি প্রায় দেড়যুগ ধরে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন।

দায়িত্বকালীন এই সময়ের মধ্যে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২২ সালের ২৫ মে বিদ্যালয়ের ৩৩নং ভাউচারে বিদ্যালয়ের পুরাতন অফিস কক্ষের জলছাদ দেওয়ার জন্য উত্তোলন করা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা। বাস্তবে কোন জলছাদের কাজ হয়নি। ২০২১ সালের ১৮ জুলাই বিদ্যালয়ের পুকুরপাড় ভরাটের জন্য ১০নং ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয় ৯৫ হাজার টাকা। একই কাজের জন্য ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারী ২নং ভাউচারে ২ লাখ ৬৫ হাজার ও ৩নং ভাউচারে ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, পুকুরে ১ টাকার মাটিও ভড়াট করা হয়নি। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাঘড়া বাজারের মেসার্স আবীর এন্টারপ্রাইজের ভাউচারে মাধ্যমে বিদ্যালয়টির ৩ টন রড, ২৫০ বস্তা সিমেন্ট ও ২৭ হাজার ইট ক্রয় বাবদ ৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বিক্রেতার স্বাক্ষরের স্থানে মো. শান্ত নামের একজনের স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ ওই প্রতিষ্টানে গিয়ে জানা গেছে এতো টাকার রড সিমেন্ট তিনি কখনোই স্কুলে বিক্রি করেননি।

প্রতিষ্ঠানটির মালিক নুরুন্নবী বলেন, ২৭ হাজার ইট বিক্রির বিষয়টি পুরোপুরি ভুয়া, আর শান্ত নামে এই প্রতিষ্ঠানে কেউ কখনো ছিল না। ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী একই বাজারের আলমাস স্টিলের ১৭৭৩ ভাউচারে স্কুলের দরজা, জানালা তৈরি ও মেরামত বাবদ পরিশোধ দেখানো হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিষ্টানটিতে গিয়ে ওই ভাইচারের মালিক পক্ষের কপিটি পুরোই সাদা দেখা যায়।

এ বিষয়ে মালিক আলমাছ খান বলেন, এবছর তিনি স্কুলের কাজ করেননি, আর ভাউচারের স্বাক্ষরটিও তার নয়।

২০১৯ সালে ২৪ মে দোহার উপজেলার ফুলতলা বাজারের রাইয়ান এন্টারপ্রাইজ থেকে টাইলস ক্রয় বাবদ দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা। কিন্তু রাইয়ান এন্টারপ্রাইজে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তারা বিদ্যালয়ে কোন টাইলস বিক্রি করেননি।

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি পানির পাইপ লাইন মেরামতের মজুরি বাবদ উত্তোলন করা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫শ’ টাকা।

সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১ গজ পানির পাইপলাইন টানতেই এই টাকা খরচ করা হয়েছে। বিদ্যালয়টির সন্মুখের গেটটি ২০১৭-১৮ সালের এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের অধীনে নির্মাণ করা হয়। এই গেটটি নির্মাণ বাবদ উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। এভাবে বিভিন্ন ভূয়া ভাউচারে উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা।

অপর একটি সূত্র জানায়, ৪টি নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিদ্যালয়টির সভাপতি প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির হিসাব রক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা তার অধীনে চাকুরী করি তাই আমাদের করার কি আছে? আর ভাউচারের স্বাক্ষর আমার নয়। তা জালিয়াতি করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

বিদ্যালয়ের ক্রয় কমিটির সদস্য শিক্ষিকা হালিমা বলেন, এসব ভাউচারের বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।

প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, সভাপতি যখন যেভাবে টাকা তুলতে বলেছে সেভাবেই তাকে টাকা তুলে দিয়েছি।

কিন্তু সভাপতি বলেছেন ক্রয় কমিটির সিদ্ধান্তে প্রধান শিক্ষক টাকা তুলে তছরুপ করেছেন এমন কথায় প্রধান শিক্ষক জানান, আমি এমন করে থাকলে সভাপতি হিসাবে ভাউচারে স্বাক্ষর দিল কে? আর আমার বিরুদ্ধে তিনি কেন ব্যবস্থা নিলেন না?

বিদ্যালয়ের সভাপতি সাইদুর রহমান পিন্টু বলেন, প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা তুলে তছরুপ করেছে। কিন্তু সভাপতি হিসাবে আপনি কেন ব্যবস্থা নেননি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।

error: দুঃখিত!