মুন্সিগঞ্জ, ১৫ মে ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ঈদ শেষ হতেই রাজনীতিতে ভোটের হাওয়া বইছে। মুন্সিগঞ্জের ৩ টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এবার ঈদে সাধারণ মানুষের পাশে তেমন একটা সরব না থাকলেও ঈদকে কেন্দ্র করে পোষ্টার-ব্যানারে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছেন তারা।
নির্বাচনের আর মাত্র সাত থেকে আট মাস বাকি রয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বিকল্পধারা সক্রিয় রয়েছে জেলার রাজনীতিতে। বর্তমানে ৩টি আসনের একটি দখলে রয়েছে বিকল্পধারার। বাকি দুইটিতে আছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা। জেলায় একসময় জাতীয় পার্টির দাপুটে অবস্থান থাকলেও এখন তা নেই। আওয়ামী লীগের আমলে এখানে শক্তভাবে দাড়াতে পারেনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি।
বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত মুন্সিগঞ্জে বিএনপির আগের অবস্থান নেই। তবে আওয়ামী লীগের সাথে তুলনা করলে মুন্সিগঞ্জে ভোট ও কর্মী-সমর্থক বেশি বিএনপির। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত বিএনপির অবস্থান পরিস্কার না হওয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়ার মত নয়। তবে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা- তা বোঝা যাচ্ছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাদের সক্রিয়তা দেখে।
আগামী নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জের ৩ টি আসনই পুনরায় দখলে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি চাইছে- তাদের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুক সরকার। তবেই নির্বাচনে অংশ নেবে তারা। দাবি পূরণ না হলে বিএনপি আবারও নির্বাচন বর্জন করবে কি না সে আলোচনাও সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে।
বর্তমান আওয়ামী লীগের টানা মেয়াদে জেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মুখোমুখি অবস্থান দেখা যায়নি। বিএনপির কর্মসূচির প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি পালন করলেও তা হয়েছে নিরাপদ দূরত্ব মেনে। সংসদ সদস্যদেরও দেখা যায়নি বিএনপির কর্মসূচির প্রতিবাদে শক্ত আন্দোলন-সংগ্রামে।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বিকল্পধারার বাইরে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে থাকে- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাকের পার্টি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। এই যখন জেলার রাজনীতির হিসাব-নিকাশ তখন সর্বত্র আলোচনা রয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জের ৩ টি আসন থেকে কারা দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন। আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে। এছাড়া বিএনপি নির্বাচনে এলে কারা মনোনয়ন চাইবে এসব নিয়েও আলোচনা আছে।
মুন্সিগঞ্জ-২ (লৌহজং-টংগিবাড়ী) সংসদীয় আসন- ১৭২
মুন্সিগঞ্জের লৌহজং ও টংগিবাড়ী উপজেলার ২৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মুন্সিগঞ্জ ২ আসনে ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৫ হাজার ৯৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬৩ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৪ জন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। এমিলি প্রথম ১৯৯৬ সালে সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মত আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান সিনহার সাথে ৭০.৩৯% শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। ২০০৮ সালে মোট ভোটের ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান সিনহাকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এমিলি। ২০১৪ সালে বিএনপি ভোট বর্জন করলে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন আহমেদকে হারিয়ে প্রায় ৯৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। এর আগে ১৯৯১, ১৯৯৬ ফেব্রুয়ারি (ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন), ১৯৯৬ জুন (সপ্তম) জাতীয় সংসদ নির্বাচন) ও ২০০১ সালে আসনটি বিএনপির দখলে ছিলো।
এই আসন থেকে এমপি হতে চান যারা
বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আলী আসগর রিপন মল্লিক। আওয়ামী লীগ থেকে- বর্তমান সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহানা তাহমিনা, টংগিবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কাজী আব্দুল ওয়াহিদ। জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য জামাল হোসেন ও নোমান মিয়া। জাকের পার্টি থেকে মো. আস্রাফুল ইসলাম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মো. মুনসুর হোসেন ও স্বতন্ত্র হিসেবে মেজর (অব.) মাসুদুর রহমান কাইয়ুম।