মুন্সিগঞ্জ, ২৮ জুলাই, ২০২১, প্রধান প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)
আনুমানিক ৯০০ বছর আগে পাশাপাশি গড়ে উঠা একটি বট গাছ ও তেতুল গাছ আজও দাড়িয়ে আছে কয়েক প্রজন্মের ইতিহাস ও কালের স্বাক্ষী হয়ে। এই গাছ দুটি আজও রহস্য এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে। গাছ দুটিকে ঘিরে নানারকম শ্রুতিকথা প্রচলিত আছে এই অঞ্চলে।
বাংলায় সেন রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা ছিলেন বল্লাল সেন। তাঁর শাসনকাল ছিলো ১১৬০ থেকে ১১৭৯ খ্রিষ্টাব্দ। প্রাচীন বিক্রমপুর সংক্রান্ত বিভিন্ন বই ও ইতিহাসবিদদের মতে, রাজা বল্লাল সেনের শাসনামলেই প্রাকৃতিকভাবে এই বট গাছ ও পাশাপাশি তেতুল গাছটি গড়ে উঠে।
১০৬০ সালে রামপাল নগরে বল্লাল সেনের জন্ম হয়। তার পিতা বিজয়সেন গৌড়াধিপতি চন্দ্রসেনের কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। শৈব বরে তার জন্ম হওয়ায় বিজয়সেন পুত্রের নাম রাখেন “বরলাল”, পরবর্তীতে “বল্লাল” শব্দটি তারই অপভ্রংশ হয়ে দাঁড়ায়। চৌদ্দ বছর বয়সেই অস্ত্রবিদ্যায় ও শাস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠেন বল্লাল সেন।
বল্লাল সেনের নামে মুন্সিগঞ্জের রামপাল ইউনিয়নে ‘বল্লাল বাড়ি’ নামে একটি গ্রামও রয়েছে। এই রামপাল ইউনিয়নের পূর্ব দেওসার এলাকায় রামপাল হাইস্কুল ও রাজা বল্লাল সেনের ঐতিহাসিক দীঘির পাশেই কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে এই গাছ দুইটি।
সবচেয়ে অলৌকিক ব্যাপার হলো- এখানে অবস্থিত বট গাছটির নিচের মাটি একসময় চিনির চেয়েও মিষ্টি ছিল। বর্তমানে এই বিরাট গাছটির গোড়ার শিকরের অধিকাংশ জায়গায় কোন মাটি নেই। আশ-পাশের লোকজন এই আশ্চর্য গাছের মাটির স্বাদ নিত। অনেকেই তাবিজ বা ঝাড়ফুকের কাজে এই গাছের তলার মাটি কেটে নিয়ে সংরক্ষণ করে রাখত। এছাড়া পাশের রামপাল হাইস্কুলের কোমলমতি শিশুরা মিষ্টি গুড়ের মত এই মাটি মজা করে খেত। অন্যদিকে পাশে থাকা ঐতিহাসিক তেতুলগাছের গোড়ার মাটি ছিলো লবনাক্ত।
একসময় প্রাচীন বিক্রমপুরের ইতিহাসের অংশ রাজা বল্লাল সেনের বিভিন্ন নিদর্শন দেখতে এসে এই গাছ দুটিও দেখতে আসতেন পর্যটকরা। বর্তমানে ইতিহাসের এই অংশ স্থানীয়দের অসচেতনতা ও উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে। হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন বিক্রমপুরের ঐতিহাসিক আরেকটি অংশ। গাছটির আশপাশের বেশ কিছু জমিও প্রভাবশালীরা বিভিন্ন উপায়ে দখল করে নিয়েছে। প্রাচীন বিক্রমপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় এই গাছ দুইটিকে ঘিড়ে সৌন্দর্য্যবর্ধন ও সংরক্ষণের দাবি নতুন প্রজন্মের।