মুন্সিগঞ্জ, ২৮ মে ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে ভোটের হাওয়া বইছে। মুন্সিগঞ্জের ৩ টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা পোষ্টার-ব্যানারের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব রয়েছেন।
নির্বাচনের আর মাত্র সাত থেকে আট মাস বাকি রয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বিকল্পধারা সক্রিয় রয়েছে জেলার রাজনীতিতে। বর্তমানে ৩টি আসনের একটি দখলে রয়েছে বিকল্পধারার। বাকি দুইটিতে আছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা। জেলায় একসময় জাতীয় পার্টির দাপুটে অবস্থান থাকলেও এখন তা নেই। আওয়ামী লীগের আমলে এখানে শক্তভাবে দাড়াতে পারেনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি।
বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত মুন্সিগঞ্জে বিএনপির আগের অবস্থান নেই। তবে আওয়ামী লীগের সাথে তুলনা করলে মুন্সিগঞ্জে ভোট ও কর্মী-সমর্থক বেশি বিএনপির। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত বিএনপির অবস্থান পরিস্কার না হওয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়ার মত নয়। তবে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা- তা বোঝা যাচ্ছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাদের সক্রিয়তা দেখে।
আগামী নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জের ৩ টি আসনই পুনরায় দখলে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি চাইছে- তাদের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুক সরকার। তবেই নির্বাচনে অংশ নেবে তারা। দাবি পূরণ না হলে বিএনপি আবারও নির্বাচন বর্জন করবে কি না সে আলোচনাও সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে।
বর্তমান আওয়ামী লীগের টানা মেয়াদে জেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মুখোমুখি অবস্থান দেখা যায়নি। বিএনপির কর্মসূচির প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি পালন করলেও তা হয়েছে নিরাপদ দূরত্ব মেনে। সংসদ সদস্যদেরও দেখা যায়নি বিএনপির কর্মসূচির প্রতিবাদে শক্ত আন্দোলন-সংগ্রামে।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বিকল্পধারার বাইরে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে থাকে- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাকের পার্টি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। এই যখন জেলার রাজনীতির হিসাব-নিকাশ তখন সর্বত্র আলোচনা রয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জের ৩ টি আসন থেকে কারা দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন। আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে। এছাড়া বিএনপি নির্বাচনে এলে কারা মনোনয়ন চাইবে এসব নিয়েও আলোচনা আছে।
মুন্সিগঞ্জ-৩ (সদর-গজারিয়া) সংসদীয় আসন- ১৭৩
মুন্সিগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনে ভোটারের সংখ্যা ৪ লাখ ১৬ হাজার ৬৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৫ হাজার ১২জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ১৬ হাজার ৬৯ জন। মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মৃণাল কান্তি দাস। ২০১৪ সালে বিএনপি ভোট বর্জন করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মত আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের বিপরীতে ৭৫.২৩% শতাংশ ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মৃণাল কান্তি দাস। ২০০৮ সালে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী এম শামসুল ইসলামকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এম ইদ্রিস আলী। এর আগে ১৯৯১, ১৯৯৬ ফেব্রুয়ারি (ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন), ১৯৯৬ জুন (সপ্তম) জাতীয় সংসদ নির্বাচন) ও ২০০১ সালে আসনটি বিএনপির দখলে ছিলো।
এই আসন থেকে এমপি হতে চান যারা
বিএনপি থেকে- জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ (আব্দুল হাই অসুস্থতাজনিত কারণে নির্বাচনে অংশ না নিলে), জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতন। আওয়ামী লীগ থেকে- বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আনিছ উজ্জামান, গজারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফয়সাল বিপ্লব, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসারউদ্দিন ভূইয়া, মিরকাদিম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শাহিন। জাতীয় পার্টি থেকে- এএফএম আরিফুজ্জামান দিদার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে- মাওলানা মাহমুদুল হাসান। কমিউনিষ্ট পার্টি থেকে শেখ মো. কামাল হোসেন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে শেখ মো. শিমুল।