কিছু বিশেষ ধরনের রোলারকোস্টার কিডনির পাথর দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এমন অদ্ভুত বিষয় নিয়ে চালানো গবেষণাটিই এবার জিতে নিয়েছে মেডিসিন বিভাগের ইগ নোবেল।
আগেই বলে রাখি, ইগ নোবেল হচ্ছে নোবেল পুরস্কারেরই প্যারোডি সংস্করণ। এটা একধরনের সম্মানজনক অর্জন, যা মানুষকে প্রথমে হাসায়, পরে ভাবায়। ‘অ্যানালস অফ ইমপ্রোবাবল রিসার্চ’ নামে এক ম্যাগাজিনের উদ্যোগে এই অদ্ভুত নোবেলটি দেওয়া শুরু হয় ১৯৯১ সালে।
কিনডির পাথর সাড়াতে রোলারকোস্টারের ভূমিকা বিষয়ক গবেষণাটি চালান মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের অধ্যাপক ডেভিড ওয়ার্টিংগার। তার একজন রোগী কয়েক বছর আগে ছুটিতে ডিজনিল্যান্ড ঘুরে এসে জানান, সেখানকার ‘বিগ থান্ডার মাউন্টেন’ নামক রাইডে চড়ার পর তার একটি কিডনির পাথর বেরিয়ে এসেছে। এমনকি প্রতিবার ওই রাইডে চড়ার পর একটি করে কিডনির পাথর বেরিয়ে আসতে থাকে তার।
এই গল্প শুনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন ডেভিড। তিনি কৃত্রিম পাথর সম্বলিত মুত্রাশয়ের একটি সিলিকন মডেল তৈরি করেন এবং তা নিয়ে বিভিন্ন রাইডে চড়েন। দেখা যায়, রোলারকোস্টারের মতো রাইডগুলো আসলেই কাজ করে। আরও দেখা যায়, অনেক ভীতিকর রোলারকোস্টার রাইডের তুলনায় কার্যকর বিগ থান্ডার মাউন্টেন বেশি কার্যকর। এর কারণ হিসেবে ডেভিড উল্লেখ করেন, রাইডটি উপরে-নিচে এবং ডানে-বামে অনেক বেশি চলাফেরা করে।
প্রতিবছরের মতো এবারও মেডিসিনসহ ১০টি বিষয়ের ওপর ইগ নোবেল দেওয়া হয়। সবই মৌলিক গবেষণা এবং প্রায় সবগুলোই স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত।
এবারের ইগ নোবেলের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
মেডিক্যাল:
স্বনিয়ন্ত্রিত কোলনস্কপির পদ্ধতি বিষয়ক গবেষণা চালিয়ে মেডিক্যাল বিভাগের ইগ নোবেল জিতেছেন জাপানি গবেষক আকিরা হরিউচি। বলে রাখা ভালো, কোলনস্কপি হচ্ছে পায়ুপথ, রেকটাম ও কোলন বা বৃহদন্ত্রের একটি পরীক্ষা। এতে একটি নমনীয় টিউবের আগায় সিসিডি ক্যামেরা যুক্ত করে তা পায়ুপথে প্রবেশ করানো হয়।
সাহিত্য:
পণ্যের সঙ্গে দেওয়া নির্দেশিকার বা ব্যবহারবিধি ওপর তদন্ত চালিয়ে একদল গবেষক জিতেছে সাহিত্য বিভাগের পুরস্কার। এই গবেষকদের মতে, প্রায় ক্ষেত্রেই পণ্যের জটিল নির্দেশিকা ভোক্তাদের কাছে ভিন্ন অর্থ তুলে ধরে।
অর্থনীতি:
অফিসের অত্যাচারী বসকে শায়েস্তা করতে ‘ভুডু’ পুতুল ব্যবহার কর্যকরি কিনা, এ বিষয়ক গবেষণাটি জিতে অর্থনীতি ক্যাটাগরিতে।
রসায়ন:
মানুষের মুখের লালা পরিষ্কারক হিসেবে কার্যকর কিনা, প্রশ্নটির উত্তর দিচ্ছে রয়াসন বিভাগের ইগ নোবেল। দেখা যায়, সিরামিকের রঙিন অংশগুলো ও গোল্ড লিফে এটি আসলেই কার্যকর।
শান্তি:
শান্তির নোবেল নিয়ে যেমন অনেক হইচই চলে, তেমনি এ বিষয়ক ইগ নোবেলটিও কম যায়না। গাড়ি চালানোর সময় চিৎকার করার সঙ্গে দুর্ঘটনা প্রবণতার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা চালিয়ে শান্তিতে ইগ নোবেল জিতেছে স্পেনের একটি দল।