নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের দুটি মামলায় র্যাবের তিন সদস্য আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গতকাল সোমবার নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
র্যাবের সদস্যরা আদালতে বলেন, সাবেক র্যাব কর্মকর্তা আরিফ হোসেন ও এম এম রানার নির্দেশে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল অপহরণ ও খুনের দিনে সকালে দুটি সাদাপোশাকের দল গঠন করে আদালত এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে রাতে ইট-বালুভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে যাওয়া হয় ওই কর্মকর্তাদের নির্দেশে। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত ২৭ জুন মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন।
গতকাল সাক্ষ্য দেন র্যাব-১১-এর তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) ও বর্তমানে ময়মনসিংহ সেনানিবাসে কর্মরত আতিয়ার রহমান, উপসহকারী পরিচালক ও বর্তমানে র্যাব-১-এ কর্মরত সেলিম খান এবং তৎকালীন হাবিলদার ও বর্তমানে উপসহকারী পরিচালক হিসেবে র্যাব-৫-এ কর্মরত আবদুস সাত্তার।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে সেলিম খান বলেন, ‘ওই দিন সকাল সাড়ে নয়টায় আদমজী ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর আরিফ হোসেনের নির্দেশে সাদাপোশাকের দল প্রস্তুত করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মেজর আরিফের নেতৃত্বে সাদাপোশাকের একটি দল নীল রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস নিয়ে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে যায়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হাবিলদার এমদাদুল হক, ল্যান্স নায়েক বিল্লাল মেজর আরিফের নির্দেশে ক্যাম্পে বসে ইটভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা তৈরি করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকজন র্যাব সদস্য সাদা মিতসুবিশি মাইক্রোবাসে করে ইটভর্তি বস্তা ও রশি নিয়ে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে যান।’
সরকারি কৌঁসুলি এস এম ওয়াজেদ আলী বলেন, র্যাবের তৎকালীন তিন সদস্যের সাক্ষ্যে সাত খুনের ঘটনার সঙ্গে কারা কারা ছিলেন? কার কী ভূমিকা ছিল, এর বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে। ঘটনার দিন আরিফ হোসেন ও এম এম রানার নির্দেশেই সাদাপোশাকের দল গঠনসহ তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছিল। সাতজনকে আটক করে গাড়িতে তুলে নিয়ে মেজর আরিফের নেতৃত্বে সাদাপোশাকের র্যাব দলটি চলে যায়।
সাত খুনের ঘটনার দুটি মামলায় ১২৭ জন সাক্ষীর মধ্যে পৃথক দুই মামলার বাদী, যুগ্ম জেলা জজ, পাঁচজন বিচারিক হাকিম, র্যাব কর্মকর্তা-সদস্যসহ ৭১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে গতকাল সকালে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন, এম এম রানাসহ ২৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। তারেক সাঈদ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন—গণমাধ্যমে এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর গতকাল আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
গতকাল পরপর চতুর্থ দিনের মতো নূর হোসেনকে কাঠগড়ার বাইরে একটি বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়। নূর হোসেন অসুস্থ, তাঁর আইনজীবী আদালতকে এ তথ্য জানালে আদালত তাঁকে কাঠগড়ার বাইরে বেঞ্চে বসার নির্দেশ দেন।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। ৩০ এপ্রিল ছয়জনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে। পরদিন ১ মে আরও একজনের লাশ একই স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়।