১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সন্ধ্যা ৬:৫৬
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
লঞ্চ ডুবি: আটক হয়নি জাহাজ, নাম ছাড়াই মামলা
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৭ এপ্রিল, ২০২১, প্রধান প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)

গত রোববার (৪ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসা এম এল সাবিত আল হাসান নামের ডুবে যাওয়া লঞ্চটি সোমবার (৫ এপ্রিল) বেলা ১২ টা’র দিকে উদ্ধার করা হয়। লঞ্চের ভেতর থেকে রোববার রাতে ও গতকাল সোমবার দিনভর ২৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর আজ মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) নদী থেকে নারী ও শিশু সহ আরও ৫ জনের মরদেহ পাওয়া যায়। এ নিয়ে এ ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা ৩৪ জন।

ঘটনার ৩ দিন পর আজ সকালে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবিতে হতাহত হওয়ার ঘটনায় কার্গোর চালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানায় হত্যার অভিযোগ এনে মামলাটি করেন বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) বাবুলাল বৈদ্য। মামলায় চালক ছাড়া অন্য কারও নাম ও আসামির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। তবে হত্যার উদ্দেশ্যে বেপরোয়া গতিতে পণ্যবাহী কার্গোটি চালিয়ে লঞ্চটি ডুবিয়ে ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, লঞ্চডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় কার্গো জাহাজের চালকসহ সংশ্লিষ্ট অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ কার্গো জাহাজটি জব্দসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনবে।

মামলার বাদী বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা বাবুলাল বৈদ্য বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে ও বেপরোয়া গতিতে নৌযান চালিয়ে ৩৪ জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই লঞ্চডুবির জন্য এসকেএল-৩ কার্গো জাহাজকে দায়ী করা হয়েছে। মামলায় কেন সেই জাহাজের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে কোথাও ওই জাহাজের নাম দেখা যায়নি। নিশ্চিত না হওয়ায় অজ্ঞাত কার্গো জাহাজের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তদন্তে অভিযুক্ত কার্গো জাহাজের নাম বেরিয়ে আসবে।

গত রোববার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬ টা ১৫ মিনিটের দিকে এসকে-৩ নামে বড় আকৃতির একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ ‘আমার বিক্রমপুর’ জানান, এ ঘটনায় আজ বুধবার পর্যন্ত ঘাতক জাহাজটিকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ-পুলিশ ঘাতক জাহাজটি উদ্ধারে তৎপর রয়েছে। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক অবস্থায় দাফন-কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হয়েছে।

জীবন গেলো যাদের

মুন্সিগঞ্জ সদরের উত্তর চর মসুরা এলাকার সখিনা বেগম (৪৫), একই এলাকার বিথী (১৮) ও তার এক বছর বয়সী মেয়ে আরিফা, দোলা বেগম (৩৪), মুন্সিগঞ্জ সদরের রুনা আক্তার (২৪), মুন্সিগঞ্জ মোল্লাকান্দির সোলেমান বেপারী (৬০) ও তার স্ত্রী বেবী বেগম (৬০), মুন্সিগঞ্জ মালপাড়ার হারাধন সাহার স্ত্রী সুনিতা সাহা (৪০) ও তার ছেলে বিকাশ (২২), মুন্সিগঞ্জ সদরের প্রীতিময় শর্মার স্ত্রী প্রতিমা শর্মা (৫৩), মুন্সিগঞ্জ চর কিশোরগঞ্জের মোঃ শামসুদ্দিন (৯০) ও তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫), বরিশালের উটরা উজিরপুরের হাফিজুর রহমান (২৪), তার স্ত্রী তাহমিনা (২০) এবং এক বছর বয়সী শিশুপুত্র আবদুল্লাহ, মুন্সিগঞ্জ দক্ষিণ কেওয়ারের নারায়ণ দাস (৬৫) ও তার স্ত্রী পার্বতী দাস (৪৫), নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কল্যান্দী এলাকার আজমির (২) (ঘটনার সময় সে দাদা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ছিলো, দাদা সাইফুল বেঁচে গেছেন), মুন্সিগঞ্জ সদরের শাহ আলম মৃধা (৫৫), একই এলাকার মহারানী (৩৭), ঢাকার শনির আখড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩০) ও তাদের ৭ মাস বয়সী মেয়ে মানসুরা, মুন্সিগঞ্জ সদরের ছাউদা আক্তার লতা (১৮), শরিয়তপুরের নড়িয়ার আবদুল খালেক (৭০), ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার মোছাঃ জিবু (১৩), মুন্সিগঞ্জের খাদিজা বেগম (৫০), নারায়ণগঞ্জের বন্দরের দক্ষিন সাবদির নুরু মিয়ার ছেলে মোঃ নয়ন (১৯) ও সাদিয়া (১১)।

লঞ্চডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরীকে আহবায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশের প্রতিনিধি এবং সদরের ইউএনওকে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে লঞ্চডুবির প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও এর দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে  সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুছ ছাত্তার শেখ। কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মো. রফিকুল ইসলাম। আর কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন – নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন সরকার,  বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) প্রধান প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নিম্নে নহে), ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি এবং নৌ পুলিশের একজন প্রতিনিধি।

error: দুঃখিত!