মুন্সিগঞ্জ, ১০ মে ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ঈদ শেষ হতেই রাজনীতিতে ভোটের হাওয়া বইছে। মুন্সিগঞ্জের ৩ টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এবার ঈদে সাধারণ মানুষের পাশে তেমন একটা সরব না থাকলেও ঈদকে কেন্দ্র করে পোষ্টার-ব্যানারে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছেন তারা।
নির্বাচনের আর মাত্র সাত থেকে আট মাস বাকি রয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বিকল্পধারা সক্রিয় রয়েছে জেলার রাজনীতিতে। বর্তমানে ৩টি আসনের একটি দখলে রয়েছে বিকল্পধারার। বাকি দুইটিতে আছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা। জেলায় একসময় জাতীয় পার্টির দাপুটে অবস্থান থাকলেও এখন তা নেই। আওয়ামী লীগের আমলে এখানে শক্তভাবে দাড়াতে পারেনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি।
বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত মুন্সিগঞ্জে বিএনপির আগের অবস্থান নেই। তবে আওয়ামী লীগের সাথে তুলনা করলে মুন্সিগঞ্জে ভোট ও কর্মী-সমর্থক বেশি বিএনপির। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত বিএনপির অবস্থান পরিস্কার না হওয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়ার মত নয়। তবে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা- তা বোঝা যাচ্ছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাদের সক্রিয়তা দেখে।
আগামী নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জের ৩ টি আসনই পুনরায় দখলে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি চাইছে- তাদের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুক সরকার। তবেই নির্বাচনে অংশ নেবে তারা। দাবি পূরণ না হলে বিএনপি আবারও নির্বাচন বর্জন করবে কি না সে আলোচনাও সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে।
বর্তমান আওয়ামী লীগের টানা মেয়াদে জেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মুখোমুখি অবস্থান দেখা যায়নি। বিএনপির কর্মসূচির প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি পালন করলেও তা হয়েছে নিরাপদ দূরত্ব মেনে। সংসদ সদস্যদেরও দেখা যায়নি বিএনপির কর্মসূচির প্রতিবাদে শক্ত আন্দোলন-সংগ্রামে।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বিকল্পধারার বাইরে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে থাকে- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাকের পার্টি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। এই যখন জেলার রাজনীতির হিসাব-নিকাশ তখন সর্বত্র আলোচনা রয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জের ৩ টি আসন থেকে কারা দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন। আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে। এছাড়া বিএনপি নির্বাচনে এলে কারা মনোনয়ন চাইবে এসব নিয়েও আলোচনা আছে।
মুন্সিগঞ্জ-১ (শ্রীনগর-সিরাজদিখান) সংসদীয় আসন- ১৭১
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জ-১ আসনটি আওয়ামী লীগের মিত্র বিকল্প ধারাকে ছেড়ে দিলে বিএনপির প্রার্থী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের বিপরীতে ৬৫.০৯% শতাংশ ভোট পেয়ে বিকল্প ধারা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাহি বি চৌধুরী।
২০১৮ সালের ইসির হিসাব অনুযায়ী মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলার ২৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে ভোটারের সংখ্যা ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৩৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৪ হাজার ৭৬০ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৭২ জন। ২০০২ সালে মাহির পিতা বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে আসনটি ছেড়ে দেন। এরপর উপ-নির্বাচনে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাহি। কিন্তু বিএনপি বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করলে মাহিও সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেন। দুজনে মিলে গঠন করেন বিকল্প ধারা। ২০০৪ সালে আসনটিতে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিএনপির প্রার্থী মমিন আলীকে হারিয়ে বিজয়ী হন মাহি বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
এর আগে ১৯৯১, ১৯৯৬ ফেব্রুয়ারি (ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন), ১৯৯৬ জুন (সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন) ২০০১ ও ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া উপ-নির্বাচনে আসনটি বিএনপির দখলে ছিলো। এই আসনটিতে ২০০৮ সালে মোট ভোটের ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিএনপির প্রার্থী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জন করলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর মোহাম্মদকে হারিয়ে ৯৬ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সুকুমার রঞ্জন ঘোষ।
এই আসন থেকে এমপি হতে চান যারা
বর্তমান সংসদ সদস্য বিকল্পধারার মাহি বি চৌধুরী। বিএনপি থেকে- কেন্দ্রীয় কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মমিন আলী, সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। আওয়ামী লীগ থেকে- সিরাজদিখান উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ, শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারওয়ার কবির, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক উপ কমিটির সাবেক সদস্য ব্যারিষ্টার জি কিবরীয়া শিমুল, বাংলাদেশে কম্পিউটার সমিতির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ কমিটির সাবেক সদস্য মাকসুদ আলম ডাবলু। জাতীয় পার্টি থেকে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মো. আতিকুর রহমান খাঁন। কমিউনিষ্ট পার্টি থেকে সমর দত্ত ও জাকের পার্টি থেকে আতাউর রহমান।