আইন অনুযায়ী বায়ুতে ভাসমান বস্তুর গ্রহণযোগ্য মাত্রা ২০০ পিপিএম। কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি মাত্রার ধূলিকণা বায়ুতে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিমেন্ট কারখানাগুলো। কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে তা গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি। নেই ধূলা প্রতিরোধক ব্যবস্থা। প্রাথমিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই কাজ করছেন শ্রমিকরা। এতে ক্লিংকারের গুঁড়া, চুনাপাথর, ফ্লাই অ্যাশ, মাটিতে থাকা ধূলিকণা ও পারদ মিশে যাচ্ছে বায়ুতে। মারাত্মক দূষণ ঘটাচ্ছে পরিবেশের।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১০ সাল থেকে সিমেন্ট কারখানাগুলো নজরদারিতে আনে পরিবেশ অধিদপ্তর। সবচেয়ে বেশী মাত্রায় ফ্লাইং অ্যাস থাকায় সে সময় শাহ সিমেন্ট ফেক্টরিকে ২৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় । এছারাওক্রাউন সিমেন্ট কে ১৫ লাখ টাকা , মেট্রোসেম সিমেন্ট লিমিটেডকে ১৫ লাখ টাকা , এমিরেটস বাংলাদেশ সিমেন্টকে জরিমানা করা হয় ১৪ লাখ টাকা প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেডকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
প্রতিষ্ঠান গুলোকে জরিমানা করা হলেও বায়ু মান বজায় রাখতে সব কারখানাই ব্যর্থ বলে স্বীকার করেছে মালিকপক্ষ। জানতে চাইলে মেট্রোসেম সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শহিদউল্লাহ জানান, ‘কোনো সিমেন্ট কারখানাই ভাসমান বস্তু ২০০ পিপিএমের মধ্যে রাখতে পারছে না। প্রযুক্তি না থাকায় কোনো দেশই তা পারে না। হয় প্রযুক্তি দেন, আমরা তা গ্রহণ করব। নয়তো গ্রহণযোগ্য মাত্রা বাড়িয়ে ৫০০ পিপিএম করা হোক। বারবার জরিমানা করে এ সমস্যার সমাধান হবে না। এটা এক ধরনের হয়রানি।’
সিমেন্ট কারখানার ক্ষতিকর ধূলিকণা বায়ুর মাধ্যমে পরিবেশের সঙ্গে মেশে। বিভিন্ন কাঁচামাল মিশ্রণের ফলে সিমেন্ট তৈরি হয়। তাই এসব ধূলিকণা বিষাক্ত হয়ে থাকে। আশপাশের পরিবেশ, জীববৈচিত্র, কৃষিজমি ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে। গ্রহণযোগ্য মাত্রা অতিক্রম করে পরিবেশের যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, আইন অনুযায়ী কারখানাগুলোকে সে পরিমাণই জরিমানা করা হয়েছে।
সরেজমিন নির্মাণ প্রক্রিয়া পর্যাবেক্ষণ করে দেখা গেছে, , শাহ সিমেন্ট কারখানায় শত শত ট্রাক সিমেন্টের মূল কাঁচামাল ক্লিংকার আনা হয়। এসব ক্লিংকার ট্রাক থেকে নিচে ফেলার সময় চারদিক ধুলায় ভরে যায়। ট্রাক থেকে সরাসরি প্লান্টে ফেলা হলে এ ধুলার সৃষ্টি হতো না। প্যাকিং যেখানে হয়, সেখানে ধুলা হয় বেশি। বড় বড় পাথর আকৃতির ক্লিংকার ভাঙিয়ে গুঁড়াকরণ প্রক্রিয়ায়ও ধুলার সৃষ্টি হয়। এসব ধূলিকণা শ্বাসনালি দিয়ে প্রবশ করলে হাঁপানিসহ ফুসফুসে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। এটি শ্রম ঘন শিল্প হওয়ায় শ্রমিকরাই প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, এর মধ্যে ভারত, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সিমেন্ট রফতানি করে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। রফতানিতে অবদান রাখায় জাতীয়ভাবে স্বর্ণপদকও পেয়েছে ক্রাউন সিমেন্ট।
নিয়ম অনুযায়ী, দূষণের দায়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের জরিমানা হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের তালিকায় উঠে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এর পর অধিদপ্তরের দেয়া তালিকা থেকে পরিবেশ সুরক্ষার সারচার্জ আদায়ের লক্ষ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। নিজ নিজ দেশের আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কিনতে পারবে না। এ জন্য রপ্তানীমুখী প্রতিষ্ঠান গুলো নিয়ম মানলেও দেশীয় বাজারে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গুলো তেমন কোন নিয়ম মেনে চলে না।
মুন্সীগঞ্জের পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মিয়া মাহমুদুল হক এই বিষয়ে বলেন , পরিবেশ দুষনের জন্য সিমেন্ট ফ্যাক্টরি গুলো অবশ্যই দায়ী । ফ্লাইং অ্যাশ মারাত্নক ক্ষতি কর । আর একই সাথে অনেক গুলো ফ্যাক্টরি থাকায় পরিবেশ মারাত্নক ভাবে দুষিত হচ্ছে । এবিষয়ে নজরদারি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে,।