লৌহজং উপজেলার দক্ষিণ মশদগাঁও গ্রামের সার্বজনীন কালীমন্দিরে জন্মাষ্টমীর মঞ্চ জোর করে দখলের চেষ্টা করেন সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম। পরে দখলে ব্যর্থ হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অনুষ্ঠানে আগতদের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেন।
অ্যটর্নি জেনারেল মাহবুব গত কয়েকদিন ধরেই নিজেকে ‘এমপি প্রার্থী’ হিসেবে ঘোষনা করে এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এই ঘটনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান এক রকম পন্ড হয়ে যায়।
তবে স্থানীয় প্রশাসন দায় এড়াতে দাবি করেছে কিছু বিঘ্ন ঘটলেও অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত লৌহজং উপজেলা চেয়ারম্যান এবং লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওসমান গনি তালুকদার বলেন, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাহেব আগেই সেখানে গিয়ে মঞ্চে আয়োজকদের ব্যানার খুলে ফেলে তার সঙ্গে আনা ব্যানার লাগিয়ে বহিরাগতদের নিয়ে পুরো মঞ্চ দখল করে নেয়ার অপচেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ কয়েক হাজার মানুষ অনুষ্ঠানস্থলে যাই। অধ্যাপক সাগুফ্তা ইয়াসমিন এমিলিসহ আয়োজকরা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দকে মঞ্চে নিয়ে যান। কিন্তু মঞ্চের একজন উঠে দাঁড়ালেও আর সবাই মঞ্চের সকল চেয়ার দখল করে বসে আছেন। চেয়ারে এমন লোকজনেরা বসেছিলেন যে, কয়েকজন ছাড়া কাউকে চেনা যায়নি।
মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফ্তা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, ‘বিগত ২২ বছর ধরে এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই জন্মাষ্টমীর উৎসব সকলে মিলে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করে আসছিলাম। কিন্তু আজকের (রবিবার) এই ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক। কিন্তু সেখানে সকল চেয়ার দখল করে বসে থাকেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাহেবের বহিরাগত লোকজন এবং তার পাশে বসা ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজুল আলম ফক্কু ব্যাপারী। এই সময় আমার জন্য মাত্র একটি চেয়ার ছাড়লেও উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ অন্যরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাই তাদের রেখে আমি বসতেও পারছি না। এই পরিস্থিতিতে উপস্থিত সাধারণ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। অবস্থা বিশৃঙ্খল হওয়ার আশঙ্কায় দ্রুত আমি এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাহেবকে অনুরোধ করি আপনি আসুন আমরা দু’জন মিলে সবাইকে নিয়ে অন্তত র্যালিটি করি। উনি ওঠার মুহূর্তে বিএনপির সাবেক সভাপতি ফক্কু ব্যাপারী তাকে ধমক দিয়ে যেতে বাধা দেন।
পরে আমি নেতৃবৃন্দ এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে র্যালি করে চলে আসি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ৮টি মাইক্রোবাস নিয়ে এসব বহিরাগতদের নিয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাহেব পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়ে এখানে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছেন।
এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘এমপির লোকজন এসে স্লোগান দিয়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। আর আমার সঙ্গে গানম্যান থাকে, বহিরাগতদের আনার সুযোগই নেই। যারা ছিল সবাই আওয়ামী লীগেরই ছিল।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত আয়োজকদের একজন অধ্যাপক ডাঃ খবিন্দ চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমাদের ব্যানার খুলে নিয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল সাহেবের লোকজন নিজেদের সঙ্গে আনা ব্যানার লাগিয়ে দেয়ার ঘটনায় আমরা বিস্মিত হয়ে যাই।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুন্সিগঞ্জ জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর চক্রবর্তী বলেন, ‘ঘটনাটি অনভিপ্রেত। অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময় ছিল সাড়ে ৪টা। কিন্তু এ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব লোকজন নিয়ে আগেই চলে আসেন এবং ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। তার সঙ্গে যারা ছিলেন এদের অনেককেই আমরা চিনি না।’ তিনি আরও বলেন, তখন মাইক নিয়ে আমি বললাম, ‘হিন্দুদের অনুষ্ঠানে আপনাদের এমন আচরণ আমাদের খুব কষ্ট দিচ্ছে। আমরা কি তাহলে নিজ দেশে পরবাসী?’
উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য বিনয় কুমার মালো বলেন, এ্যাটর্নি জেনারেল সাহেবের লোকজন যখন ব্যানার সরাচ্ছে। অবস্থা খারাপ দেখে আমরা রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম জানান, আয়োজকদের ব্যানারে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নামসহ ব্যানার লাগানো ছিল। এ্যাটর্নি জেনারেল সাহেবের কর্মীরা সেই ব্যানার নামিয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে আসা ব্যানার লাগানোর চেষ্টা করেন। উভয়পক্ষের লোকজন উত্তেজিত অবস্থায় ছিল। তবে সংসদ সদস্য ও এ্যাটর্নি জেনারেলদ্বয় তাদের কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেছেন। এ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে থাকা কিছু অপরিচিত লোক ছিল। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।