মুন্সিগঞ্জ, ৬ জানুয়ারি ২০২৪, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
মৃণাল কান্তি দাস মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন নাকি এখানে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন পুত্র কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী ফয়সাল বিপ্লব পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করবেন তা এখনই বলা বেশ কঠিন। তবে জয়ের ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত কোন ধরনের ছাড় দেবে না বিপ্লব এটা প্রায় নিশ্চিত।
অন্যদিকে, আসনটিতে টানা দুইবারের সংসদ সদস্য ‘ক্লিন ইমেজের’ মৃণাল কান্তি দাস বেশ ভালো সংখ্যক ‘নীরব ভোটার’ টানবেন। যারা আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্যান্য দলের সমর্থক বা সাধারণ ভোটার। সবমিলিয়ে এই আসনের ভোটের ফলাফল কি হবে তা নিয়ে কৌতুহল সর্বমহলে।
ফয়সাল বিপ্লবের পক্ষে মাঠে প্রকাশ্যে তার পিতাসহ উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতারা রয়েছেন। এছাড়া সদর উপজেলার বেশ কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানও ফয়সাল বিপ্লবের পক্ষে মাঠে প্রকাশ্যে কাজ করছেন। অন্যদিকে, ভোটার এলাকায় ইউপি সদস্যরা কাজ করছেন নৌকা প্রার্থীর পক্ষে। এটি বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে মৃণাল কান্তি দাসকে।
নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে এই আসনে একাধিক সংঘাত-সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র এই আসনটিতেই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ মোল্লাকান্দিতে ডালিম সরকার (৩৫) নামের নৌকার এক সমর্থক কাঁচি সমর্থকের গুলিতে মারা গেছেন। এর প্রভাবও ভোটারদের মাঝে।
ফয়সাল বিপ্লব মুন্সিগঞ্জ পৌরসভায় দুইবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখানে তার শক্তিশালী একটি বলয় তৈরি হয়েছে। তাছাড়া চরাঞ্চলে মহিউদ্দিন পরিবারের আলাদা ভোট ব্যাংক রয়েছে। তবে সেটি একচেটিয়া নয়। দুইবার সংসদ সদস্য থাকায় মৃণাল কান্তি দাসও বেশ ভালো ভোটার টানবেন চরাঞ্চল থেকে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও নতুন ব্রিজ-কালভার্ট নির্মানে তার উদ্যোগ ভোটারদের মাঝে সাড়া ফেলেছে।
গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কাঁচি প্রতীকের ফয়সাল বিপ্লবের পক্ষে অবস্থান করছেন। সেখানে ৮টি ইউনিয়নেই কাঁচি প্রতীকের কর্মীরা ভোট টানতে সক্ষম হবেন। অন্যদিকে, গজারিয়া উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের জন্য প্রকাশ্যে নির্বাচন করছেন। তারাও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে জোরেশোরে কাজ করবেন।
ফয়সাল বিপ্লব গেল এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মাঠ গুছিয়েছেন। তাছাড়া তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে তিনি জনপ্রিয়। অন্যদিকে, অনিয়ম-দুর্নীতি বা কোন স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নেই মৃণাল কান্তি দাসের বিরুদ্ধে। এসবই ভোটারদের কাছে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে ৩ আসনে প্রধান প্রতিদ্বন্ধী এই দুই প্রার্থীর বিষয়ে।
সদর ও গজারিয়া উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪ লাখ ৮২ হাজার ২৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮৮জন ও নারী ২ লাখ ৩২ হাজার ৪০৬ জন। সদর উপজেলায় ভোটার ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩১৩ জন ও গজারিয়া উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৮১ জন। এখানে ১৬৯টি ভোটকেন্দ্রের ৯৯৮টি ভোটকক্ষে ব্যালটপেপার পদ্ধতিতে এবারের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই আসন থেকে মোট প্রার্থী হয়েছিলেন ১০ জন।